ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: ৩৫ বছর আগে ঢাকা থেকে ছোটখাটো ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা। সেখান থেকে থাই এয়ারওয়াজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক।
বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাংকক পৌঁছে শুক্রবার দুপুর ২টায় সময় নিলাম তার কাছ থেকে। তাকে পাওয়ার খোঁজ দিয়েছিলেন বাংলাদেশি এক বড় ভাই। ব্যবসা, ব্যক্তিগত জীবন, দেশ নিয়ে নানান বিষয়ে আলাপচারিতা শেষে এলাম ব্যাংককে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রসঙ্গে। বললেন, সুকুম্ভিটের সয় ১-১৩ নম্বর রোড পর্যন্ত ১৩টি, ওল্ড টাউনে ২টি, প্রাতুনামে ১টি, ফাওয়াতে ২টি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়াও ব্যাংককে রয়েছে ২০০টির বেশি বাংলাদেশি টেইলার্স। রয়েছেন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীও। চিয়াংমাই শহরে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের হিসাব দিলেন সংখ্যা ধরে।
পরিসংখ্যান শুনে অবাক হচ্ছিলাম, আন্দাজ করতে পারছিলাম তার সফলতার কারণ। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরের এই সফল ব্যবসায়ী রাজধানী বিজনেস সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী আনোয়ারুল কাদের (আলমগীর)।
চট্টগ্রামে জন্ম হলেও বেড়ে ওঠা লক্ষ্মীপুরে। ঢাকার ঠিকানা মিরপুরের পল্লবী। সোহরওয়ার্দী কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে অনার্স পাস করে জীবিকার জন্য বেশ কয়েকটি ছোটখাটো ব্যবসা করেছেন। তবে কলকাতা থেকে থাইল্যান্ড গমনই যেন বদলে দিলো তার সবকিছু।
১৯৭৯ সালে ব্যাংককে ইমপোর্ট-এক্সপোর্টের কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৮১ সালে এক প্রবাসীর সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যাংলাকের সিলং রোডে ‘বরিশাল ক্যাফে’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট দেন। বিদেশে প্রথম ব্যবসায় নামা প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সেটি ছিল থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের প্রথম রেস্টুরেন্ট। পার্টনার বরিশালের ছিল বলে নাম দিয়েছিল ‘বরিশাল ক্যাফে’।
৫ বছর পর ৮৬ সাল থেকে সুঁজি ট্র্যাভেল এজেন্সি খুলে নিজ উদ্যোগে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন আলমগীর।
১৬ বছর পর ২০০২ সালে ট্যুরিজম ব্যবসা বন্ধ করে চলে যান চীনের সাংহাই। ফের তিনবছর পর ফিরলেন ব্যাংকক। সুকুম্ভিটে খুললেন রাজধানী রেস্টুরেন্ট। আর রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি এখন আবাসিক হোটেল, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসা, রাজধানী বিজনেস সেন্টার আর ট্যুরিজমেরও মালিক তিনি। মাঝে ১৯৯০ সালে অবশ্য থাই এক মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি।
৩৫ বছর ধরে আসা যাওয়া থাকলেও নিজ দেশের টানে এখনো থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব নেন নি আলমগীর। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে দুই দেশের নাগরিকত্বের অনুমতি নেই। অর্থাৎ, থাইল্যান্ডের নাগরিক হলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। বছরে অনেকবার বাংলাদেশে যাওয়া হয়, সেখানে গিয়ে ভোট দেই। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাদ দেওয়া যাবে না। তাই নাগরিকত্ব না নিয়ে প্রতি বছর ভিসার মেয়াদ নবায়ন করি।
ব্যাংককে ব্যবসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা সিজোনাল বা মৌসুম ভিত্তিক। দুই ঈদের পরে, ইংরেজি নববর্ষ আর বাংলাদেশে বড় কোনো ছুটিতেই দেশি পর্যটক বাড়ে। এসময় বাড়ে রেস্টুরেন্টের বিক্রিও।
দেশের টানে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারাতে চান না তবে জীবনের কোনো কালে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসও করবেন না বলে জানালেন অভিমানী এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দেশের টান সবারই থাকে। তবে কখনো একবারের জন্য দেশে ফিরবো না। চুরি, ছিনতাই, খাবারে ফরমালিন আরও কত কি... এর চেয়ে থাইল্যান্ডে থাকাই ভালো।
থাইল্যান্ডে বৈধভাবে থাকার কোনো বিকল্প নেই, তবে কেউ যদি বৈধভাবে থাকতে পারেন তবে তিনি যেকোনো সেক্টরে চাকরি কিংবা ব্যবসা করতে পারবেন।
থাইল্যান্ডে ব্যবসার প্রধান শর্ত হিসেবে ‘থাই ভাষার দক্ষতা’র কথা বললেন কাজী আনোয়ারুল কাদের। তিনি বলেন, এখানকার লোক ইংরেজি বোঝে না। থাই ভাষা জানা ছাড়া কোনো ব্যবসায় সফল হওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৪