পাতায়া (থাইল্যান্ড) থেকে: রাত বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে আঁধার ঠেলে আলো ফিরছে বিনোদনের স্বর্গরাজ্য সৈকত নগরী পাতায়ায়।
সৈকত ঘেঁষে (বিচ রোড) উত্তর দিক থেকে পাতায়ার দক্ষিণে যেতেই জ্বলজ্বলে বাংলাভাষা দেখে আটকে যায় চোখ। নিয়ন সাইনের আলোয় অন্য আলোর রোশনাই চোখের দৃষ্টিকে টেনে নেয়। বাংলায় বিশাল হরফে লেখা ‘বাংলাদেশী খাবার’।
এরপর যেন চোখ আর একা নয়, পেটের টানেই রয়েল গার্ডেন প্লাজা থেকে শরীর চলে যায় সাইনবোর্ডের নিশানায়। কয়েক গজ দূরত্বে পাতায়া সিটি ওয়াক ভবনে থাকা নুরজাহান রেস্টুরেন্টে।
দেখা গেলো, ভারতীয় বাদেও বেশকিছু বাংলাদেশি চেনামুখ সেখানে খেতে এসেছেন। আর তাদের মনোযোগের কেন্দ্র তখন রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা টগবগে যুবক সোহাগ হাওলাদার (২৮)।
১০ বছর আগে শূন্য হাতে থাইল্যান্ডে এসে এখন নিজেই অনেকের আশ্রয়। যেন সমুদ্রের বাতিঘর। তার প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছেন বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের (সাবেক রেঙ্গুন) নাগরিক।
তবে শুরুটা ছিল অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের। টানা এক বছর এ সৈকত নগরীতেই বিনা পারিশ্রমিক ছাড়া পেটে-ভাতে থাকতে হয়েছে তাকে।
পিরোজপুরের কলাখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে সোহাগ। সেন্ট্রাল পাতায়ায় মিজান নামে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এখানে এসেছিলেন তিনি। তখন মিজানের কাপড়ের দোকানে বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের ডাকতেন।
এক বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার পর পরের বছর বেতন ধরা হলো পাঁচ হাজার বাত। যা বাংলাদেশি মুদ্রার মূল্যমানে ১২ হাজার ৫শ টাকা। বছর শেষে এক হাজার বাত বাড়ানো হলেও নিজেই একসময় কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন।
এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশিদের রসনা বিলাস মেটাতে ২০১০ সালে খুলেছেন দেশি স্বাদের খাবারের রেস্টুরেন্ট। থাই, চাইনিজ ও ভারতীয় খাবার যখন জিভে বিদ্রোহ করে, তখনই বাংলা খাবারের টানে স্বদেশীরা ছুটে আসেন এখানে।
রাতে সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেলো থাই তরুণী থিরাপন ও মিয়ানমারের স্বপ্নাকে। নিজেরা কখনও ক্যাশ কাউন্টার সামলাচ্ছেন, আবার কখনও ঢু মারছেন কিচেনে।
সোহাগ নিজেই কোম্পানি খুলে বসবাস করছেন থাইল্যান্ডে। তবে ভিসা নিয়ে জটিলতার মুখে বেশ বেগ পেতে হয় বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের।
এখানকার নিয়মে, কোনো কোম্পানি খুললে কমপক্ষে চারজন থাই নাগরিককে চাকরি দিতে হবে। তাদের নূন্যতম বেতন হবে নয় হাজার বাত। আর তিন শতাংশ হারে দিতে হবে স্যোস্যাল ইন্সুরেন্স।
এসব বাদেই মাসে রেস্টুরেন্ট থেকে ৫০ হাজার বাত আয় হয় বলে জানান সোহাগ।
আলো ঝলমলে পাতায়ায় বাংলাদেশের দূত হয়েই লাখো উদ্যোক্তা তরুণদের মধ্যে স্বপ্নের বীজ বপন করে যাচ্ছেন সোহাগ।
বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে ভিসা জটিলতার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার একটু উদ্যোগ নিলে হয়রানি অনেক কমে যাবে।
রেস্টুরেন্টে খেতে আসা অভিনেতা ও নাট্য প্রযোজক সাজু মুনতাসির বাংলানিউজকে জানান, এখানে শুটিং করতে আসা সবার দেশি খাবারের ঠিকানা এ রেস্টুরেন্ট।
তার সঙ্গে থাকা মডেল ও অভিনেতা এফ এস নাঈম বললেন, মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পেতেই পাতায়ায় এলে আমরা চলে আসি এখানে।
** ‘আমিও হাঁপাচ্ছি’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
এসএস