ব্যাঙ্কক (থাইল্যান্ড) থেকে: ‘লাক মে মাক মাক’- থাই ভাষায় এ শব্দটির বাংলা অর্থ- ‘মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি’। গোটা থাইল্যান্ড জুড়ে বুধবার এ শব্দটিই উচ্চারিত হচ্ছে সবচাইতে বেশি।
থাইল্যান্ডে আজ মা দিবস। নিজের মা ছাড়াও থাইল্যান্ডবাসী ঈশ্বর প্রতিভূ রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের স্ত্রী রানী সিরিকিতের ৮৩তম জন্মদিন আজ। দেশবাসীর কাছে দিনটি ‘কুইন্স ডে’। সেই সঙ্গে সরকারি ছুটি।
রানী মাতার জন্মদিন আবার একই সঙ্গে মা দিবস; সব মিলিয়ে গোটা থাই রাজত্বে এখন উৎসব। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে শুরু করে সাধারণ যে কোনো দোকানপাট সব জায়গাতেই দেখা যায়, রাজা ও রানীর যুগলবন্দি ছবি।
কিন্তু গত কয়েকদিনের থাইল্যান্ডের চেহারাটাই বদলে গেছে, রানীমাতার জন্মদিনকে ঘিরে। সড়কে সড়কে তোড়ন। তবে বাংলাদেশের মতো নয়। শৈল্পিক। নান্দনিক। সব জায়গাতেই কেবল রাজা ও রানীর ছবি।
এমনকি দেশটির শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দল কিংবা ক্ষমতায় থাকা সামরিক সরকারের কোনো মন্ত্রীর ছবি রয়েছে, এমন কোনো ব্যানার-ফেস্টুন নেই।
তবে জন্মদিন ঘিরে রানীর বিশাল আকৃতির আলোকিত প্রতিকৃতি, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় চোখ আটকে যায়। রাজধানী শহর ব্যাঙ্ককেও বিশাল বিশাল বিলবোর্ড জুড়ে এখন শুধু রানীরই ছবি। কোথাওবা ছেলের সঙ্গে মায়ের ছবি।
সন্ধ্যায় আলো ঝলমলে ভিন্ন এক থাইল্যান্ড চোখ জুড়িয়ে দেয় পর্যটকদের। রাজপ্রাসাদ ঘিরে গাছে গাছে মরিচ বাতির মতো আলোক সজ্জা, আতশবাজির উৎসব আর রানী মাতার ছবির ওপর আলোর খেলায় মগ্ন গোটা থাইল্যান্ড।
রাজকীয় আয়োজন ছাড়াও দিনটি ঘিরে নাগরিক ও ভিনদেশি পর্যটকরাও শামিল এ উৎসবে। যে যার মতোন করে উৎসব পালন করায় গোটা ব্যাঙ্ককই যেন উৎসবমুখর। পানশালা থেকে শুরু করে সব স্থানেই অনুষ্ঠান আয়োজনের শুরুতে স্মরণ করা হচ্ছে, রানী মাতাকে। দীর্ঘায়ু কামনা করে করা হচ্ছে, বিশেষ প্রার্থনার। কোথাওবা আয়োজন করা হচ্ছে, বিশেষ কনসার্টের।
রাজকীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন থাইল্যান্ডের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রয়ুথ চান-ওচা।
১৯৫০ সাল থেকেই ১৫ আগস্ট দেশটিতে পালন করা হতো মা দিবস। তবে ১৯৭৬ সাল থেকে দেশটির ‘মা’ রানী সিরকিতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে তার জন্মদিন ১২ আগস্ট পালন করা হয় দিনটি।
রাতচেদারনার্ম সড়ক ও সোয়ান জুসিট এলাকায় রাজভবন ঘিরে দেখা গেল বাড়তি নিরাপত্তা। তবে এসব নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি নয়, ভিনদেশি পর্যটকদের বেড়ানো। নির্দিষ্ট মূল্যের ফি দিয়ে তারা দেখতে পারছেন, ঐতিহ্যবাহী রাজপ্রাসাদ।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের লিড শিরোনামে রানীর ছবি দিয়ে কামনা করা হয়েছে দীর্ঘায়ু। তবে লক্ষণীয়, রানীর বর্তমান ছবি নয়, যৌবন ও মাঝারি বয়সের ছবি দিয়েই জ্বলজ্বলে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডবাসী তাদের রানী মাকে হয়ত কখনো ৮০ বছরের থুত্থুড়ো বুড়ির চেহারায় দেখতে চান না; কিংবা সুচিত্রা সেনের মতো রানীর বর্তমান আদলও অজানা দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের কাছে।
রানী সিরকিতের সঙ্গে ১৯৫০ সালে রাজা ভূমিবলের বিয়ে হয়। সে বছরই ভূমিবলের রাজ্যাভিষেক হয়। রানী সিরকিত ভূমিবলের দূরবর্তী আত্নীয় থেকে হয়ে যান জীবনসঙ্গিণী। আর তার বাবাও ছিলেন রাষ্ট্রদূত। ২০১২ সালের ২১ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হন রানী। তারপর থেকে জনসম্মুখে আর দেখা যায়নি রানীকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৫
এবি
** পাতায়ার ‘ডন’
** বাংলার আলোয় আলোকিত পাতায়া