পাতায়া (থাইল্যান্ড) থেকে: কী দেখলেন? প্রশ্নটি শুনে থতমতোই খেতে হয়। পা চলে না।
ওয়াকিং স্ট্রিটে পা রাখতেই যেন মনে হবে পৃথিবীর মধ্যে আরেক পৃথিবী। আনন্দ-উন্মাদনার আরেক নাম সৈকত নগরী পাতায়ায় মিলবে এ স্ট্রিট।
রাত আড়াইটা। পথের শুরুতেই পুলিশের গাড়ি। ব্যারিকেড। যান চলাচল বন্ধ। স্রোতের মতো হেঁটে চলেছেন নানা বয়সী মানুষ। সদ্য যৌবনে পা রাখা থেকে শুরু করে জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে পৌঁছানো বুড়ো খোকা। সবার নজর সামনে। সবাই ছুটছে বিনোদনের তীর্থে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংক লেমাং জেলার লংবুড়ির সমুদ্র সৈকত পাতায়ার ওয়াকিং স্ট্রিট। জীবন-যৌবন সবই বিকোয় এখানে। অনেকটা সেই প্রবাদের মতো- কেউ মদ বেঁচে দুধ খায়, কেউবা দুধ বেঁচে খায় মদ।
দিনে ঝিমায় এ সৈকত আর জেগে ওঠে সন্ধ্যার পর। তবে পর্যটকদের আগে থেকে জানা না থাকলে পরিবার-পরিজন বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের নিয়ে এখানে না যাওয়াই ভালো। গেলেন তো শিশুদের নানা প্রশ্ন আর অর্ধনগ্ন মানুষদের হাঁকডাকে রীতিমতো নাকাল হতে হবে আপনাকে।
এমনিতেই মদ, যৌনতা আর বিনোদনের আরেক নাম পাতায়া। লাস্যময়ী তরুণী থেকে তৃতীয় লিঙ্গের সবই এখানে হাজির।
মধু চন্দ্রিমার জন্য অনেকেরই পছন্দ পাতায়া। তবে রাতের পাতায়া সমুদ্র সৈকতে নববধূ না নেওয়াই ভালো। কারণ, নিশিবধূরা তখন ব্যস্ত থাকবে আপনার চোখ বিদ্ধ করতে!
নববধূর কাছে বিব্রত তো হবেনই আবার সন্দেহের বসে খোঁজ-খবরও নিতে শুরু করতে পারে, আগে কখনও এ শহরে আপনার পা পড়েছিলো কিনা!
তবে বড় কথা হলো, থাইল্যান্ডের এ প্রমাদ নগরীতে আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। যেমনটি বললেন সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মাহবুব আলম তালুকদার।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোটি টাকার বস্তা নিয়ে ঘোরেন তাও কোনো সমস্যা নেই। টানা তো দূরের কথা। কেউ স্পর্শও করবে না। থাইল্যান্ড ভালো করেই জানে, কী করে পর্যটকদের এখানে আকৃষ্ট করতে হয়। তবে আমাদের দেশের মূল্যবোধের সঙ্গে মেশালে হবে না। ইউরোপ-আমেরিকা এমনকী মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকা থেকেও কাতারে কাতারে মানুষ এখানে বিনোদনের নেশায় ছুটে আসছে।
ঢুকতেই নানা ব্র্যান্ডের রকমারি পণ্যের দোকান থেকে পথখাবার কিংবা অভিজাত সবই চোখে পড়বে আপনার। কেউ শরীর কেউ ফুল বা কেউ মেধা বিক্রি করেই নির্বাহ করছেন জীবিকা।
সন্ধ্যার পর ম্যাক্সি কিংবা বাইকে চেপে নারীরা চলে আসেন এখানে। যে যার মতো পশরা সাজিয়ে বসে পড়েন জীবিকা নির্বাহে।
এখানে মানবিক ব্যাপারটিও চোখ এড়ায় না। রাত তিনটের সময় ফুল বিক্রি করা এক নারীকে ঘুমাতে দেখা গেলো একটি এটিএম বুথের সামনে। সঙ্গী কুকুরটিও তখন ঘুমে বিভোর।
আরেক প্রতিবন্ধী নারী ভিক্ষা নয়, চুইংগাম বিক্রি করতে বসেছেন সড়কের পাশে। শেষ দিকে দেখা গেলো কয়েকজন শিল্পীকে। নিখুত মনোযোগ দিয়ে প্রতিকৃতি আকঁছেন। ছবি তো নয় যেন জলজ্যান্ত মানুষ।
শুরুতে থাইল্যান্ড, রাশিয়াসহ নানা দেশের নাগরিকদের নানা প্রদর্শনী। মাঝে ও শেষের দিকে ভারতীয় নারীদের ডিস্কো কিংবা মুজরা সবই প্রস্তুত বিনোদন পিয়াসীদের জন্যে।
উপমহাদেশের বহুমাত্রিক বিনোদন বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত এ সড়ক। পায়ে পায়ে রয়েছে বার, গো গো বার, ম্যাসাজ পার্লার, রাশিয়ান-থাই-ইন্ডিয়ানসহ নানা দেশের ড্যান্স শো বা ডিস্কো।
সড়কের মাঝামাঝি কথা হলো পাতায়া পুলিশের কর্মকর্তা প্রা তু চের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে বললেন, ভিনদেশি বিনোদন পিয়াসীদের নিরাপত্তা আর সন্তুষ্টিই আমাদের কাম্য। যার যেমন প্রয়োজন তার মতো করেই বিনোদনের জন্য দৌড়ে বেড়ান এ ওয়াকিং স্ট্রিটে!
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
এসএস
** থাইল্যান্ডে স্বদেশিদের স্বজন আদম আলী মীর
** সবার মুখে মুখে ‘লাক মে মাক মাক’
** পাতায়ার ‘ডন’
** বাংলার আলোয় আলোকিত পাতায়া