ব্যাংকক (থাইল্যান্ড)থেকে: জন্মসূত্রে তিনি থাইল্যান্ডের নাগরিক। কিন্তু হৃদয় তার বাংলাদেশের।
সে দেশের সাংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। ভাষা শেখা। সেখানকার স্কুল ও কলেজের পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্যে লন্ডনে পাড়ি জামানো। এখন শুধু অপেক্ষা স্বপ্নপূরণের।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের সংখ্যা হাতে গোনা। অভিবাসীদের মতে, সেই সংখ্যাটি হাজার ছাড়াবে না। এখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসও বলছে একই কথা।
কেমন আছেন এখানকার অভিবাসী বাংলাদেশি সন্তানেরা? দেশ নিয়েই বা কী ভাবনা তাদের?
এসব জানতে ব্যাংককের কাওসান রোডে কথা হয় আশরাফ হোসেন মানিকের সঙ্গে। তিনি পড়াশোনা করছেন সেন্ট্রাল লন্ডনের হাল্ট ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলে। ফিন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগ থেকে কিছুদিন পরই গ্রাজুয়েট হয়ে বের হবেন।
তরপর কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চেষ্টা করবো লন্ডনেই কিছু একটা করার। সেখানেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। প্রথমে চাকরি করে ভালো মতো অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে নিজেই উদ্যোক্তা হবো।
মানিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেছেন থাইল্যান্ডের একামাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে থেকে। থাইল্যান্ডে অভিবাসী হয়ে লন্ডনে নিচ্ছেন উচ্চ শিক্ষা। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি মধ্যে তার বেড়ে ওঠা।
কীভাবে সব ম্যানেজ করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, আমরা এটা পারি। আমাদের এটা রপ্ত করতে হয়েছে। আমি যদি থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি ধারণ করতে না পারি, তাহলে তো আমি এখানে টিকে থাকতে পারবো না। যেহেতু আমার জন্মই এখানে। সেহেতু এই দেশের প্রতি এক ধরনের টান তো আছেই। স্কুলে যাবার পর থেকেই এই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন আর কোনো সমস্যা হয় না।
একই সঙ্গে তিনি তার পিতৃভূমি স্মরণ করে বললেন, আমার বাবার বাড়ি বাংলাদেশে। সেখানে ছোটবেলায় বাবা-মায়ের কাছে বাংলা ভাষা শিখেছি। তখনই তারা শিখিয়েছেন বাংলাদেশি সংস্কৃতি ধারণ করে বিদেশে থেকেও কীভাবে নিজেদের মূল্যবোধ ধরে রাখতে হয়।
বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও ইংল্যান্ড এই তিনটি দেশের সংস্কৃতি সম্পন্ন ভিন্ন উল্লেখ করে এই প্রবাসী বলেন, এখন লন্ডনে পড়ছি। বাংলাদেশ হলে বাবার ভাইকে বলতে হতো চাচা। লন্ডনে কিন্তু তা না। সবাইকে নাম ধরে ডাকতে হয়। যেমন-মিস্টার ওমুক, মিস্টার তমুক ইত্যাদি। এমনকি লন্ডনে টিচারকেও আমরা নাম ধরে ডাকি। বাংলাদেশে যা ভাবাই যায় না। তবে যেখানকার সংস্কৃতি সেখানেই প্রযোজ্য। আসলে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।
নিজের জন্মভূমি থাইল্যান্ড হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বেশ আগ্রহ মানিকের। বিশেষ করে আগস্টের রক্তাক্ত ইতিহাস, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা তাকে খুব বেশি ভাবিয়ে তোলে, ভীষণ পীড়া দেয়।
একটা দেশের স্থপতিকে এমন নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যার কারণ খুঁজে পান না বলেও জানান তিনি।
থাইল্যান্ডে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ইংরেজি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণ উপস্থাপন করে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিলেন মানিক।
বাংলার ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে চলছেন মানিকের মতো আরো অনেকেই।
মানিকের ছোটবোন ইশিতা আক্তার ডলি (১৮)। তিনি আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন রাজকীয় চুলালংকন ইউনির্ভাসিটিতে। ছোটভাই আলতাফ হোসেন রওনক পড়ছে নবম শ্রেণিতে। সবার হৃদয়েই সদা জাগ্রত বাংলাদেশ, মুখে বাংলা ভাষা। যেন দেহটাই শুধু পড়ে আছে বিদেশে।
তারা সবাই জন্মসূত্রে থাইল্যান্ডের নাগরিক হলেও ব্যবহার করেন বাংলাদেশি পাসপোর্ট।
তাদের বাবা আদম আলী মীর বাংলানিউজকে বলেন, আমি স্থায়ী অভিবাসী হিসেবে এখানে রয়েছি প্রায় তিন দশক ধরে। থাই ভাষায় যাকে বলা হয় তাংডাও। দেশটিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। আমাকে দেশে যেতে হলে এদেশ থেকে অনুমতি নিতে হয়। আর ওরাও জন্মসূত্রে থাইল্যান্ডের নাগরিক হয়েও ধারণ করছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট।
মীর বলেন, আমি যত দিন বেঁচে আছি স্বদেশের পাসপোর্ট বহন করতে চাই। সুযোগ থাকলেও ওরা থাইল্যান্ডের পাসপোর্ট নেয়নি। বলতে পারেন-এটাই ওদের দেশপ্রেম।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
টিআই
** পাতায়ার ওয়াকিং স্ট্রিটে হাঁটে না দৌড়ায়!
** থাইল্যান্ডে স্বদেশিদের স্বজন আদম আলী মীর
** সবার মুখে মুখে ‘লাক মে মাক মাক’
** পাতায়ার ‘ডন’
** বাংলার আলোয় আলোকিত পাতায়া