ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: বাংলাদেশ থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনেকে থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ ধর্মের বিষয়ে শিক্ষা-দীক্ষা নিতে আসেন। ফেরার সময় তাদের অনেকে গুরুকে সঙ্গে নিয়ে যান।
তিনি বলছিলেন, ‘থাইল্যান্ডের মানুষ জানতো না বাংলাদেশের সভ্যতা, ইতিহাস আর ঐতিহ্য। আগে এসব ব্যাপারে কেউ নজরও দেয়নি। আমি তুলে ধরছি, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, থাইল্যান্ডের সঙ্গে সাংস্কৃতিক মিল, বৌদ্ধ ধর্মাচার, চার’শ বছরের বৌদ্ধ শাসন প্রভৃতি। আমি বলেছি, তোমাদের আগে আমরা বৌদ্ধ ছিলাম। পালি ভাষার উৎপত্তিই আমার দেশে। ওরা তো অবাক। এই সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিচয়ের মাধ্যমে আমি জনণের সঙ্গে জনগণের মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে চাই। প্রগতিশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। ‘
গত বছরের ১৪ নভেম্বর থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ মিশনে যোগ দেন সাঈদা মুনা তাসনিম। এর আগে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ অণুবিভাগের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন। বিসিএস একাদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও।
বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকায় পেয়েছেন ‘রেক্টর পদক’। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ চুকে ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্টে। পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। মেধা ও যোগ্যতায় অনেকের কাছেই তার পরিচয় প্রতিশ্রুতিশীল কূটনীতিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রদূতের পদে যোগ দিয়ে সেই প্রতিভার স্বাক্ষর কতটা রাখছেন? মানব পাচার প্রতিরোধ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময়েই-বা কী তার অর্জন? এসব জানতেই বাংলানিউজ ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসে মুখোমুখি হয় তার।
‘এই ক’মাসে অভিজ্ঞতার পালকে বেশ কিছু অর্জন যুক্ত হয়েছে। বলতে পারেন দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট হয়েছে। উভয় দেশের সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি’- আলাপের শুরুটা করেন মুনা।
‘সাফল্যের কথা যদি বলেন, তাহলে এই প্রথমবারে মতো দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের কথা উল্লেখ করা যায়। দেশটিতে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে গত মার্চে যোগ দেন নোরাচিত সিনহাসেনি। তার আগে তিনি ছিলেন জাতিসংঘে থাইল্যান্ডের স্থায়ী প্রতিনিধি। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মাথায় আমি তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছি। আপনারা জানেন, সচিবরাই কিন্তু অনেক কাজের নেপথ্য কারিগর। আমার ভাবনায় ছিল দু‘জনকে এক সঙ্গে বসিয়ে দিতে পারলে অনেক জট খুলে যাবে এবং হয়েছে-ও তাই। বৈঠকটি ছিলো ফলপ্রসূ ও আশাব্যাঞ্জক। এমন একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ সই করেছিলো তিন বছর আগে, কিন্তু হয়নি। বলতে পারেন এটিও আমার কূটনৈতিক সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অধ্যায়।
‘গত ২৫ জুন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হয় বৈঠকটি। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও থাই পররাষ্ট্র সচিব নোরাচিত সিনহাসেনির নেতৃত্বে ওই বৈঠকে মানবপাচার রোধে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে দুই দেশ। এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াও আঞ্চলিক সংযোগ (কানেকটিভিটি) প্রতিষ্ঠায়ও সম্মত হয় দু’পক্ষ। ’
ব্যক্তিগত ও পেশাগত উভয় পর্যায়ে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এ পেশা। বিশেষ করে নারী হিসেবে এই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পেশাটাকে তুলে ধরতে হয়। তুলেও ধরছি। এর কোনো বিকল্প নেই। ’
২৭ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন সন্তানের জননী। ব্যবসায়ী স্বামী ঢাকায়। তার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করছেন বড় ছেলে। মেজো ছেলে উচ্চ শিক্ষার্থে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে আর ছোট ছেলে মায়ের কাছে থাইল্যান্ডে।
‘ঢাকায় যে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, দিন শেষে কিন্তু পরিবারের সবাই একত্র হতে পারেন। দেখুন আমাদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নেই। এখানেও কিন্তু পারসোনাল লাইফের অনেকে কিছু সেক্রিফাইস করতে হয়। ’ বলেন সাইদা তাসনিম মুনা।
এবার পর্যটন প্রসঙ্গ। প্রতিবছর লাখের বেশি মানুষ ঘুরতে যায় থাইল্যান্ডে। কিন্তু থাইল্যান্ডে থেকে বাংলাদেশের যাবার চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। বছরে এখান থেকে ভিসা প্রদান করা হয় মাত্র ২ হাজার থেকে ২৫শ’। যার বেশিভাগই যান নানা কাজে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরামর্শ সেবা দিতে। এর কারণ কী?
মুনা বলছেন, ‘আসলে থাইল্যান্ড পর্যটনের স্বর্গরাজ্য। সহজ যাতায়াত, সাশ্রয়ী সব সেবা, শপিং, চিকিৎসাসহ নানা আকর্ষণে এই ব্যাংকক শহর পর্যটক নজরে টানার ক্ষেত্রে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করে নিয়েছে। ’
‘আমাদের সম্পর্কে ওদের অনেক অজ্ঞতা ছিলো। আমরা নাকি রক্ষণশীল, চরমপন্থি, সনাতনী প্রভৃতি। আমার শাড়ি পড়া দেখেই ওরা ভাবতো, আমি বুঝি ভারতীয়। ওদের ধারণা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট হিসেবে আমাদের দেশের মানুষ ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার মানুষদের মতো হিজাব কিংবা বোরকা পড়ে। আমরা হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করি ইত্যাদি। ’
‘ওরা জানতো না আমাদের সভ্যতা, ইতিহাস আর ঐতিহ্য। আগে এসব ব্যাপারে কেউ নজরও দেয়নি। আমি তুলে ধরছি, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, থাইল্যান্ডের সঙ্গে সাংস্কৃতিক মিল, বৌদ্ধ ধর্মাচার, চারশ’ বছরের বৌদ্ধ শাসন প্রভৃতি। আমি বলেছি, তোমাদের আগে আমরা বৌদ্ধ ছিলাম। পালি ভাষার উৎপত্তিই আমার দেশে। ওরা তো অবাক। এই সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিচয়ের মাধ্যমে আমি জনগণের সঙ্গে জনগণের মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে চাই। প্রগতিশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। ‘
দেশের পর্যটন নিয়ে স্বপ্নের গল্প তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনেকে এদেশে বৌদ্ধধর্মের বিষয়ে শিক্ষা-দীক্ষা নিতে আসেন। ফেরার সময় অনেকে গুরুকে সঙ্গে নিয়ে যান। ওদের মাধ্যমে আমি পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে চাই। এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সবাই খুব শ্রদ্ধা করে। ওদের বলেছি, তোমরা থাইল্যান্ডের ভিক্ষুদের বাংলাদেশের কথা বলো। আমাদের ঐতিহ্যের কথা বলে দেশে নিয়ে যাও। ওদের লেভেলে ওরা ছোট ছোট ট্যুরিজমে কন্ট্রিবিউট করছে। এটাকেই আমি অর্গানাইজ করতে চাই। অতীতে কখনও কোনো রাষ্ট্রদূত এদের সঙ্গে কথা বলেননি। বৌদ্ধ সার্কিট টুরিজ্যমের মাধ্যমে দেশে পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে চাই। ভিক্ষুদের নিয়ে শিগগির সেমিনার করবো। ওদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নতুন নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করবো। ‘
সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘থাইদের এই যে ঝুঁকে ঝুঁকে সেবা দেওয়া, এতেই কিন্তু মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ ওদের এখানে আসে। সাংস্কৃতিক কূটনীতির মাধ্যমে আমি বদলে দিতে চাই আমাদের দেশ সম্পর্কে থাইল্যান্ডের অজ্ঞতা আর ধ্যান ধারণাকে। বলেছি, আমাদের দেশের মহাস্থানগড়ের কথা। বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্যতম প্রাচীন এই পুরাকীর্তি। বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে। এরপর তারা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেখানে গিয়ে তারা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন। এটা শুনে তো ওরা অবাক। ’
রাষ্ট্রদূত জানাচ্ছেন, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিষয়গুলো তুলে ধরে আমাদের জাতীয় দিবসে এখানকার শীর্ষস্থানীয় খবরের কাগজগুলোতে প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। যার কারণে অনেকের আগ্রহ বাড়ছে বাংলাদেশের প্রতি।
তিনি বলেন, ‘আমি বৈঠক করলাম থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী বিরা বজপজচারানাতের সঙ্গে। তাকে তুলে ধরলাম, আমাদের বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার কথা। ইতিহাস আর ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখের তিন দিন আগে হঠাৎ করেই তিনি ফোন করলেন। বললেন, আমি তোমাদের বর্ষবরণ দেখতে চাই। প্রস্তুতির কোনো কিছু ভাবনায় না নিয়ে আমি যোগাযোগ করলাম সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে। ভাগ্যিস তিনি ছিলেন। দ্রুততার সঙ্গে তিনি সরকারি সফর ঠিক করে ফেললেন। ’
থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী বিরা বজপজচারানাত আট সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখের দিনে রমনা বটমূলে ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালায় যোগ দেন, প্রত্যক্ষ করেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য। চারুকলা ইনস্টিটিউটে উপভোগ করেন জমকালো মঙ্গল শোভাযাত্রা। ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ জানান। মধ্যাহ্ন ভোজের পর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। এছাড়া, কমলাপুরে ধর্মরাজিক বুদ্ধিষ্ট সংঘ পরিদর্শন ও সংঘনায়ক মহাথেরোর প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিরা বজপজচারানাত। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে বৈশাখের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন থাই সংস্কৃতিমন্ত্রী। থাই মন্ত্রিসভার সিনিয়র এ সদস্য নিজেও একজন প্রত্মতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ। প্রাচীন ভাস্কর্য ও পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণে নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকার জন্যে দেশটিতে রয়েছে তার বিশেষ প্রশংসা।
সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘এভাবে কিন্তু আমি ওদের প্রায় সব মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। থাইল্যান্ডের শ্রমমন্ত্রী এইচ ই সুরাজাক কার্নজানারাটের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির কথা বলেছি। তিনি দ্রুত সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করে সইয়ের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে জনশক্তি আমদানির প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়ারও আশ্বাস দেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা থাইল্যান্ডের সমুদ্রে মাছ ধরতে, নির্মাণ কাজে এবং ভারি শিল্পে কাজের সুযোগ পাবেন। ‘
তিনি বলেন, ‘আসিয়ানভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৬ লাখ অবৈধ শ্রমিক এখানে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে ওরা অবশ্য তাদের প্রতি কিছুটা শিথিল মনোভাব প্রর্দশন করে। তাদের বৈধও করে নিচ্ছে। এর বাইরে যে চাহিদা থাকবে তা বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার কথা বলেছি আমি। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার, কৃষি ও নির্মাণ খাতে জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। বলেছে, আগে অবৈধ আসিয়ানদের নিবন্ধন শেষ হোক। পরে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভিয়েতনাম থেকে আমরা জনশক্তি আনবো। ‘
‘তবে আমি বলেছি, কেবল গভীর সমুদ্রেই নয়, সমানুপাতিকভাবে বিভিন্ন খাতে আমার জনশক্তি নিতে হবে। তবে গভীর সমুদ্রে মানুষের যদি অধিকার না থাকে, তাহলে আমি সেখানে লোক দেবো না। ’
মুনা বলেন, ‘দেশটি কিন্তু মালয়েশিয়ার মতো নয়। এদের অভিবাসন আইন খুবই কঠোর। বাংলাদেশের কেউ অবৈধভাবে এলেও টিকতে পারবে না। ধরা পড়লেই ছয় মাস থেকে দুই বছরের জেল খাটতে হবে। তারপর দেশে ফিরতে হবে নিজের অর্থে। ‘
‘মানব পাচারের অভিযোগে আমাদের জলসীমা থেকে দু’টি ট্রলারসহ ১২ জনের মতো থাই নাগরিক আটক করা হয় গত বছর। তারা এখনও আমাদের দেশের জেলে বন্দি রয়েছে। একইভাবে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বেশ কিছু বাংলাদেশি আটক রয়েছেন এ দেশে। এছাড়া, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসা সাড়ে চারশ’ অধিক বাংলাদেশি রয়েছে বিভিন্ন সেন্টারে। আমরা তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। ‘
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মানবপাচারে জড়িত ট্রলারগুলোর মধ্যে ৯০ ভাগই থাইল্যান্ডের। আর রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করে মায়ানমারের জলসীমা। ’
তিনি বলেন, ‘গেলো ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এখানে আমি বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলাম। আয়োজন করলাম ‘সেলিব্রটিং ইউমেন আর্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাংলাদেশি নারী শিল্পীদের আঁকা ছবির প্রর্দশনী। শাকিলা জাফর গান গেয়েছেন। নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহাব ও তার দল ৪০ মিনিটের নৃত্যে তুলে ধরেছেন পাল বংশ থেকে সেন বংশ। মোঘল শাসন থেকে বৃটিশ শাসন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধিকার আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূত মুনার মতে, সাংস্কৃতিক কূটনীতির মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে হবে। মুনার লক্ষ্য বাণিজ্য কূটনীতির মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনা।
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী চক্রমন পাচুকাভিনিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে থাইল্যান্ডে রফতানি বাড়াতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছি। থাইল্যান্ড ছয় হাজার ৯৯৮ পণ্যকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠিয়ে কী কী পণ্য এখানে আনা যায়, তার সম্ভাব্যতা নিরূপণ করতে চিঠি দিয়েছি। এখনও উত্তর পাইনি। বণিক সমিতিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কি ১০টি পণ্যও পাঠানো যাবে না? পাঠানো সম্ভব হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে। আমরা ২৫টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছিলাম। ১০টিতে সম্মত হয়েছে থাইল্যান্ড। ‘
‘বাণিজ্যের অংশ হিসেবে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মায়ানমার হয়ে সিঙ্গাপুর, সেখান থেকে থাইল্যান্ডে আসে জাহাজ। এতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। থাইল্যান্ডের সঙ্গে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চালু করা সম্ভব হলে আমদানি রপ্তানি ব্যয় অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়েও বিষয়টিকে অন্তুর্ভুক্ত করেছি। ’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘থাইল্যান্ডের পোর্ট অথারিটির সঙ্গে কথা বলেছি। থাইল্যান্ড থেকে দু‘টি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠিয়েছি। সেপ্টেম্বরে আরেকটি যাবে। আমরা একে অপরের সামর্থ্য ও চাহিদার বিষয়গুলো বিনিময় করছি। বাংলাদেশের মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ পিএম গ্রুপের বিনিয়োগ সমঝোতা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাইএক্সিয়ালি ওরিয়েন্টেড পোলিপ্রোপিলেন ফ্যাক্টরি স্থাপনে বাংলাদেশে থাইল্যান্ড ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটা কিন্তু একটা বিশাল অর্জন। ‘
মুনা আরও যোগ করেন, ‘আমাদের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থাইল্যান্ডের স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউটের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছি। ওরা যদি আমাদের পণের মান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের বিষয়ে জানতে পারে, আমাদের পণ্যের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে, তবেই কিন্তু অনেক পণ্য রপ্তানিতে সুযোগ সৃষ্টি হবে। থাইল্যান্ড যদি জানতে পারে, আমাদের ল্যাবের স্ট্যান্ডার্ড বিশ্বমানের। তখন ওরা বলবে, ঠিক আছে তোমাদের ল্যাবে যেটা টেস্ট হয়েছে সেটা আর আমাদের এখানে পরীক্ষার দরকার নেই। ’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানকার বড় বড় হাসপাতালগুলো বাইরে থেকে ওষুধ আমদানি করে। আমি বলেছি বাংলাদেশি ওষুধের কথা। ওরা মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। বলেছি আমরা বিশ্বের বহু দেশে ওষুধ রপ্তানি করছি। বিশেষ করে আমেরিকাতেও করছি। ‘
‘বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি একটা সফলতা আসবেই। ‘ প্রত্যাশার আলোও ছড়িয়ে দেন রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এইচএ/