থাইল্যান্ড থেকে ফিরে: থাইল্যান্ড ভ্রমণে প্রথম দিনেই পা দিয়েছিলাম পাতায়া। বুঝেছিলাম থাইল্যান্ডের অর্থনীতির অনেকট নির্ভর করে সেখানকার পর্যটন শিল্পের উপর।
দেশটির বহুল প্রচলিত খবরের কাগজ ‘ব্যাংকক পোস্ট’-এর একটি খবরের মাধ্যমে জেনেছিলাম থাইল্যান্ডের মোট জিডিপির প্রায় ৪.১ শতাংশ আসে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও সার্ভিস সেক্টর থেকে। যার বেশির ভাগটাই পর্যটন কেন্দ্র করে।
পর্যটকদের স্বর্গ পাতায়ায় প্যারাগ্লাইডিং, স্কুবা ডাইভিংসহ নানা আয়োজন রয়েছে। ম্যাসাজের জন্য বিখ্যাত এ দেশে ম্যাসাজ পার্লার অসংখ্য।
থাই স্পা গোটা পৃথিবীতে বিখ্যাত। ম্যাসাজ সেন্টারগুলোতে নানা ধরনের ‘স্পা’ করানো হয়। তবে মূল সমস্যা ভাষার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইংরেজি বলে বিশেষ সুবিধা করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে থাইরা সঠিকভাবে বুঝতে পারে না, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের ইংরেজি আপনি বুঝে উঠতে পারবেন না। এটুকু সমস্যা মানিয়ে নিলে বাকিটা সহজ-সরল। তবে আকার-ইঙ্গিত আর ইংরেজির মিশেলে কাজ চালিয়ে নিতে খুব অসুবিধা হয় না।
এ রকমই একটি স্পা সেন্টারের ভেতরে গিয়ে আলাপ হলো চল্লিশোর্ধ্ব বুসসাবা নামে এক থাই নারীর সঙ্গে। তিনি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জানালেন তার স্পার বিশেষত্ব।
বিভিন্ন স্পার মধ্যে অন্যতম এবং বেশ নাম করা ফিশ ম্যাসাজ। বিষয়টি খানিকটা অবাক করার মতো। নামটা শুনে বেশ কৌতূহলও হলো।
মাছ নাকি এখানে চিকিৎসকের কাজ করবে! উৎসাহ ভরে জানতে চাইলাম মাছ চিকিৎসার বিষয়টি। বুসসাবা নিয়ে গেলেন তার স্পা সেন্টারের ভেতরে। সেখানকার পরিবেশটি বড়ই মনোরম। আলো আঁধারির সুন্দর ব্যবহাররে মধ্যদিয়ে গোটা স্পা সেন্টারটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। বুসসাবা একটি ঘরে নিয়ে গেলেন যেখানে অপেক্ষা করছিলেন তারই এক সহকর্মী।
বয়সে বুসসাবার থেকে বেশ কিছুটা কম। তিনি বেশ ঝরঝরে ইংরেজি বলতে পারেন। নাম চেইলাই। চেইলাই জানালেন ভীষণ আরামদায়ক এই ‘ডক্টর ফিশ’-এর স্পা’টি। তার ভাষায় ‘ভেরি ফানি’। শরীরের সমস্ত ক্লান্তি নাকি এক নিমেষে উধাও হয়ে যাবে। কিন্তু কি এই ‘ডক্টর ফিশ’ আর এই মাছ কি চিকিৎসাই বা করে?
এই প্রশ্নের উত্তরে চেইলাই জানলেন, ডক্টর ফিশকে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে ডাকা হয়। কোথাও এর নাম গারারুফা, কোথাও এর নাম নিবেল ফিশ, কোথাও বনেফিশ। প্রথম টার্কিতে এ মাছ চিকিৎসা শুরু হয়। তার পর গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। একমাত্র কানাডা আর আমেরিকাতে এই মাছ চিকিৎসার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
চেইলাই আরও জানালেন, টার্কিতে এ মাছ সহজলভ্য হলেও প্রশাসন এ মাছ বিদেশে পাঠাবার ব্যাপারে বেশ কড়া। এই ডক্টর ফিশের চোরাচালান রুখতে অনেকগুলি কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে টার্কি প্রশাসন। যদিও সিরিয়া, ওমান, ইরাকের নদী মোহনায় এ মাছ পাওয়া যায়। তবে টার্কিতে মাছটির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কি কি রোগ সারে এই ফিশ ম্যাসাজের চিকিৎসায়। স্পার মালকিন বুসসাবা জানালেন, অনেক ধরনের চামড়ার রোগ নাকি নিরাময় হয় এ মাছের মাধ্যমে। সবচেয়ে বড় কথা ‘সোরাইসিস’ বলে একটি চামড়ার অসুখ, যেটির কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি, সেই ‘সোরাইসিস’ নাকি বেশ কিছুটা কমে যায়। তবে আমেরিকায় নিষিদ্ধ হলেও ইংল্যান্ডে নাকি জনপ্রিয় এ ম্যাসাজ।
এবার হাজির হলাম চিকিৎসক মাছেদের চিকিৎসা নিতে। একটি বড় মাপের কাচের চৌবাচ্চায় ছোট ছোট সব মাছ। চেইলাই প্রথমে পানি দিয়ে পা ধুইয়ে দিলেন। তারপর কাচের চৌবাচ্চার পানিতে পা দিতেই মুহূর্তের মধ্যে তারা হাজির। আসাধারণ শিহরণ! বিষয়টি অনেকটা সুসসুড়ি দেওয়ার মতো। সত্যিই ফানি!
বুসসাবার কথার সঙ্গে কাজের মিল পেয়ে বুঝলাম বিষয়টি সত্যিই বেশ আরামদায়ক। শিহরণটা এতো বেশি অনুভূত ছিলো যে সময় কীভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ওঠার সময় এলো। পানি থেকে পা তুলে সত্যিই নিজেকে হালকা এবং আগের চেয়ে বেশি সজিব মনে হলো। ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলাম ডাক্তার মাছ ও বুসসাবাকে।
ও বলাই হলো না, ডাক্তার ফিশ নিতে ফি লাগবে বিশ মিনিটে চল্লিশ বাথ, যা বাংলাদেশি টাকায় ১০০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
ভিএস/এএ