ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে ফিরে: এ বছর বর্ষা চললো অনেক দিন। তাই সমুদ্রপথে মানবপাচার বন্ধ রয়েছে।
থাইল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, দেশটির সেনাবাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেশ সতর্ক অবস্থায় থাকায় নতুন পথ ব্যবহার করতে পারে পাচারকারীরা।
গ্লোবাল এলায়েন্স এগেইনস্ট ট্রাফিক ইন ওম্যান (জিএএটিডাব্লিউ) (GAATW) এর গবেষক জুন সাই তাং (June shai tang) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন নৌকায় পাচার হওয়া রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের নিয়ে।
গত ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার ব্যাংককে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে খবর রয়েছে- মায়ানমার সীমান্তে কিছু নৌকা ভাসছে। যেগুলো বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কতো সংখ্যক মানুষ সেখানে রয়েছে বা কোন পথ ধরে আসবে তার কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নেই। আর কোনো বাংলাদেশি রয়েছে কিনা সেটাও এখনো আমরা নিশ্চিত নই।
সূত্র জানিয়েছে, মায়ানমারের সাগু খুয়েন (Sagu Khyuen), ইয়ে ইনসেল (Yea insel), মুনাং (Munang) এবং রামরি দ্বীপে (Ramri Island) ভাসছে নৌকাগুলো। বিগত বছরগুলোতেও এই সময় নৌকা ছেড়ে দেয়, কিন্তু এ বছর বৃষ্টি অক্টোবর পর্যন্ত গড়ায়, তাই নৌকাগুলো সাগরে ছাড়ছে না।
থাইল্যান্ডে মানবপাচার নিয়ে কাজ করছে এমন সূত্রগুলো বাংলানিউজকে জানিয়েছে, সায়া থাই (say Thai), কো সায়া (co saya), সায়া নুয়া (saya Nuea), ঠুং লা ওং (Thung la ong), কো লি (co li), বাং তিপ নাই (Bang tip nai) নদী ধরে বাং লাং (Bang lang), খু রাতের (Khu rat) মতো গহীন অরণ্যে এসে নৌকাগুলো ভিড়তো।
বাং ইয়া মাই (Bang yea mai) নদী ধরে ভেতরের গহীন অরণ্যে প্রবেশ করতো। তারপর কো রা (ko ra), কো ফা থং (ko fa thong), প্রাফেট বিচের (prafhet beach) আশপাশের ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে এসে নামতো। এসব দ্বীপ জুড়ে রয়েছে গহীন অরণ্য।
এছাড়াও আন্দামান সাগর ঘেঁষে ফুকেটের আশপাশের ফাং এনজিএ (phang NGA), কো ইয়াও নই (ko yeao noi), কো ইয়াও ইয়াই (ko yeao yeai), ক্রাবি (krabi), কো পু’ (co pu)-তে এসে ভেড়ে নৌকাগুলো।
এরপর ফেতকাসেম (phetkashem) রোড ধরে কয়েকশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন বাহন ব্যবহার করে মালয়েশিয়ার পেদাং বাসার (pedang basar) সীমান্তে আসতো। এটা থাইল্যান্ডের ৪ নং হাইওয়ে। এই পুরো পথটুকুতেই জঙ্গলময় স্থানের মাঝ দিয়ে চলা হাইওয়ে ব্যবহার করতো পাচারকারীরা।
তবে এখন সাতুন (Satun) এবং থাং বান ন্যাশনাল পার্কে (Thang ban national park) বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে থাই সেনাবাহিনী এবং পুলিশ। ফলে কো-ফায়াম (ko phayam) বা কো-চাংয়ে (ko chang) নামলেও ফেতকাসেম রোড ধরে উত্তর বা দক্ষিণে যাওয়া বেশ কঠিন হবে পাচারকারীদের।
এক্ষেত্রে পাচারকারীরা ন্যাগো ওয়াটারফল ন্যাশনাল পার্ক (nego waterfall national park) বা কায়েং ক্রাং ন্যাশনাল পার্কের (kayeng krang national park), নং লুম ফো (nong loom pho) গহীন জঙ্গল ধরবে। এক্ষেত্রে বাত সুয়ান (Bat suan), চাই খা (chai kha), বান সুয়ান (ban suan), মোকলাফালারাম গার্ডেন (mokfolaram garden) ধরে ফেতকাসেম রোডের ‘মু’ এলাকা ব্যবহার করতে পারে পাচারকারীরা। এটা ৪১ নং হাইওয়ে।
সূত্র জানায়, এ গহীন অরণ্য পাচারকারীদের জন্যে পার হওয়াটা খুব সহজ হবে না। বিশেষ করে দিনের বেলা ছাড়া এগোনো খুব কঠিন হবে। তবে বনের মধ্যের পথগুলো ব্যবহার করতে পারে তারা। ফেতকাসেম রোডে বনের পূর্বাংশ ঘেঁষে রয়েছে রাবার ও পাম বাগান। এই হাইওয়েতে লোকাল পরিবহন রয়েছে। যেখানে হয়তো আর গ্রুপে না গিয়ে তিন বা চারজনের দলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভাগ করে নেবে পাচারকারীরা। দেশটির পূর্বাংশের এই উত্তর দক্ষিণ রাস্তাটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম রয়েছে আপাতত। আর দীর্ঘ এই হাইওয়ে এবং বনাঞ্চল পাহারা দেয়াও বেশ কঠিন।
এক্ষেত্রে ডন থং (don thong) ধরে দ্যা রুয়ের সাব ডিস্ট্রিক্ট ভিলেজে (The ruer sub district village) এসে পশ্চিম দিকে ঘুরলেই ৪৪ নম্বর হাইওয়ে ধরে থান বক খোরানি ন্যাশনাল পার্কে (Than bok khorani national park) আসা সম্ভব। সেখান থেকেও ক্রাবি (krabi) হয়ে সীমান্তে সাতুন (Satun) এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে ক্রাবির পরও ৪ নম্বর হাইওয়েটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে এখনো। আর ট্রাং (trang) থেকে সাতুন পর্যন্ত জঙ্গলটিও এখন সেনাবাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছে।
সেক্ষেত্রে ৪১ নং হাইওয়েটি ব্যবহার করে সোজা ফাতু লুং (phatu loong) হয়ে শংখলার (songkhola) পাশ ধরে হাত ইয়াইতে (hat yat) চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এরপর এশিয়ান হাইওয়ে ২ ধরেই মালয়েশিয়ার পেদাং বাসার (pedang basar) বা সেদাও (sedao) সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্প হিসেবে খোলং লা (kholog la), খোলং চান রাই (kholong chan rai), খাও নাম খাং ন্যাশনাল পার্কের (khao nam khang national park) মতো জঙ্গলগুলোকে ব্যবহার করা হতে পারে।
দীর্ঘ দিন ধরে এ অঞ্চলে মানবপাচার নিয়ে কাজ করছেন বিবিসি’র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধি জনাথন হেড (jonathan head)। ৭ অক্টোবর বুধবার ব্যাংকক অফিসে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এসব এলাকায় গ্রামবাসীরা খুবই দরিদ্র। এখানে বেশিরভাগই রাবারের বাগান। এখানে কিছু পয়সা দিলেই গ্রামবাসীদের ম্যানেজ করা যায়। তারা নিজেরাও জড়িয়ে পড়তে পারেন মানবপাচারের ব্যবসায়।
তিনি বলেন, গত মৌসুমের অভিজ্ঞতায় এবার থাইল্যান্ড সরকার বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পূর্বের পথগুলো পাচারকারীরা এবার ব্যবহার করতে চাইলে সেটা বেশ কঠিন হবে। বিশেষ করে রারং এলাকায় পুলিশের প্রধান বিষয়টিতে বেশ সতর্ক রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন পথ ধরেই এবার পাচারকারীরা অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে যেতে পারে মালয়েশিয়া সীমান্তে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
এমএন/জেডএম