পাতায়া (থাইল্যান্ড) থেকে: থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় প্রধান শহর পাতায়ার আলোক ঝলমলে রাস্তায় প্রকৃতি আর মানুষসৃষ্ট সৌন্দর্যের মিশেল দেখে যতটা না মুগ্ধ হতে হয়, তার চেয়ে বেশি মুগ্ধতা কাজ করে এখানকার বাংলাদেশিদের সফলতা দেখে। যখন এদেশে এসেছিলেন, তখন তারা ছিলেন কর্মচারী; আর এখন একাধিক কর্মচারী কাজ করছেন তাদের তত্ত্বাবধানে।
রণধীর কুমার বোস বা রনির কথাই ধরা যাক। ২০০২ সালে মাত্র পাঁচ হাজার বাথ বেতনে টেইলারিং শপের কর্মচারী হিসেবে পাতায়ায় পা রেখেছিলেন। আর এখন প্রতিমাসে দেড় লাখ বাথ খরচ করছেন নিজের স্টাফদের বেতন হিসেবে। সততা আর পরিশ্রম দিয়ে এখন হয়ে উঠেছেন সফল ব্যবসায়ী।
আলাপকালে জানা যায়, পাতায়া আসার দেড় বছরের মাথায় চাকরি বদল করেন রনি। এরপর পার হয়ে যায় আরো একটি বছর। ততক্ষণে কাজ শিখে ফেলেছেন ভালোভাবেই। জমানো অর্থ ও দেশ থেকে পাঠানো বাবার কিছুটা আর্থিক সহযোগিতায় ২০০৪ এ নিজের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর শুধুই সফলতার গল্প। এখন কেবল পাতায়ায় নয়, তার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও।
বাংলানিউজকে বলেন, পাতায়ায় আসা ট্যুরিস্টদের ভিড় তো দোকানে আছেই। ইউরোপের নানা দেশ থেকে অনলাইনেও প্রচুর অর্ডার পাই।
‘কেমন আছেন এদেশে?’ প্রশ্ন করতেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, অনেক ভালো আছি। সফল ব্যবসা, নিজের গাড়ি, একমাত্র মেয়ে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে, সব মিলিয়ে সুখি মানুষ।
এদেশে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ সম্পর্কে বলেন, এদেশে বিনিয়োগের সুযোগ আছে, পরিশ্রমী থাইদের দেশে কাজ পাওয়া কঠিন। অল্প কিছু ক্ষেত্রে কাজের অনুমতি মেলে। তাও কিছুদিন আগে নৌকায় করে অবৈধ অনুপ্রবেশ আর ব্যাংককের বোমা হামলায় জড়িত একজনের বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা কিছুটা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
এছাড়াও ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট, ট্যাক্স সব মিলিয়ে খরচটাও একটু বেশি পড়ে যায়। তাই থাই শ্রমিকদের প্রতিই বেশি আগ্রহ রনির। তবে ব্যবসার পরিধি বাড়ায় বাংলাদেশি বিশ্বস্ত লোক আনার চেষ্টা করছেন বলেও জানালেন।
নিজের দোকানের জন্য বাংলাদেশ থেকে লোক আনতে চান আরেক সফল ব্যবসায়ী দিন মোহাম্মদ তালুকদারও। তিনি থাইল্যান্ডে এসেছেন ১৯৯২ সালে; তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনভাই আছেন এখন পাতায়ায়। জানান, এদেশে পরিশ্রমের মূল্য আছে। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সফলতা আসবেই।
একই কথা বললেন, আরেক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি একইসঙ্গে টেইলারিং শপ ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
বলেন, অল্প সময়ে ধনী হতে চেয়ে থাইল্যান্ড না আসাই ভালো। কঠোর পরিশ্রম আর মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। তবেই সফলতা আসবে। এছাড়া অবৈধ পথে নয়, অবশ্যই বৈধ পথে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ নিয়ে আসতে হবে।
নিজের ‘লিটল ইন্ডিয়া’ রেস্টুরেন্টে এসব আলাপের মাঝেই কাস্টমারদের সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন মিজান। বাংলাদেশি মালিকানায় ভারতীয় নামে রেস্টুরেন্ট, কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এই রেস্টুরেন্ট ১৩ বছরের পুরনো। মূলত সেসময় ইউরোপের পর্যটকরাই বেশি আসতেন। তারা বাংলাদেশের চেয়ে ভারত নামটাই বেশি চিনতেন। তাই এ নাম; সেভাবেই চলছে।
তবে লিটল ইন্ডিয়ার পাশেই বাংলায় লেখা ‘এখানে বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়। ’ দোকানের প্রবেশ মুখে আছে বাংলাদেশের পতাকাও।
দীর্ঘ সময় ধরে থাইল্যান্ডে বসবাস করলেও এসব বাংলাদেশিদের কেউই থাই নাগরিকত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন বলে জানান।
মিজান বলেন, নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল।
একই সুরে রণধীর বলেন, নাগরিকত্ব নিতে হলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩৭ হাজার বাথ ট্যাক্স দেখাতে হবে। ৫ লাখ বাথ জমা করতে হবে। অনেক কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। এসব কিছুর পরও নাগরিকত্ব মিলবে এমন নিশ্চয়তাও নেই। মিললেও অনেক বছর লেগে যায়। এরচেয়ে সহজ- প্রতিবছর ফি জমা দিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া। তাছাড়া বাংলাদেশি বলেই পৃথিবীতে পরিচিত হতে চাই। এটাই আমার একমাত্র পরিচয় হয়ে থাকুক।
তবে থাই নারী বিয়ে করে স্বাভাবিক নিয়মে অনেক বাংলাদেশিই এখন থাইল্যান্ডের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বলেও জানা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
জেপি/জেডএস
** থাইল্যান্ড থেকে জেসমিন পাপড়ি
** থাই রাজার জন্য বাংলাদেশের প্রার্থনা
** রাজার জন্য যতো ভালোবাসা!
** থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের ‘শক্তি’
** রেন্টে বাইক!
** গাড়ির হর্নবিহীন শহর
** সময়ানুবর্তী রিজেন্ট এয়ার
** কলম দেখলেই এগিয়ে আসেন তারা!