বর্তমান সময়ে বাফুফে আলোচনায় রয়েছে নারী ফুটবলের উন্নয়নের জন্য। সম্প্রতি সময়ে নারী ফুটবলের সাফল্যই বড় বিজ্ঞাপন বাফুফের জন্য।
বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে প্রতিভাবান ফুটবলার বাছাই করে এলিট একাডেমিতে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করেছিল বাফুফে। তার ফলও কিছুটা আসতে শুরু করেছিল। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল) শিরোপা জয়ের পথে রয়েছে বাফুফে এলিট একাডেমি। পরের মৌসুমে হয়তো তাদের দেখা যেত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে। তবে বারাবরের মত এখানেও বাফুফের আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। টাকার অভাবে বাফুফে এলিট একাডেমি ঠিক কতদিন চালিয়ে নিতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বাফুফের সহ-সভাপতি এবং ডেভলপমেন্ট কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। আজ (২২ ফেব্রুয়ারি) বাফুফের ডেভলপমেন্ট কমিটির সভা ছিল বাফুফে ভবনে। সভা শেষে মানিক বলেন, ‘আজকে ডেভেলপমেন্ট কমিটির নিয়মিত সভা হয়েছে। বেশ কিছু এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে জুনে নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্ট ও সেপ্টেম্বরে ভুটানে হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্ট। আমরা এই দু'টি আসরেই ট্রফি জিততে চাই। আমাদের ট্রেনিং ও একাডেমি কিভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, অনূর্ধ্ব-১৯ বয়স শ্রেনীতে আরও কিছু ট্যালেন্ট হান্ট করা প্রয়োজন। তবে তাদের আপ টু মার্ক হতে হবে। চেষ্টা করবো আগেই তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসার জন্য। ’
ক্যাম্পের উন্নয়নের কথার সঙ্গে শঙ্কারও কথাও শোনা গেছে মানিকের কণ্ঠে। টাকার সঙ্কটের কারণে বাফুফে এলিট একাডেমি চালানোই মুশকিল হয়ে গেছে। ঠিক কতদিন এই একাডেমি চালিয়ে নিতে পারবেন তা জানেন না বলে জানিয়েছেন বাফুফে সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, ‘প্লেয়ারদের বেতন ২০ শতাংশ বাড়িয়েছি, আজকের মিটিংয়ে। আসলে আমরা তো দিতে চাই…কিন্তু আমার পাতিলে তো থাকলে তো চামচে উঠবে। তা না হলে তো উঠবে না। আমার পাতিল খালি, সেজন্য আমার চামচে উঠে না। আমরা জোড়াতালি দিয়ে খেলোয়াড়দের বেতন দিচ্ছি। এটাকে বেতন বলা যাবে না, সম্মানি বলা যায়। তাদের পকেট খরচ হিসেবে। আমাদের একাডেমিতে কিন্তু অনেক খরচ, একাডেমি চালানো খুব কষ্ট, আগামীতে আমরা এটা কতটুকু কন্টিনিউ করতে পারব, সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। ’
কোনও স্পন্সর এগিয়ে না আসলে ক্যাম্প চালানো মুশকিল হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মানিক। এছাড়া ফুটবলের উন্নয়নের জন্য সরকারেরে কাছে একটি ডিপিপি’র প্রস্তাবনা দিয়েছে বাফুফে। এই ডিপিপি বাস্তবায়িত হলে ক্যাম্প চালানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি। মানিক বলেন, ‘ডিপিপি বাস্তবায়িত হলে ক্যাম্প চালাতে কোনও সমস্যা হবে না। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চেষ্টা করছি ফান্ড কালেক্ট করার। ’ বর্তমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে ডিপিপি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা ঠিক কতটুকু তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
এলিট একাডেমি বর্তমানে ভালো করছে বলে জানিয়েছেন মানিক। আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারলে দল আরও বেশি উন্নতি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বাফুফে সহ-সভাপতি। তবে অর্থিক সংকটের কারণে তেমনটা করতে পারছে বাফুফে। এই একাডেমি চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মানিক। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশা করি কন্টিনিউ করতে পারব, বাকিটা ভবিষ্যৎ সময়েই বলে দেবে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো করতে গেলেও আমাদের টাকার দরকার। আমাদের আজকের মিটিংয়ে পল স্মলি এবং আমাদের অনেক সদস্য উপস্থিত আছেন। তাদের মতামত হচ্ছে, আমাদের এলিট একাডেমি যে বিসিএল (বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ) খেলছে এবার আশা করি আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। আমাদের ছেলেদের রেজাল্ট অনেক ভালো, ফিটনেস অনেক ভালো। কারণ আমরা এদের নিয়মিত অনুশীলন করাচ্ছি। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৭ মালদ্বীপকে ৫-০, শ্রীলঙ্কাকে ৫-১ হারিয়েছি। ভারতের কাছে ২-১ এ হেরেছি। আমাদের টিম অনেক মজবুত। এরা যদি আরও বেশি বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে পারে, আমাদের ফল আরও ভালো করতে পারি। সাফে শিরোপা আনতে পারি, কিন্তু আমরা তো সেটা করতে পারছি না। এটা করতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন, সে টাকা আমাদের কাছে নেই। যে কারণে আমরা ওদের দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে পারছি না। বিসিএলে খেলিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। ’
সামনেই দুটি টুর্নামেন্টের কথা জানিয়েছেন মানিক। তিনি বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে জুনে নেপালে, সেপ্টেম্বরে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৬ এই দুই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। এই আসরগুলোতে ট্রফি জিততে চাই। মালয়েশিয়া গিয়ে প্রস্তুতি খেলার লক্ষ্য আছে। আশিয়ানের কয়েকটা দেশ আছে তাদের আমাদের দেশে এনে খেলার চেষ্টা করব। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এআর/আরইউ