সাধারণ মানুষের কাছে বক্সিং নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই বললেই চলে। যদিও এশিয়ান গেমসে প্রথম পদকটা এসেছিল বক্সিংয়ের হাত ধরেই।
কোনও নারীর পক্ষে তারকা হওয়া আরও বেশি অসম্ভব বলেই মানবেন বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ। সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতেই বাংলাদেশে এসেছেন রুকসানা বেগম। ব্র্রিটেনে রয়েছে তারকাখ্যাতি। মুয়ে থাইয়ের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। লন্ডনে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সেই রুকসানা বেগম আগামীকাল (২১ মার্চ) লড়বেন বাংলাদেশের পেশাদার বক্সিং ‘বেক্সিমকো এক্সবিসি ফাইট নাইট’ প্রতিযোগিতায়।
এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট গত বছর থেকেই বাংলাদেশের বক্সারদের নিয়ে আয়োজন করে আসছে পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক বক্সারদের নিয়ে এটি দ্বিতীয় আসর। এবারের আসরে অবশ্যই বড় চমক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বক্সার রুকসানা। ৩৬ বছর বয়সী সাবেক কিকবক্সিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের জীবনটাই অবশ্য চমকে ভরা।
২০১০ সালে থাই মার্শাল আর্টখ্যাত মুয়ে থাইয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন রুকসানা। তারও আগে ২০১২ সালে হয়েছিলেন ব্রিটেনে মুসলিম নারী খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছাদূত। একই বছর ব্রিটেনে ১০০ প্রভাবশালী বাংলাদেশির তালিকাতেও ছিলেন রুকসানা। ২০২০ সালে প্রকাশিত তার জীবনী ‘বর্ন ফাইটার’ ব্রিটেনের অন্যতম সাড়া জাগানো বইয়ের একটি।
পেশাদার লড়াকুর মতো রুকসানার জীবনটাও লড়াইয়ে ভরপুর। ২০০৬ সালে বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন ব্যাংকার সাঈদ চৌধুরীকে। দুই বছর পরই বিচ্ছেদ ঘটে সম্পর্কের। নিজের জীবনীতে রুকসানা লিখেছিলেন, বিয়ের পর লড়াকু পরিচয়টাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। মানসিক সমস্যায় ভর্তি হোন হাসপাতালে। সেখান থেকে বাবা-মায়ের সমর্থন পেয়েই মুয়ে থাইয়ে ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়ন হোন রুকসানা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে কিকবক্সিংয়ে পান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ।
রুকসানার বক্সিংয়ের শুরুতে অবশ্য ছিল পরিবারের বাধা। পরিবারের কাছে গোপন রেখেই শুরু করেছিলেন বক্সিং খেলা। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম ব্রুস লিকে দেখতে আমার অনেক ভালো লাগতো। আমি তার অনেক বড় ভক্ত ছিলাম। আমি তার স্কিল দেখে মুগ্ধ হতাম। এছাড়া স্কুলে খেলাধুলায় আমি ভালো ছিলাম। ছোট বেলায় মুসলিম নারী হওয়ায় কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তখন বিষয়টা এতটা সহজ ছিল না। তখন ছেলেরাই বেশিরভাগ মার্শাল আর্ট অনুশীলন করতো, ওয়েস্টার্ন মেয়েরাও তেমন একটা মার্শাল আর্টে আগ্রহী ছিল না। ’
‘আমি শুরু থেকেই জানতাম এই সফরটা আমার জন্য কঠিন হবে। আমি অনেক বছর পর্যন্ত আমার এই ইচ্ছার কথা গোপন রেখেছিলাম পরিবারের কাছে। আমার বক্সার হওয়ার পথটা সহজ ছিল না। তবে বক্সিং খেলাটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বক্সিং আমাকে জীবন যাপনের নতুন পথ দেখিয়েছে। কীভাবে প্রাণবন্ত ভাবে বাঁচা যায়, লক্ষ্যে কীভাবে অবিচল থাকতে হয় এটা আমাকে বক্সিং শিখিয়েছে। ’
পরিবারের সম্মতির পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি রুকসানাকে। একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে রুকসানার কাছে। সাফল্য পাওয়ার পর জীবন এতটা বদলে যাবে সেটা ভাবতে পারেননি তিনি। রুকসানা বলেন, ‘আমি আশা করিনি গণমাধ্যমগুলো আমার প্রতি এতটা আগ্রহ দেখাবে। তারা আমার কথা জানতে চাইবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মিডিয়ার যে সাড়া পেয়েছি তা অপ্রত্যাশিত ছিল। অ্যাডিডাস, প্যানডোরা, জিম শক, অ্যাপলের মত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তবে এটা একদিনে আসেনি। দশ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর আমি ঐ পর্যায়ে পৌছাই। ’
মুয়ে থাই ছেড়ে ২০১৮ সালে পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান রুকসানা। আগামীকাল বাংলাদেশের তানজিলার বিপক্ষে লড়বেন ৩৬ বছর বয়সী এই বক্সার। ইংল্যান্ডের পর বাংলাদেশেও চ্যাম্পিয়ন হতে চান সিলেটি বংশোদ্ভূত রুকসানা, ‘আমি খুব খুশি এখানে আসতে পেরে। লন্ডনে থাকলেও আমার শেকড় বাংলাদেশে। লন্ডনে থাকলেও বাংলাদেশের প্রতি আমার একটা টান আছে। ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে এখানে অংশ নিতে পারা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার। ইংল্যান্ডের পর এখন বাংলাদেশে যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারি তবে সেটা সত্যি দারুণ হবে। ’
মোট ১৪ বক্সার বিভিন্ন ওজনের ৭টি শ্রেণিতে আগামীকাল লড়বেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ফেদারওয়েট, লাইট হেভিওয়েট, ব্যান্টামওয়েট, ক্রুজারওয়েট, ফ্লাই ওয়েট, লাইটওয়েট এবং ওয়েল্টারওয়েট শ্রেণিতে লড়বেন বক্সাররা। ব্যান্টামওয়েট ক্যাটাগরিতে ছয় রাউন্ডের একটি ম্যাচের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টটি শুরু হবে যেখানে দুজন বাংলাদেশি বক্সার অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
এআর