২০১৬ সাল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি আলোচিত, সমালোচিত বছর। ফুটবলের কারণে বছরটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
তবে হতাশার ওই বছরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে অন্যতম বড় সম্মান-পুরস্কারটি এনে দেয় বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দল। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ‘বঙ্গবন্ধু এশিয়ান সিনিয়র মেনস সেন্ট্রাল জোন আন্তর্জাতিক ভলিবলে’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব লাভ করে। ভলিবলের ৪৫ বছরের ইতিহাসে এটি ছিল প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতার ঘটনা। ভলিবলের বাঁক বদলের সেই ইতিহাস রচনার অন্যতম সারথী ছিলেন মিডল ব্লকার নড়াইলের ছেলে সোহেল রানা লিংকন। পুরো টুর্নামেন্টে অনন্য-অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছিলেন সোহেল। তাছাড়া জাবীর, রাসেল, রাশেদ, কাঞ্চন, হরোশিতরাও ছিলেন দুর্দান্ত। ভলিবলের এমন তখন সাফল্যে নড়েচড়ে বসেন কর্মকর্তারা। ভলিবলকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। দেশের সাধারণ সমর্থক থেকে প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রশংসা-ভালোবাসায় সিক্ত হোন সোহেলরা।
ভলিবলের ইতিহাসকে বদলে দেয়ার নায়ক সোহেল রানা এখন আর জাতীয় দলের অংশ নন। অনানুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিয়েছেন তিনি। তবে ভলিবল কোর্ট থেকে একেবারে বিদায় নেননি। নতুন পরিচয়ে নিজেকে যুক্ত করতে যাচ্ছেন। জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড় এখন কোচিংয়ে নাম লিখিয়েছেন। গেল ৭ থেকে ১১ জুন-২০২৩ শ্রীলঙ্কার গলেতে ভলিবল কোচেস কোর্স লেভেল-২ অনুষ্ঠিত হয়।
কোর্সটিতে কোর্স ইন্সট্রাক্টর হিসেবে ছিলেন জাপানের আন্দ্রে অতসী খাঁত। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপের মোট ১৯ জন এই কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৯ জন সফলতার সঙ্গে কোর্সটিতে কৃতকার্য হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শফিকুর রহমান রাসেল এবং সোহেল রানা লিংকন অংশ নেন। দুজনই দারুণভাবে উত্তীর্ণ হোন।
তবে হঠাৎ কেন জাতীয় দলে ছেড়ে কোচিংয়ে যুক্ত হলেন সোহেল- এমন প্রশ্নের জবাবে নড়াইলের এ খেলোয়াড় জানান, ‘আসলে হঠাৎ করে কোচিংয়ে এসেছি এমন নয়। ২০১৪ সালে খেলোয়াড় থাকাকালীনই আমি লেভেল-১ কোচিং কোর্স করেছি। এবার লেভেল-২ সম্পন্ন করলাম। অনেকদিন ধরেই আমি ইনজুরি আক্রান্ত। ২০২১ সালে বাংলাদেশ গেমসেই সবশেষ খেলেছি। আর জাতীয় দলে সবশেষ ছিলাম ২০২০ সালের ক্যাম্পে। করোনার কারণে আমাদের ইরান সফরটি বাতিল হয়। এরপর আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি। জাতীয় দল নিয়ে আপাতত কোনো ভাবনা নেই। কোচিংয়েই এখন ধ্যানজ্ঞান। ’
জাতীয় দলের বাইরেও সোহেল রানার আরো একটি পরিচয় আছে। তিনি তিতাস ক্লাবের এখন খেলোয়াড়, অফিসার। সেই ২০০৮ সাল থেকে ক্লাবটির জার্সিতে খেলছেন তিনি। ক্লাবের অনেক সাফল্যের পেছনে অবদান রয়েছে সোহেলের। নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি ক্লাবকে লিগ শিরোপা জেতাতেও রেখেছিলেন ভূমিকা।
জাতীয় দলের পাশাপাশি এখন ক্লাবের জার্সিতেও না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কোচ হিসেবে থাকার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। হোক সেটা জাতীয় দল কিংবা ক্লাবের হয়ে। একটা সময় ভলিবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন সকলে। অভিভাবকরাও সন্তানদের এ খেলার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করতেন। তবে সোহেলরা সেই ধারণাকে সমূলে বদলে দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ওই ট্রফি জেতার পর থেকেই মূলত ভলিবলের চিত্র বদলে গেছে। এই খেলার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা যখন খেলতাম তখন অবকাঠামোসহ নানান অসুবিধা, বাধা-বিঘ্নতা ছিল। কিন্তু এখন দিন অনেক বদলে গেছে। ভলিবলের নিজস্ব মাঠ, আবাসন ব্যবস্থা, ট্রেনিং গ্রাউন্ড, জিমের ব্যবস্থা সব কিছুই যুক্ত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম স্যার আমাদের ফেডারেশনের সম্মানিত সভাপতি। ওনার নেতৃত্বগুণেই মূলত ভলিবলের আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনেক নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা এখন দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতেও আরো অনেক প্রতিভা আসবে। ভলিবল খেলাটা সব সময়ই জনপ্রিয় ছিল। সামনে এটি আরো অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। ’
বাংলাদেশ সময় : ১১৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
এআর/এএইচএস