গতবারের ফাইনালে তামিম ইকবাল ও কাইল মায়ার্সের ব্যাটে ভর করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ফরচুন বরিশাল। যার পুনরাবৃত্তি হলো এবারও।
২০২৪/২৫ বিপিএলের ফাইনালে চিটাগাংকে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বরিশাল। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান করে চিটাগাং। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩ বল হাতে রেখে জয় পায় বরিশাল।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দারুণ শুরু পায় বরিশাল। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও তাওহীদ হৃদয় মিলে পাওয়ার প্লেতে তোলেন চিটাগাংয়ের সমান ৫৭ রান। দুজনের জুটিতে আসে ৭৬ রান। এর মধ্যে তামিম একাই করেন ৫৪ রান। মাত্র ২৪ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ফিফটি হাঁকান এই বাঁহাতি ওপেনার, যা এই আসরে তার চতুর্থ ফিফটি। তার সমান ফিফটি আছে কেবল ঢাকা ক্যাপিটালসের তানজিদ হাসানের।
ফিফটির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম। নবম ওভারের শুরুতেই শরিফুল ইসলামের বলে তুলে মারতে গিয়ে খালেদ আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তামিম। ১৪ ম্যাচে তার ৪১৩ রান এবারের আসরে চতুর্থ সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ রানের মালিক খুলনা টাইগার্সের মোহাম্মদ নাঈম (৫১১)। দুইয়ে থাকা তানজিদ করেছেন ৪৮৫ রান। ৪৩১ রান নিয়ে তিনে চিটাগাংয়ের গ্রাহাম ক্লার্ক।
তামিমকে ফেরানোর ওভারেই সদ্য ক্রিজে আসা দাভিদ মালানকেও বিদায় করেন শরিফুল। ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন মালান। যদিও আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। পরে রিভিও নিলে আউটের সিদ্ধান্ত আসে। বরিশাল আরেকটি ধাক্কা খায় একাদশ ওভারে। সেট ব্যাটার হৃদয় ২৮ বলে ৩২ রান করে নাঈম ইসলামের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। নাঈম পরের বার বোলিংয়ে এসে বিদায় করেন ৯ বলে ১৬ রান করা মুশফিকুর রহিমকেও।
১৩০ রানে ৪ উইকেট হারানো বরিশালকে শেষদিকে টেনে নেন কাইল মায়ার্স। তার ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ১৫ওভার শেষে দেড়শ পেরিয়ে যায় বরিশাল। চিটাগাংয়ের বোলাররা দেদারসে বাড়তি রানও দিয়েছেন। ওয়াইড, লেগ বাই ও মিস ফিল্ডিংয়ের ফায়দা তুলে নিয়েছে বরিশাল। ক্যারিবীয় তারকা মায়ার্সের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শেষ ৪ ওভারে লক্ষ্যটা নেমে আসে ৩২ রানে। বরিশালের হাতে ছিল ৬ উইকেট।
দারুণ খেলতে থাকা মায়ার্স দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি। ২৮ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করে শরিফুলের তৃতীয় শিকার হয়ে মায়ার্স যখন ফেরেন, ১৫ বলে তখনো ২৩ রান দরকার বরিশালের। ওই ওভারেই আরও একবার আঘাত হানেন শরিফুল। বাঁহাতি পেসার লাফিয়ে ওঠা স্লোয়ার বলের লাইন বুঝতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ (৭)। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপারের গ্লাভসে জমা হয়।
শেষ ২ ওভারে ২০ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় বরিশালের সামনে। বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে সেটিকে ৮ বলে ১১ রানে নামিয়ে আনেন রিশাদ হোসেন। মিস ফিল্ডিং আর দারুণ রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে পরের বলে আসে ৩ রান। ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নবীকে স্লোয়ারে পরাস্ত করে মিড অনে খালেদ আহমেদের ক্যাচে পরিণত করেন বিনুরা ফার্নান্দো। শেষ ৬ ওভারে লক্ষ্য নেমে আসে ৮ রানে।
শেষ ওভারে স্লো ওভার রেটের কারণে চার জনের বেশি ফিল্ডার বাইরে রাখতে পারেনি চিটাগাং। প্রথম বলেই বিশাল ছক্কায় সেটিকে হাতের নাগালে নিয়ে আসেন রিশাদ। ৫ বলে ২ রানের লক্ষ্যটা সহজেই পেরিয়ে যায় তারা।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা চিটাগং পায় উড়ন্ত শুরু। উদ্বোধনী জুটি বেধে ছুটতে থাকেন পারভেজ হোসেন ইমন ও খাজা নাফে। ৩০ বলে ফিফটির দেখা পান ইমন। আর নাফের লাগে ৩৭ বল। ৭৬ বলে ১২১ রানের এই দারুণ জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। ৪৪ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাফে।
তিনে নেমে ইমনকে সঙ্গ দেন গ্রাহাম ক্লার্ক। লড়াই চালাতে থাকেন তিনিও। গড়েন ৪০ বলে ৭০ রানের জুটি। কিন্তু শেষ ওভারে রান আউট হয়ে আর এগোতে পারেননি। ২৩ বলে ৪৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন চিটাগংয়ের এই ব্যাটার। একই ওভারে ২ রান করে ফেরেন শামিম হোসাইন। তবে থেকে যান ইমন। ৪৯ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চিটাগাং কিংস: ১৯৪/৩ (নাফে ৬৬, ইমন ৭৮, ক্লার্ক ৪৪; মোহাম্মদ আলী ১/২১)
ফরচুন বরিশাল: ১৯৫/৭ (তামিম ৫৪, মায়ার্স ৪৬; শরিফুল ৪/৩৪, নাঈম ২/ ১৮)
ফলাফল: বরিশাল ৩ উইকেটে জয়ী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
এমএইচএম