ঢাকা: বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ফিফটিও তারই। এই অপিকেই মাঝে মাঝে দেখা যায় পুরান ঢাকার বংশালের ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলাদেশ মাঠে’।
ক্ষয়িষ্ণু ও বিবর্ণ সময়ে অল্প যে ক’জন ফুটবলার তাদের নৈপুণ্যের ঝিলিক দিয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, তাদের একজন আরমান মিয়া। যাকে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা চেনেন ‘ফ্রি কিক স্পেশালিস্ট আরমান’ নামে। সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশের মিডফিল্ডের এই গেম মেকার তার মেধা ও ক্রীড়াশৈলী দিয়ে তিনি নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি খেলেছেন জাতীয় দলে। খেলেছেন ইস্কাটন সবুজ সংঘ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র, আবাহনী লিমিটেড, ব্রাদার্স ইউনিয়নে। দেশের বাইরে খেলেছেন সৌদি আরব, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানের মাটিতে।
‘বাংলাদেশ মাঠ’ নামে পরিচিত এই মাঠটি স্বাধীনতার আগে ‘পাকিস্তান মাঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ঐতিহ্যবাহী এই ‘বাংলাদেশ মাঠ’ এখন খেলার অনুপযোগী। যে মাঠে অপি, আরমানদের মতো খেলেছেন জানে আলম আর মোহাম্মদ মুরাদের মতো ফুটবলের এক সময়ের নক্ষত্ররা।
শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে থাকা এই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাঠের কোথাও ঘাস নেই। পুরোটাই বালিতে আচ্ছন্ন। খেলার সময় বাতাসে উড়ছে ধুলাবালি। পুরো মাঠ জুড়েই ছড়িয়ে আছে ইট-পাথরের কণা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ কারণে প্রায়ই মাঠে দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু মাঠের অবস্থা বেহাল নয়, মাঠ সংলগ্ন রাস্তার চারপাশে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সরেজমিনে দেখা যায়, উচ্ছেদের কারণে কিছু ভাসমান দোকানও পড়ে আছে মাঠের সীমানা ঘেঁষে। স্থানীয় ডেকোরেটরের ব্যবহৃত বাঁশ, বাড়ি তৈরির আলগা বালু, মাটি ইত্যাদিও পড়ে আছে মাঠ ঘেঁষে।
বংশালের মাজেদ সরদার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন এই মাঠটিতে প্রবেশের জন্য দুটি ফটক (উত্তর-দক্ষিণ) রয়েছে। দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে দুটো গ্যালারি রয়েছে। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব। তবে, ফটক দুটি সব সময় খোলা থাকায় সেখানে ভাসমান দোকান বসে। আর রাতে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। প্রকাশ্যেই চলে স্থানীয় আর বহিরাগতদের এই মরণছোবলের নেশা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক চেষ্টা করেও মাঠটিকে তারা রক্ষা করতে পারছেন না। ধুলাবালির কারণে খেলতে আসা বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। মাঠ সংলগ্ন বাসা-বাড়িতেও ধুলাবালির স্তর জমে যাচ্ছে।
খেলা দেখতে আসা এবং খেলতে আসা একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীকুমারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুক্রবার সকাল থেকেই সাতরোজা, কসাইটুলি, নিমতলী, সিক্কাটুলি, মুসলিম কলোনীর ছেলেরা এখানে খেলতে আসেন। তবে, বিকেলের দিকে মাঠে জায়গা পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। তখন মাঠে আরও বেশি খেলোয়াড়ের সমাগম হয়। তিনি জানান, প্রায় তিন বছর আগে এ মাঠে পাইওনিয়ার ফুটবলের লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু, মাঠের এমন বেহাল দশায় এখন আর সেভাবে বড় কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন হয়না। দুই-তিন মাস পরপর সিটি করপোরেশন থেকে মাঠ পরিস্কার করার লোক এসে শুধু ঝাড়ু দিয়েই চলে যায়। এই মাঠে রাতে খেলার জন্য সিটি করপোরেশনের আলোর ব্যবস্থা থাকলেও এখন আর রাতে কোনো খেলা হয়না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশ মাঠে কয়েক বছর আগে ঘাস লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নয়াবাজার হাট থেকে গোবর এনে মাঠে ফেলা হয়েছিল ঘাস জন্মানোর জন্য। কিন্তু, তাতে কোনো কাজ হয়নি। কিছুদিন ঘাস থাকার পর আবারো মাঠ পুরো বালিতে ঢেকে যায়। মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা ছোট বেলায় এ মাঠে খেলেছি। এ মাঠে খেলে পাড়ার বহু ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। ১৫ বছর আগে এ মাঠটি খেলার উপযোগী ছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেও মাঠটিকে রক্ষা করতে পারছি না।
আরও কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আউয়াল হোসেন মাঠটির ব্যাপারে অবগত আছেন। তিনি মাদকসেবীদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চান। মাঠটি সংস্কারের জন্যও তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মাঠে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তিনি চেষ্টা করবেন বলেও জানা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, ০৮ জানুয়ারি ২০১৬
এমআর/