ফলে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠেছে পুরো মাঠ। ভাষ্যকারের কথা মতো নিয়ম মানা এ অশ্বারোহীরা আবার নাছোড়বান্দা।
হাজারো মানুষের মিলনমেলায় বাঁধভাঙা আনন্দের এসব দৃশ্যকাব্য রচিত হয়েছে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে। রোববার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রধান আকর্ষণ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করে নগরবাসীকে নির্মল আনন্দের বর্ণচ্ছটায় মাতিয়েছে ময়মনসিংহ পৌরসভা।
আধুনিকতার দাপটে বিলুপ্তপ্রায় এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাকে ঘিরে দুপুর থেকেই ইট-পাথরের যান্ত্রিক এ নগরীতে ছিল উৎসবের আবহ। দুুপুর গড়াতেই ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক, যুবা-কিশোর-তরুণী সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে। বিশাল এ মাঠের চারপাশ লোকারণ্য হওয়ায় অনেকেই মাঠের ক্লাবপাড়ার ছাদে উঠেও হারিয়ে যাওয়া এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। বরাবরের মতো এবারও দৃষ্টিনন্দন এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলার সেরা ঘোড়সওয়াররা। বিকেল গড়াতেই ‘যুদ্ধের ময়দানে’ অবতীর্ণ হন এসব জেলার ৫৩ অশ্বারোহী। কদম ও দাপট দৌড়ে বিজয়মাল্য পড়েন মোট ১৮ প্রতিযোগী।
‘কদম দৌড়ে ঘোড়া দ্রুত গতিতে হাঁটবে। চার পা চলবে একসঙ্গে’ বারবার মাইকে আওয়াজ দিচ্ছিলেন ভাষ্যকার সজল কোরায়শী। দাপট দৌড় শুরু হওয়ার আগেই এবার ভাষ্যকার সতর্ক করলেন দর্শক-সমর্থকদের।
বলছিলেন, ‘নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে প্রতিটি ঘোড়া। ’ এমন পরিস্থিতিতে উৎসব আয়োজনে নির্ভার আনন্দ ধারায় ভাসতে আসা দর্শক-সমর্থকরাও যেন খানিকটা সতর্ক দূরত্ব নিলেন। কিন্তু হর্ষধ্বনি আর গগণবিদারী উল্লাস যেন থামছিলোই না।
আধুনিক জীবনে নানা উপাচারের সমারোহে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হারিয়ে যেতে বসলেও এ খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুর উদ্যোগে এমন আয়োজনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন ও পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি। তারা বলছিলেন, বাঙালির চিরায়ত উৎসব পহেলা বৈশাখের ঠিক পরের দিন প্রাচীন গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এ প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।
তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে একই রকম কথা জানান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ অন্য অতিথিরাও।
প্রতিযোগিতায় ১ নং দাপট দৌড়ে প্রথম ইলিয়াস পেয়েছেন একটি ফ্রিজ। দ্বিতীয় আবুল হাশেম ২১ ইঞ্চি কালার টিভি, তৃতীয় বোরহান ১৪ ইঞ্চি কালার টিভি পুরস্কার পেয়েছেন। ১ নং কদম দৌড়ে প্রথম আজাহার, ২ নং কদম দৌড়ে ইসহাক মেম্বার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন কালার টিভি। অতিথিরা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৮
এমএএএম/এইচএ/