চারদিকে সবুজ শ্যামলিয়ায় ঘেরা এক ল্যান্ডস্কেপ। যেখানে দাঁড়ালে চোখে পড়বে অপরূপ এক ক্রীড়াপল্লি।
সার্কিট হাউজ মাঠের পাশে আবুল মনসুর সড়কে এক সারিতে অনেকগুলো ক্লাব। এমন ক্লাবপাড়া গোটা দেশেই বিরল। এতো ক্লাবের সমাহার সার্কিট হাউজ মাঠের মর্যাদা ও সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণে। ময়মনসিংহ জেলাকে বলা হয় ‘সিটি অব আর্ট অ্যান্ড কালচার’। সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহের আরেক গর্ব এর ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়াঙ্গন। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সুইমিং, হকি, কাবাডি খেলায় সারা বছর জমজমাট থাকে ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহের ক্রীড়া চর্চায় সার্কিট হাউজ মাঠ ইতিহাস, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। প্রতিদিনই মুখরতি থাকা এই মাঠ ক্রীড়া অনুশীলন ছাড়াও ক্রীড়ামোদীদের সমাগমে পরিপূর্ণ থাকে।
ময়মনসিংহ উপমহাদেশের প্রাচীনতম জেলা। বর্তমানে বিভাগীয় সদর। ময়মনসিংহ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর সার্কিট হাউজকে ঘিরে এই মাঠের গোড়াপত্তন হয়। তারপরই খেলাধুলার পীঠস্থান হয়ে ওঠে এই মাঠ।
শহরের টাউন হল মোড় থেকে সার্কিট হাউজের রাস্তা। দুটি প্রবেশ পথ। পশ্চিম উত্তরের প্রবেশ পথেই জেলা প্রশাসকের বাংলো। সামনেই সার্কিট হাউজ। তার আগেই মহিলা ক্রীড়া সংস্থার এলাকা। আর পূর্বদিকের রাস্তাটি পার্কস্ট্রিটে গিয়ে মিশেছে। সেখানেই এই ক্রীড়াপল্লি।
স্থানীয় আবুল মনসুর সড়কের এই ক্রীড়াপল্লিতে রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে প্রায় ডজন দুয়েক ক্লাব। এরমধ্যে রয়েছে- পণ্ডিতপাড়া অ্যাথলেটিকস ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ময়মনসিংহ রাইফেল ক্লাব, অসিত মেমোরিয়াল ক্লাব, ফ্রেন্ডস ইলেভেন ক্লাব, কাউন্টি ক্লাব, শেখ কামাল ক্রিকেট একাডেমি, উদয়ন ক্রীড়া চক্র, পুলিশ স্পোর্টিং ক্লাব, মুকুল ফৌজ অ্যাথলেটিকস ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, ময়মনসিংহ ফুটবল একাডেমি, শাপলা ক্রীড়া চক্র, রেনেসাঁ ক্লাব, সূর্যমুখী যুবমেলা অ্যাথলেটিকস ক্লাব, সোনালী অতীত ক্লাব, বৈকালী ক্লাব, সিরাজ মেমোরিয়াল ক্লাব, গুলকিবাড়ি ক্রীড়া চক্র ও আল হেলাল স্পোর্টিং ক্লাব।
জেলা শহরের ক্রীড়া ঐতিহ্য সার্কিট হাউজ মাঠ ছাড়াও জেলা সদরে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়াম। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে নতুন চেহারা পেয়েছে এই স্টেডিয়ামটি। কয়েক ধাপে স্টেডিয়ামটির সংস্কারের জন্য ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
তবে এই স্টেডিয়ামে এখনো আধুনিক গ্যালারি ও প্যাভিলিয়ন নেই। রাতে খেলার জন্য নেই ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা। সর্বশেষ এখানে বিপিএল’র একটি আসর হলেও প্লাস্টিকের চেয়ারের কারণে গ্যালারি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছে। স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে ‘প্রকৃতিকন্যা’খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও গৌরীপুর উপজেলাতেও রয়েছে স্টেডিয়াম। ফলে অতীতের ধারাবাহিকতায় এখানকার ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যতও উজ্জ্বল।
তবে এসব ছাপিয়ে রীতিমতো বিখ্যাত শহরের সার্কিট হাউজ মাঠ। কথিত আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ মাঠে প্রথম খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মাঠেই অনুষ্ঠিত প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলেছেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার জাবেদ ওমর বেলিম গোল্লা, শাহারিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মেহেরাব হোসেন অপিরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের আশ্বাস ছিলো এখানে দুটি ড্রেসিংরুম করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই কথার আর বাস্তবায়ন নেই। ব্রহ্মপুত্র নদে জল অনেক গড়ালেও ড্রেসিংরুম পায়নি সার্কিট হাউজ মাঠ।
রাজনীতি সচেতন ময়মনসিংহে সভা-সমাবেশের জন্য প্রধান স্থান সার্কিট হাউজ মাঠ। রাজনৈতিক ইতিহাসে তাই যেমন এই মাঠের নাম রয়েছে তেমনি সারা বছর খেলাধুলার ক্ষেত্রেও রয়েছে এর অবদান।
এ মাঠের খেলাধুলাকে কেন্দ্র করেই ময়মনসিংহে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্রীড়া সংগঠন। শহরের প্রাচীন এই ক্রীড়া সংগঠন বা ক্লাবগুলোর জন্য সরকার সার্কিট হাউজ মাঠের পূর্ব পাশে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। গড়ে ওঠেছে ক্রীড়াপল্লি।
ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জাহান চৌধুরী শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় শত বছর আগে এই ক্রীড়াপল্লি গড়ে ওঠে। এখানে নগরীর নামিদামি প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোর স্থাপনা রয়েছে। প্রতিটি ক্লাবেরই রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। এসব ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসেছে জাতীয় পর্যায়ের অনেক কৃতি খেলোয়াড়। আজো এসব ক্লাবের জৌলুস হারায়নি।
বিটিভিতে এক সময় ধারাভাষ্যকার হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন গোলাম হায়দার বাদল। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় মাতিয়েছেন ধারাবিবরণী কক্ষে। ক্লাবগুলোকে ঘিরেই ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গণ সরগরম বলেই মনে করেন ষাটোর্ধ্ব এই ভাষ্যকার।
তিনি বলেন, জেলার ক্রীড়ার মানোন্নয়নের ক্রীড়াপল্লির ভূমিকা অনস্বীকার্য। খেলোয়াড়দের প্রতিভা বিকাশে এই ক্লাবগুলোর সাথে সার্কিট হাউজ মাঠের অবদান রয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম দেলোয়ার হোসেন মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই ক্লাবগুলো ঐতিহ্যমণ্ডিত। তবে আক্ষেপের বিষয় প্রায় এক বছর যাবত জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি নেই। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ নানা জটিলতার কারণে শুরু করেও শেষ করতে পারেনি আগের কমিটি।
তিনি বলেন, মাঠের চারপাশে ফুটবল ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোর বাইরেও বিভিন্ন সংগঠনের স্থাপনা রয়েছে। তাদের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হলে প্রথম বিভাগের অনেক ক্রিকেট ক্লাব এখানে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৮
এমএএএম/এমজেএফ