যশোর: দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই গেমসটি গত বছর আয়োজনের কথা থাকলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয় বাংলাদেশের অলিম্পিক খ্যাত এই গেমসের।
তবে উদ্বোধনের প্রথম দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসে তায়কোয়ান্দো ইভেন্টে নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। টুর্নামেন্টে যশোর জেলা অংশ না নিলেও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাম ভাঙিয়ে তায়কোয়ান্দো ইভেন্টে অংশ নিয়েছে ঢাকার লালবাগ তায়কোয়ান্দো ক্লাবের প্রশিক্ষকসহ ৭ খেলোয়াড়।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তায়কোয়ান্দো পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ মিশ্র জয় ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালিউর রহমান বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বাংলানিউজকে বলছেন, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা কোন তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়কে প্রত্যয়নপত্র দেয়নি। তার পরেও এই জালিয়াতির মাধ্যমে যশোর জেলার খেলোয়াড়দের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) আতশবাজির আলোক ঝলকানি, গীতিনাট্য, ডিজিটাল প্রদর্শনী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনালেখ্য অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে পর্দা উঠে বঙ্গববন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভার্চুয়াল মঞ্চে বর্ণিল এই আয়োজনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার কৃতি খেলোয়াড়গণ তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পায়। কিন্তু সফলভাবে উদ্বোধন হলেও উদ্বোধনের প্রথম দিন পর জানা যায় বাংলাদেশ গেমসে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাম ভাঙিয়ে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে ২০২১ এর তায়কোয়ান্দো ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে ঢাকার লালবাগ তায়কোয়ান্দো ক্লাবের প্রশিক্ষকসহ ৭ খেলোয়াড়। তারা যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থা মনোনীত খেলোয়াড় নয়। জালিয়াতির মাধ্যমে তাদেরকে যশোর জেলার খেলোয়াড় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক কমিটির অ্যাক্রিডিটেশন কমিটির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরিত ওই পরিচয়পত্রে তাদেরকে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলোয়াড় উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. বোরহান উদ্দীন, মো. আবিদ বরকতুল্লাহ, মো. সামির হোসেন, আতিকউজ্জামান খান, সাব্বির আহম্মেদ, সিয়াম আহম্মেদ ও মো. আব্দুল আহাদ হিরা।
যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাম ভাঙিয়ে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণকারী ৭জনের কেউই যশোরের বাসিন্দা নয়। অংশগ্রহণকারীদের একজন মো. বোরহান উদ্দীন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের হোম পেজে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি লালবাগ তায়কোয়ান্দো ক্লাবের প্রশিক্ষক। আর তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করা বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে ২০২১ এর পরিচয়পত্রে তাদের যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলোয়াড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ উপলক্ষে কোন চিঠি পায়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এমনকি তারা কোন খেলোয়াড়কে অংশগ্রহণের প্রত্যয়নপত্রও দেয়নি। এ ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তায়কোয়ান্দো পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসে জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাকার লালবাগ তায়কোয়ান্দো ক্লাবের প্রশিক্ষক মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনে সাতজনের নামে তালিকা জমা দিয়েছিলাম। আমাদেরকে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলোয়াড় হিসেবে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তায়কোয়ান্দো পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ মিশ্র জয় ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা কোন তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়কে প্রত্যয়নপত্র দেয়নি। বাংলাদেশ অলিম্পিক কমিটি ও বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের কতিপয় ব্যক্তি ভূয়া প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে লালবাগ লালবাগ তায়কোয়ান্দো ক্লাবের প্রশিক্ষকসহ ৭জন খেলোয়াড়কে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলোয়াড় দেখিয়ে বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে। আর যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব কবীর বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে আমরা কোন টিম পাঠাইনি। আমাদের কাছে চিঠিও আসেনি। যদি কেউ যশোর জেলার নামে অংশ নেয়, তবে সেটি জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে। এই জালিয়াতির সাথে যশোরের ক্রীড়া সংস্থার কোন যোগসূত্র নেই বলে তিনি দাবি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২১
ইউজি/এমএমএস