রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছে বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ (শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, ববি), অনন্ত জলিল পরিচালিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ (অনন্ত, বর্ষা), সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘হানিমুন’ (বাপ্পি, মাহি) এবং মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ (নিপুণ, বাপ্পি, ববি, আদনান আদি)। এসব ছবি নিয়ে মন্তব্য করার জন্য বাংলানিউজের বিনোদন বিভাগে ৫ আগস্ট আহ্বান জানানো হয় পাঠকদের কাছে।
নকল ছবির ঈদ
মারুফ কিবরিয়া (চলচ্চিত্র সাংবাদিক)
বাংলা চলচ্চিত্রশিল্প মানেই নকল ছবির তৈরির কারখানা। আমরা একটি ভালো ছবির আশায় সিনেমা হলে যাই। কিন্তু ছবি দেখতে বসলেই মনে প্রশ্ন জাগে, কেনো টাকা দিয়ে টিকিট কাটলাম? বাসায় বসে পায়ের ওপর পা রেখে নিজের কম্পিউটারে পড়ে থাকা তামিল, তেলেগু, বলিউড কিংবা হলিউডের ছবিগুলো দেখলেই তো পারতাম। কথাটা বলার পেছনে অবশ্যই যুক্তি রয়েছে। এখন সিনেমা হলে গেলেই এসব ছবির নকল দেখতে পাই আমরা। নকলের দৌড় যেন থামছেই না।
এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনয় করেছেন অনন্ত জলিল। তার ছবি এর আগেও ভালো ছিল, এবারও তা-ই হয়েছে। ছবিটির গল্প, নির্মাণশৈলী সবকিছুর মধ্যে নতুনত্ব রয়েছে।
‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ ছবির মাধ্যমে শাকিব খান প্রযোজনায় এসেছেন। তবে নকলের বিতর্ক এবারও বোধহয় তার পিছু ছাড়বে না। ভারতের তামিল ছবি ‘রেবেল’, ‘মিরচি’ ও ‘নায়ক’ ছবির গল্প নিয়েই ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ তৈরি হয়েছে। ছবিতে নতুনত্বের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার ছিটেফোঁটাও ছিল না। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ ছবিতে অভিনয় করেছেন বাপ্পি, ববি ও নিপুণ। ছবিটিতে ‘অশ্লীলতা’ ও ‘নকল’ দুটোই রয়েছে।
‘ব্যাটল রাজা’ ও দক্ষিণ ভারতের ‘রাচ্চা’ ছবির গল্প চুরি করে তৈরি হয়েছে বাপ্পি ও মাহি অভিনীত ‘হানিমুন’। এভাবে আর কতকাল আমাদের চুরি করা গল্পের ছবির দেখতে হবে বলতে পারেন?
নামের সঙ্গে কাহিনীর মিল নেই
ইমরান হোসেন (চাকরিজীবী)
'হিরো দ্য সুপারস্টার' ছবিতে নায়ক শাকিব খানের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় ভালো লেগেছে। কিন্তু কাহিনী আগের মতোই। অপু বিশ্বাস ও ববির উপস্থাপনা আরও ভালো হতে পারতো।
'মোস্ট ওয়েলকাম টু'র কয়েকটি গান কলকাতার ছবির গানের হুবহু নকল। যদিও গানগুলো ভালো লেগেছে। অনন্ত জলিলের ছবি নিয়ে আমাদের দর্শকদের মধ্যে অনেক সমালোচনা হয়। তবে এসব দেখার আগ্রহও থাকে অনেকের। এবারের ছবির কাহিনী উন্নত হলেও সামঞ্জস্যতার অভাব ছিল। বিদেশি ছবিতে স্পেশাল ইফেক্টস নিয়মিত দেখে থাকলে এ ধরনের স্পেশাল ইফেক্টসকে মেকি মনে হয়।
'হানিমুন' ভারতীয় তামিল ছবির অনেকাংশই নকল। নায়ক (বাপ্পী) ও নায়িকার (মাহি) রসায়ন এবং ক্লাইম্যাক্স ভালো লেগেছে। কিন্তু ছবির নামের সঙ্গে কাহিনীর কোনো মিল নেই।
'আই ডোন্ট কেয়ার'-এ পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন কৌশলে ববির নগ্নতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চেয়েছেন। ছবিটিতে অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভিনয় মন কাড়েনি। তবে কাহিনী মোটামুটি ভালো।
দর্শক লুফে নেয়
তাশফী মাহমুদ (ছাত্র)
প্রতি বছর ঈদে নতুন ছবি দেখি, এবারও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। চাঁদরাতে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে 'মোস্ট ওয়েলকাম টু'র টিকেট কাটতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম, টিকিট নেই। পরদিন ঈদ। এদিন গিয়ে অবশেষে টিকিট পেলাম, তা-ও মাত্র তিনটি! এতোদিন টিভিতে বাস-ট্রেনের টিকিট নিয়ে হুড়োহুড়ি দেখতাম, এখন নিজের চোখেই সিনেমার টিকিট নিয়ে সেটা দেখলাম।
ছবিটির মান, কাহিনী, গান আর অনন্তর উচ্চারণ ও অঙ্গভঙ্গির অনেক উন্নতি হয়েছে। বর্ষার অপ্রত্যাশিত মারামারিগুলো চমক হিসেবেই ছিলো। সিনেমা দেখে বের হয়ে সবাই একবাক্যে বলেছেন, এরকম সিনেমা দেখে দর্শকের পয়সা উসুল না হয়েই পারে না।
অবশ্য অনেক আগে থেকেই অনন্ত জলিলের 'মোস্ট ওয়েলকাম টু' আর শাকিব খানের বহুল আলোচিত ছবি ‘হিরো দ্যা সুপারস্টার’ নিয়ে সিনেমা বাজার গরম ছিলো। কিন্তু ঈদের দিনই সেই অঘোষিত যুদ্ধে অনন্ত জলিলের ছবিটি একরকম নিরঙ্কুষ বিজয় লাভ করে।
'হিরো দ্য সুপারস্টার' নিয়ে বলি। বিদেশে চিত্রায়নের মিথ্যা তথ্য দিয়ে দর্শকদের প্রতারণা করার পাশাপাশি ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া তেলেগু ‘রেবেল’-এর পুরো কপি পেস্ট ধরে ফেলা এখনকার দিনের দর্শকদের কাছে সময়ের ব্যাপার ছিলো।
এ ছাড়া অশ্লীল পোস্টার বানিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাতে সামিল ছিলো 'আই ডোন্ট কেয়ার'। আর তরুণ জুটি মাহি-বাপ্পির 'হানিমুন' নতুনধারার সতেজ সিনেমা বানানোর যাত্রায় আরেকটি সুস্থ প্রয়াস। এতোসব বিচারে 'মোস্ট ওয়েলকাম টু' আর 'হানিমুন'কে এবারের ঈদের সিনেমার দৌড়ে এগিয়ে রাখবো।
সময় ও ভালো বাজেট দিয়ে যত্ন করে মৌলিক কাহিনী নিয়ে ছবি বানালে দর্শক তা লুফে নেয়, এর প্রমাণ 'মোস্ট ওয়েলকাম টু' আর 'হানিমুন'। আর এখনকার ইন্টারনেটের যুগে দর্শককে বিদেশি সিনেমার কপি-পেস্ট বানিয়ে দেখালে দর্শক তা কীভাবে বর্জন করে, সেটা এ ঈদেই দেখা গেছে।
অভিনয় একেবারে সাদামাটা
শাহীন আহমেদ
'মোস্ট ওয়েলকাম টু' মোটামুটি ভালো। যদিও অনন্তর অভিনয় শুধু হাসায়। গানগুলো আগের মতো এতো ভালো না। দৃশ্যধারণের স্থান ভালো।
'হিরো দ্য সুপারস্টার' তামিল হিরো প্রবাস অভিনীত 'দ্য রেভেল'-এর রিমেক। শাকিব খানের অভিনয় ভালো। গান আর লোকেশনও ভালো।
'হানিমুন' তামিল নায়ক রামচরণের 'বেটিং রাজা'র রিমেক। বাপ্পির অভিনয় একেবারে সাদামাটা। মনে হয় জোর করে অভিনয় করানো হয়েছে তাকে।
'আই ডোন্ট কেয়ার' একটি জগাখিচুড়ি ছবি। এটাকে 'হিরো দ্য সুপারস্টার'-এর কপি বলা যায়। বাপ্পি সেই আগের মতোই এলোপাতাড়ি অভিনয় করেছেন। তাকে চকোলেট খাইয়ে বোধহয় বলা হয়েছে মরিচ খাওয়ার অভিনয় করতে!
হলিউড বা বলিউডের ছবি দেখছি
সাথী (গৃহিণী)
কিছু নায়ক আগে মুনমুনের সঙ্গে ছবিতে কাজ করতেন। এখন দেখি তিনিই আবার ভালো ছবিতেও আছেন। হাসি লাগে এই ভেবে, টাকা থাকলে সবই পারা যায়। তবে অনন্ত জলিল একটু আলাদা ছবি বানান যা অন্যরা পারেন না। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ ছবিটা দেখে ভালো লেগেছে। আর মনে হয়েছে আমি হলিউড বা বলিউডের ছবি দেখছি।
আমরাও পারি
রব্বানী (ছাত্র, এআইইউবি)
আমার মনে হয়, ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ ছবিটি সবচেয়ে বেশি সফল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মানুষ টিকিট কেটেছে। এটা শুধু এ ছবির ক্ষেত্রে হয়েছে। অনন্ত জলিলের আলাদা একটা ভাবমূর্তি আছে, যেটা অন্য কারও নেই। শাকিব খানের কথাই বলি, তিনি তো একসময় মুনমুন-ময়ূরীর নায়ক ছিলেন, তাই না? এখন এসেছেন ভালো মানুষ সাজতে! বাংলাদেশে নির্মিত অসাধারণ একটা ছবি ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’। অনন্ত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। আমি মনে করি, তিনি চ্যালেঞ্জে উতরে গেছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের ছবি হতে পারে তা কিছুদিন আগেও ভাবা কঠিন ছিল। বিশেষ করে মারধর, নাচ, চিত্রগ্রহণ, স্পেশাল ইফেক্টস সব শাখাতেই অনন্ত দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরাও পারি।
এগুলো কি বাংলা ছবির নাম?
মনির বিন জসিম উদ্দীন
ঈদে তো বাংলা কোনো ছবি মুক্তি পায় নাই! সব হলিউডের ছবি মুক্তি পাইছে! ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’, ‘হিরো দ্যা সুপারস্টার’, ‘হানিমুন’, ‘আই ডোন্ট কেয়ার’- এগুলো কি বাংলা ছবির নাম? আমরা জাতি হিসেবে নিজেদের বাঙালি দাবি করি। কিন্তু কাজে কর্মে এর ধারেকাছেও নাই।
দুঃখের কথা কি বলবো!
শাহীন আলম
ওইদিন যমুনা ফিউচার পার্কে ১২০০ টাকা দিয়া দুটি টিকিট কিনলাম অনন্ত জলিল ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ দেখার জন্য। দুঃখের কথা কি বলবো! ছবিটা অর্ধেক দেখেই বের হয়ে গেছি। কারণ টাকা নষ্ট করেছি না জেনে। কিন্ত সময় তো আর নষ্ট করা যায় না। দিনটাই মাটি হয়ে গেলো।
ঈদের জন্য যুতসই
আখলিদ আল হাসান (ছাত্র, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)
আমার মতে ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ খুব সুন্দর ছবি। এর দৃশ্যধারণের স্থান, গান আর মারামারি খুবই ভালো। হলিউড ও বলিউডের অ্যাকশন কাহিনীর মতো এটি। ঈদের জন্য এটা যুতসই ছবি।
বাংলাদেশ সময় : ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৪