ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

ব্রাঞ্জেলিনার বিয়ের সফর

আফসানা রীপা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৪
ব্রাঞ্জেলিনার বিয়ের সফর ব্রাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

নীল নয়না অ্যাঞ্জেলিনা জোলি যে তার ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে মাতাল করে রেখেছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে। নয় বছর আগে তার এমন রুপে মুগ্ধ হয়েছিলেন হলিউড অভিনেতা ব্রাড পিট।

সেই শুরু প্রেমের। আজও দুজনে একে অন্যের সুখ দুঃখের সাথী। এযাবতকালের হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি তাদেরই। দীর্ঘ নয় বছর একই ছাদের নীচে থাকার পর গত ২৩ আগস্ট অবশেষে শাদি কা লাড্ডু খেয়েই ফেললেন দু’জন। তাদের এই নয় বছরের প্রেমের সফর নিয়ে আজকের আয়োজন।

শুরুটা করা যাক তাদের প্রথম দেখা থেকে। ২০০৫ সালে ‘মি. এন্ড মিসেস. স্মিথ’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে প্রথম পরিচয় হয় দুজনের। একসঙ্গে অভিনয় করতে করতেই পিটের মনে বাসা বাঁধেন জোলি। পিট নিজে স্বীকার করেন যে তিন জোলির প্রেমে পড়ে গেছেন। সেসময় ব্রাড পিটের ঘরণী ছিলেন জেনিফার অ্যানিস্টন। কিন্তু ঘরণী আছে তো কি হয়েছে মন তো পড়ে আছে সেই নীল নয়নার কাছে। ব্যাস আলাদা হয়ে গেলেন দুজন। এরপর সবার সামনে জেনিফার তার ঘরভাঙ্গার জন্য দায়ী করেন জোলিকে। কিন্তু এতো সহজ? এমন অভিযোগ থেকে সোজা মুখ ঘুড়িয়ে নেন তিনি। এমনকি পিট ও জোলির শুভাকাঙ্খীরা মনে করেন এমন অভিযোগ সত্যি নয়। আসলে ভাগ্যই তাদের ঠিক করে রেখেছিলো।

সব অভিযোগ আর গুজবকে উড়িয়ে দিয়ে জোলি ও পিট শুরু করেন তাদের নতুন জীবন। সেসময় তারা দুজনেই খুব জনপ্রিয় তারকা। নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন আর নতুন নাম দেবেননা তা কি হয়? তাই দুজনের নাম মিলিয়ে রাখলেন ব্রাঞ্জেলিনা। এই নামে ভক্তদের কাছে পরিচিতিও পেলেন খুব দ্রুত। এমনকি নামটি এতোটাই জনপ্রিয় হলো যে, টম ক্রুজ ও কেটি হেমসের ‘টমক্যাট’ ও বেন অ্যাফ্লেক ও জেনিফার লোপেজর ‘বেনিফার’ নামকে পিছনে ফেলে দিলো।

পিটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে ২০০২ সালেই জোলি তার প্রথম সন্তান ম্যাডোক্সকে দত্ত নিয়েছিলেন। সেসময় তার স্বামী ছিলো অভিনেতা বিলি বব থর্নটন। এরপর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পিটের সঙ্গে যখন তার প্রেম চলছে তখন দত্তক নেন আরো দুটি সন্তান তাদের নাম জাহারা ও প্যাক্স। আর শিলো, নক্স ও ভিভিয়েন জোলি-পিটের নিজ সন্তান। সবমিলিয়ে ছয় সন্তান নিয়ে তাদের সুখের সংসার এখন।

ঘর ছিলো ঘর আলো করা ফুটফুটে সন্তানও ছিলো শুধু ছিলোনা সামাজিক স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি স্বরুপ সাত বছর পর ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল পিট-জোলি তাদের বগ্দানের কথা ঘোষনা করেন। জাকজমকপূর্ন ভাবে নয় একদম ঘরোয়াভাবেই আংটি বদলের পর্বটা সেরেছিলেন এই যুগল।

এরপর কেটে গেছে আরো দুটি বছর কিন্তু বিয়ের কোনো ঠিক ঠিকানা ছিলোনা। হঠাৎ করেই ঘোষনা করলেন ইতালিতে তারা তাদের স্বপ্নের বিয়েটা খুব শিগগিরিই করতে যাচ্ছেন। শুধু কি তাই বিয়েতে নাকি গান গাইবেন বিয়ন্সে নোয়েলস ও জে-জি। কিন্তু ওই শেষ আর কোনো খবর নেই। দুজনেই ইতি মধ্যে ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলেন ‘বাই দ্য সী’ ছবিটি নিয়ে। দীর্ঘ নয় বছর পর একসঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন দুজনে। আর এই খবরের নীচে চাপা পড়ে গেলো তাদের বিয়ের খবর। ছবিটি নাকি তাদের স্বপ্নের ছবি। অনেক দিন ধরেই এমন একটি ছবিতে কাজ করতে চাইছিলেন দুজন। পুরোদস্তুর প্রেমের ছবি। ছবিতে দুজনকে খুব অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেখা যাবে। ঘরের প্রেম পর্দায় বলে যাকে।

সবাই যখন তাদের ছবির খবর নিয়ে বুদ ঠিক সেসময়ই চুপিসারে করে ফেললেন বিয়েটা।
ইতালিতে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু বিয়েটা করেন ফ্রান্সে। ২৩ আগস্ট নিজেদের বাড়িতে একদম ঘরোয়া পরিসরে পিট ও জোলি বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়েন। অনুষ্ঠানে শুধু পরিবারের আত্মীয় স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবরাই উপস্থিত ছিলেন। বিয়েতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো তার ছয় সন্তানই। তাদের মাঝে ম্যাডোক্স ও প্যাক্স মায়ের সঙ্গে বিয়ের মঞ্চ পর্যন্ত হেঁটেছে। জাহারা ও ভিভিয়েন মা-বাবার ওপর ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়েছে। আর শিলো ও নক্স বিয়ের আংটি বহন করেছে।

সবচেয়ে অদ্ভূদ বিষয়টি হলো এতোটাই গোপনে বিয়ে করেছিলেন তারা যে জোলির বাবা অভিনেতা জন ভযেটও জানতেননা। তিনি বলেছেন বিয়ের পর নাকি মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেননা। তবে মেয়ের বিয়ের কথা জেনে খুব খুশি হয়েছেন তিনি।

জোলি ও পিট দুজনেই সবসময় ছেলে মেয়দের প্রাধান্য দেন। বিয়েটাও একদম তাদের পছন্দ সই ভাবেই করেছেন। বিয়েটা হবে বিয়ের পোশাকটা কেন হবেনা। হ্যাঁ বিয়েতে জোলি যে ওড়না পড়েছিলো তাতে বিভিন্ন ধরনের ড্রইং করা ছিলো। যেগুলো তার ছয় সন্তানের হাতের। এছাড়া তার বিয়ের গাউনটি নকশা করেছিলো অ্যান্টেলিও ভার্সাসের লুইগি মেসি।

বিয়ের পর পরই আবার উড়াল দিয়েছেন মাল্টা দ্বীপে ‘বাই দ্য সী’ ছবির শুটিংয়ের জন্য। সেখান থেকেই মধুচন্দ্রিমার জন্য ছয় সন্তান সমেত চলে গেলেন মাল্টার পাশের একটি দ্বীপ গজোতে। মধুচন্দ্রিমা নিয়ে পিট-জোলি বলেছেন এটাকে তাদের কাছে হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে। দুজনের মতে ‘বাই দ্য সী’ ছবিটির শুটিং করতে গিয়ে দুজনেই হাপিয়ে উঠেছিলেন। তাই একটু চমকদার বিরতির দরকার ছিলো। আর বিয়ের চেয়ে ভালো চমকদার কিছু খুজে পাচ্ছিলেননা দু’জনে। তাই হুট করেই করে ফেলেন বিয়েটা। আর এসবের মাঝে মধুচন্দ্রিমাটা নাকি একটু বেশিই মজার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

কিন্তু এই হাস্যকর মধুচন্দ্রিমাকে আরো বেশি মধুর করতে খরচা করলেন ২ লাখ মার্কিন ডলার। দু’জনই হলিউডের প্রথম সাড়ির তারকা দম্পতি খরচটা তো হবেই এআর নতুন কি! নতুনত্বটা হলো যে খরচাটা নিজেদের জন্য নয় পুরোটাই স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের জন্য হয়েছে। হানিমুনটা যাতে নির্ঞ্ঝাটে কাটাতে পারেন সেজন্য তাদের এই পরিমান টাকা দিয়েছেন যেন তারা দ্বীপটি ছেড়ে কিছুদিনের জন্য দুরে চলে যায়। এতে রাজিও হয়েছে তারা। শুধু তা-ই নয় নতুন ছবির বাকি কাজটা সেখানেই সেড়ে ফেলতে চাইছেন দুজনে। এখন অপেক্ষা এই নব দম্পতির নতুন ছবি দেখার।

বাংলাদেশ সময় : ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ