তিনি ভাটির মানুষ। সেখানে কালনী নদী বয়ে গেছে ধীরে।
‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ কে না শুনেছে? যদি গাওয়া হয় ‘বসন্ত বাতাসে সইগো’ অথবা ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু’, কানে যদি ভাসে ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’- তখন আসলে একটা মুখ ভেসে ওঠে। ছিপছিপে গড়নের একটা মুখ। ভাঙ্গা চোয়াল, পেছনে শুদ্র লম্বা চুল, হাতে দোতারা। মনে হয়, মৃদু স্বরে তিনি গাইছেন ‘কেমনে ভুলিবো আমি’।
ভোলা তো যায় না তারে। সেই যে ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি চলে গেলেন, সুনামগঞ্জের উজানধল গ্রামে তার পায়ের ছাপ পড়লো না আর- তাতে কী? এক শাহ আব্দুল করিম কোটি কোটি উচ্চারণে পৃথিবীকে জানান দিয়ে চললো, ‘তিনি আছেন, তিনি আছেন’।
শাহ আব্দুল করিম কি শুধু প্রেম-বিরহের কথাই বলেছেন? অন্যায়-অবিচার, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতায় স্বোচ্চার ছিলো তার গান। শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেয়ালা সব ধরণের বাউল গানের চর্চা করে গেছেন তিনি।
ভাটি অঞ্চলের দারিদ্র্য তাকেও ছাড়েনি। শক্ত হাতে ধরেছেন লাঙ্গলের ফলা। বিজ বুনেছেন। মাটি ফুঁড়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এসেছে ফসলের বন্যা।
শাহ আব্দুল করিমের গানের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। বাংলা একাডেমি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছে ১০টি গান। বেরিয়েছে ৬টি গানের বই- আফতাব সঙ্গীত, গণসঙ্গীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে ও দোলমেলা।
বছর ঘুরে ১২ সেপ্টেম্বর আসবে বারবার। আসবে শনিবার সকাল ৭টা ৫৮মিনিট। যুগ পাল্টাবে, কমে যাবে কালনী নদীর স্রোত- রয়ে যাবেন শাহ আব্দুল করিম। বাতাসে ভেসে বেড়াবে তার গান, তার সুর।
শাহ আব্দুল করিম ভাটির পুরুষ, গানের পুরুষ, প্রাণের পুরুষ। ১২ সেপ্টেম্বর প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি বাংলানিউজের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪