আমির বরাবরই অন্যরকম খান! চিত্তাচাঞ্চল্য তৈরি করে ছবি বেচার চেয়ে গল্প ফেরি করতেই যেন তার বেশি আনন্দ। তিনি মনে করেন, দর্শকের পছন্দ বদলাচ্ছে।
‘পিকে’ শব্দটা বললে প্রথমেই ওঠে আমিরের প্রথম নগ্ন পোস্টারের কথা। শুধু সেকেলে একটি রেডিও দিয়ে নিজের লজ্জা ঢেকে রেখেছিলেন তিনি। এ নিয়ে সোরগোল থামেনি এখনও। মামলাও হজম করতে হয়েছে তাকে। ৪৯ বছর বয়সী এই সুপারস্টার কিন্তু ভাবতেই পারেননি এতোটা হইচই হবে। তার কাছে ওটা ছবির একটি মুহূর্ত মাত্র। তিনি বলেছেন, ‘ছবিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ওটা। ছবি দেখলে পোস্টারকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন সব দর্শক। ছবি বেচার জন্য ইচ্ছাকৃত কিছু করিনি। যেটা দরকার ছিলো সেটাই করেছি। ’
নগ্ন হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে মোটেও স্বস্তি পেতেন না আমির। তবে ‘পিকে’র চিত্রনাট্য পড়ার পর তার চিন্তাধারাই বদলে গেছে। সেটা কী রকম? শুনুন তার মুখেই, ‘আমরা যখন জন্মাই তখন তো আমাদের পরনে পোশাক থাকে না। প্রকৃতি ওভাবেই আমাদের পাঠায়। পোশাক তৈরি করেছে মানুষ। ’
শচীন টেন্ডুলকারের জন্য ‘পিকে’র বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন আমির। ছবিটি দেখে লিটল জিনিয়াস বলেছেন, ‘এটাই আমার দেখা সেরা ছবি। ’ সবার আগে ছবিটি দেখেছেন আমির। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমবার ‘পিকে’ দেখে তিনি নিজেই মজা পেয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘পিকের একটা বার্তা আছে সমাজের প্রতি, তবে সেটা মজার মজার ঢঙে উপস্থাপন করা হয়েছে। ’
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর পর আবার রাজকুমার হিরানির পরিচালনায় কাজ করলেন আমির। তার মতে, ‘পিকে’র আসল খুঁটি রাজু হিরানি। তিনি বলেন, ‘আমাকে এই ছবি থেকে সরিয়ে দিলেও দিতে পারেন। কিন্তু রাজু না থাকা মানে ছবিটাই বৃথা! এটা পুরোপুরি তার ছবি। ’
আমির-রাজু জুটির ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছিলো ভারতের প্রথম ২০০ কোটি রুপির অভিজাত ক্লাবের সদস্য। ছবিটিতে কারিনা কাপুরের সঙ্গে আমিরের একটি চুম্বন দৃশ্য ছিলো। কিন্তু সেটাকে প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়নি। সেই প্রসঙ্গ টেনে আমির বলেছেন, ‘বিতর্ক সৃষ্টির ইচ্ছা থাকলে তখনই এটা পারতাম। কিন্তু চুমুটি একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। তাই ব্যবহারও করিনি। কিন্তু ‘পিকে’র পোস্টারে আমার নগ্ন দৃশ্যটা ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ। ’
আমির বলেই রেখেছেন, ‘পিকে’ই তার জীবনের সবচেয়ে জটিল চরিত্র। সেটা কেমন? ‘এই চরিত্রটা নিমিষে ভোল বদলায়। দুঃখের মুহূর্ত থেকে এক লহমায় হাসির ভুবনে চলে যায় সে। ক্যারিয়ারে অনেক কঠিন চরিত্রে কাজ করেছি, কিন্তু পিকের তুলনায় সেগুলো কিছুই নয়। ’
ছবিটিতে আমিরকে দেখা যাবে ভিনগ্রহের প্রাণীর চরিত্রে। এতে অভিনয় করতে গিয়ে চরিত্রের প্রয়োজনে অন্যের পরা পুরনো পোশাক গাড়ে জড়িয়েছেন। হাজারটা পান চিবুতে হয়েছে তাকে। অভিনয়ের জন্য বাবার এমন অদ্ভূত সব সামনে থেকে দেখেছে জুনায়েদ (আমিরের প্রথম স্ত্রী রীনা দত্তের ছেলে)। কারণ রাজু হিরানির সহকারী পরিচালক ছিলেন আমির-পুত্র জুনায়েদ। তবে ছেলে বলে বাড়তি সুবিধা পায়নি সে। বাকি সহকারীদের মতোই ব্যবহার করা হতো তার সঙ্গে। বাবার সঙ্গে নয়, সে খাওয়া-দাওয়া করতো সহকারীদের সঙ্গেই।
‘পিকে’র গল্পটা নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি বেশি। আসল মুহূর্তগুলো জেনে গেলে নাকি মজাই চলে যাবে। আমিরের ‘তালাশ’-এর প্লটকে ঘিরে রহস্য ছিলো। কিন্তু মুক্তির প্রথম দিনেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিলো ব্যবসায়। ‘পিকে’র বেলায় আবার তেমনটা হবে না তো? তার ভাষ্য, ‘আমার তা মনে হয় না। পিকের ক্ষেত্রে একই ঘটনা হলে আমি দুঃখ পাবো না। আমার প্রত্যাশার চেয়ে ৪০ শতাংশ পেলে খুশিই হবো। ’
ছবিটিতে আমিরের সঙ্গে দেখা যাবে আনুশকা শর্মাকে। এবারই প্রথম তারা জুটি বাঁধলেন। বারাণসিতে প্রচারণার ফাঁকে বিরাট কোহলির প্রেমিকা আনুশকার জন্য বেনারসি শাড়ি কিনেছিলেন আমির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা দিতে পারেননি তিনি। তার আগেই হারিয়ে ফেলেছেন সেটা।
‘পিকে’ ছবিতে আরও আছেন সঞ্জয় দত্ত, বোমান ইরানি, সুশান্ত সিং রাজপুত। তবে সবাইকে ছাপিয়ে আলো থাকবে আমিরের দিকেই। কোটি অভিনয়শিল্পী থাকলেও ঠিকই আলাদাভাবে বেরিয়ে আসতে সক্ষম তিনি। এজন্যই তিনি অন্যরকম খান!
আমির খানের ছবি মানেই আড়ম্বর ব্যাপার-স্যাপার। ‘পিকে’ তাই ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে ভারতের সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার প্রেক্ষাগৃহে। ভারতের বাইরে এটি দেখা যাবে ৮২০টি প্রেক্ষাগৃহে। ফলে ১০০ কোটির ক্লাবে ‘পিকে’র ঢুকে পড়তে পারে প্রথম তিন দিনেই! তবে এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন আমির। তার মতে, ‘সৃজনশীল মানুষ নম্বরের ফাঁদে পড়লে কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। টাকা রোজগারের জন্য ছবি তৈরি করেই আমাদের সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। ‘তারে জামিন পার’ বানানোর সময় মোটেও মাথায় ছিলো না ছবিটা দিয়ে ব্যবসা করতে হবে। ‘লগান’-এর সময় তো বলিউডের কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছিলো না ছবিটা চলবে। বক্স অফিসের কথা ভেবে কোনোদিন ছবি করিনি। ছবিগুলো ব্যবসা করায় অবশ্যই ভালো লেগেছে। ফর্মূলা মেনে ছবি করার চেয়ে ফর্মূলা ভেঙে কাজ করায় বিশ্বাস করি আমি। ’
এজন্যই ‘পিকে’র মাধ্যমে হলিউডে জনপ্রিয় রেনট্র্যাক নজরদারির ব্যবস্থা করেছেন আমির। ফলে ‘পিকে’ বাস্তবে যত ব্যবসা করবে ঠিক ততোটাই হাজির করা হবে। ফলে ‘পিকে’ বলিউডের প্রথম ছবি যার হিসাব রাখা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। রেনট্র্যাক নামের সংস্থাটি হলিউডের ছবির বক্স অফিসের হিসাব রাখে।
বছরের শেষে এসে দান মেরে দেওয়ার নজির ধারাবাহিকভাবেই দেখাচ্ছেন আমির। বড়দিন মানেই তার ছবি। ‘তারে জামিন পার’ (২০০৭), ‘গজিনি’ (২০০৮), ‘থ্রি ইডিয়টস’ (২০০৯), ‘ধুম থ্রি’ (২০১৩) এর উজ্জ্বল প্রমাণ। বড়দিন মানেই আমিরের সাফল্য। অবশ্য তিনি ছবিতে থাকলেই সেটা বক্স অফিসে হিট হয়ে যায়! কোটি কোটি টাকার ব্যবসা যেন তার বাঁ-হাতের খেল। তবে খুঁতখুঁতেও বটে। এ কারণেই বছরে একটির বেশি ছবি করেন না। কিন্তু এবার তা-ও হচ্ছে না। ভক্তদের জন্য মন খারাপের খবর হলো, ২০১৫ সালে আমিরের কোনো ছবিই নেই! তাই ‘পিকে’র রেশ থেকে যাবে আর দুই বছর ‘পিকেটার’ থেকে যাবেন তিনি!
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
** ‘পিকে’ দেখবেন ফেদেরার
** পুনমিয়া কুশল থেকে ‘পিকে’
** জেলে সঞ্জয়কে ‘পিকে’ দেখাবেন আমির
** ‘পিকে’র পরিচয় উন্মুক্ত হলো
** আনুশকার জন্য বেনারসি কিনলেন আমির
** আমিরের সেই ট্রানজিস্টারটি ঢাকা থেকে চুরি করা!
** অন্যের পুরনো পোশাক পরেই আমিরের অভিনয়
** একদিনে ১০০ পান খেয়েছেন আমির খান