ওপার বাংলার ছবি দেখার প্রতি যাদের আগ্রহ আছে তাদের নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার দরকার নেই। বলছি ওপার বাংলার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথা।
২৯ এপ্রিল, এফডিসি জসিম ফ্লোরের সামনে ৭ নং ফ্লোর। সেখানেই দৃশ্যধারনে ব্যস্ত নির্মাতা অনিমেষ আইচ। তাকে সহযোগিতা করছেন ফয়সাল রাজীব। বাংলানিউজের বিনোদন বিভাগের সাক্ষাৎকার নেবার কথা শুনে অভিনেতা পরমব্রত বললেন, একটি দৃশ্য শেষ হোক তারপরেই দিবো। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে আবারো বলা হলো। কারণ আলো পাবে না আমাদের আলোকচিত্রী নূর। এরপরই একটা দৃশ্যের কাজ শেষ করে পরমব্রত ও পরিচালক অনিমেষ আইচ শুরু করলেন ক্রিকেট খেলা। প্রযোজক সমিতির সামনের ফাঁকা জায়গাতে তাদের খেলা উপভোগ করতে বেশকিছু মানুষ জড়ো হলো। এরপর ছবি ওঠানোর জন্য সময় দিলেন পরমব্রত ও এ ছবির মূল নায়িকা আশনা হাবিব ভাবনা।
সন্ধ্যা ৬টা পর। একটি ঢোলা শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত এ মানুষটি এসে বললেন। দু:খিত এতক্ষন বসিয়ে রাখার জন্য। একটু ক্রিকেট খেলা হলো। বলুন কি জানতে চান। শুরু হলো আলাপন পর্ব।
বাংলানিউজ : আপনি কি ক্রিকেট নিয়মিত খেলতেন ? অার বাংলাদেশের খেলা দেখা হয়?
পরমব্রত : কলকাতায় সময় পেলে শুটিং এর ফাঁকে খেলতে নেমে যায় মাঠে। খেলার জন্য আমার কিছু বন্ধু-বান্ধবের দল আছে। তাদের বাসার সামনে প্রায় সময় এখনও খেলতে যায়। আর বাংলাদেশের সাকিব কলকাতায় তো বড় তারকা। তার খেলা আমার ভীষণ পছন্দ। এছাড়া রুবেলের বোলিংও আমার বেশ ভালো লাগে। এখনকার বাংলাদেশের টিমটা অনেক চমঃকার। কলকাতায় প্রতি মাসের সেকেন্ড সানডে ছুটি পেলে বন্ধুর বাসায় গিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করি।
বাংলানিউজ : আপনার মা সুনেত্রা ঘটক বাংলাদেশের মেয়ে ছিলেন। এখানে কতোদিন পর এলেন? মার কাছে বাংলাদেশের গল্প শুনেছেন কিনা ?
পরমব্রত : মা কখনো থাকেনি বাংলাদেশে তবে দাদী-দিদার কাছে বাংলাদেশের গল্প অনেক শুনেছি। আর বাংলাদেশের মানুষ একে অপরের জন্য এগিয়ে আসে। এটা অনেক বড় গুণ। এটা আমি শুনেছি ও নিজে দেখছি। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো আসা। এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বেড়াতে ছিলাম। আমার মাসী মগবাজার থাকেন। এর আগে এসে এসে চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার ঘুরেছি।
বাংলানিউজ : আপনি ঋত্বিক ঘটকের নাতি। এ নিয়ে নিশ্চয়ই গর্ব হয়?
পরমব্রত : নি:সন্দেহে গর্ব হয়। ওনার রক্ত আমার ধমনীতে বইছে এ জন্য গর্ব হয়। কিন্তু ওটা শুধুই একটা পরিচয়। আমি নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে বেশি পছন্দ করি।
বাংলানিউজ : এপারের ছবি দেখেন?
পরমব্রত : কিছু কিছু ছবি দেখেছি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন‘, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’, প্রয়াত তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবি দেখা হয়েছে। আর অনিমেষ আমাকে তার পরিচালিত ‘জিরো ডিগ্রি’ ছবিটি দেখতে দিয়েছে। এটাও সময় করে দেখতে চাই।
বাংলানিউজ : অভিনেতা হবার ইচ্ছে কি ছিল ?
পরমব্রত : আসলে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। এটা দুর্ঘটনাটাবশত ঘটে। আমার পরিচালনার ইচ্ছেটা সবসময়ই ছিল। এখনও আছে। তবে আস্তে আস্তে অভিনেতা হয়ে বেশি সময় পার করতে হচ্ছে।
বাংলানিউজ : ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?
পরমব্রত : এ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম মুকু। মফস্বল মধ্যবত্তি শহরের ছেলে। বাকীটা পর্দায় দেখুন।
বাংলানিউজ : মতি নন্দী ছোট গল্পটা কি আগে পড়া ছিলো?
পরমব্রত : পড়া হয়নি। এটা করতে গিয়ে পড়েছি।
বাংলানিউজ : এখানে কাজ করে কেমন লাগছে? ভাবনা আপনার কো-আর্টিস্ট। তাকে নিয়ে বলুন ?
পরমব্রত : অনেক ভালো লাগছে। ও অনেক গান জানে, ভালো বই পড়ে ও একজন ভালো নৃত্যশিল্পী। সিনেমাও দেখেছে বেশকিছু। অন্য মেয়ে থেকে আলাদা, অনেক সুইট একটা মেয়ে ভাবনা। এরকম মেয়ের সাথে কাজ করতে এমনি বেশ ভালোলাগে। কথা বলতে ও কাজ করতে বেশ সুবিধা হচ্ছে। শুধুই কেএফসি আর শপিং মল করে বেড়া মেয়ে না ভাবনা।
বাংলানিউজ: প্রিয় খাবার কি ?
পরমব্রত: বাংলাদেশের ইলিশ-খিচুড়ি আমার ভীষণ পছন্দ। আর সাদা ভাত ও খাসির মাংস খেতেও পছন্দ করি।
বাংলানিউজ : অনিমেষ আইচের পরিচালনা নিয়ে কিছু বলুন।
পরমব্রত : অনিমেষ আইচের সঙ্গে প্রথম কাজ হলেও তার সম্বন্ধে জেনেছি। এবং কাজ করে এখন বেশ ভালো লাগছে। অনিমেষের মধ্যে সিনেমা নিয়ে প্যাশন আছে। তাই এ ছবিতে কাজ করতে রাজী হয়েছি। দেখা যাক শেষমেষ কি হয়। আশা করছি, ভালো কিছুই হবে।
বাংলানিউজ : কাজের বাইরে ঘোরফেরা করার ইচ্ছে আছে কি ?
পরমব্রত: অনিমেষ আমাকে ঢাকা শহরের চিত্রের বাইরের শহর ধামরাই (সাভার) এর দিকে নিয়ে যাবে বলেছে। আর আমার মায়ের দিকে দিয়ে রাজশাহীর লোক আমি। তাই পাবনা ও রাজশাহী যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
বাংলানিউজ : কলকাতার অনেক অভিনেতাই ঢাকার ছবিতে নিয়মিত হয়ে উঠেছে। কজন বেশ দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিও করে ফেলেছে। আপনারও তেমন ইচ্ছে আছে কি ?
পরমব্রত: সম্ভবত আমি আমার প্রজন্মের প্রথম অভিনেতা যে পুরোপুরি বাংলাদেশি প্রযোজনার সিনেমাতে কাজ করছে। ওসব নাচ-গাননির্ভর বাণিজ্যিক সিনেমা আমি টালিগঞ্জেও করিনি। এ ধরনের ছবি করতেও চাই না। আর বাংলাদেশের শিল্পী নিয়ে পরিচালনারও ইচ্ছে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫
এমকে