ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

প্রসঙ্গটা চলচ্চিত্র হলেও অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে!

মুরাদ পারভেজ (অতিথি লেখক) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫
প্রসঙ্গটা চলচ্চিত্র হলেও অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে! মুরাদ পারভেজ / ছবি: নূর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রসঙ্গটা চলচ্চিত্র হলেও আমার এই আলোচনা কারও কারও কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতেও পারে! প্রায়ই ফেসবুকে চিঠির মাধ্যমে আমার কাছে অনেকে জানতে চান, বর্তমান চলচ্চিত্রের নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ। আমি তাদের কোনো চিঠির উত্তর দিতে পারিনি কিংবা দিতে চাইনি।

এ লেখার মাধ্যমে তাদের কিছু চিঠির প্রাসঙ্গিক একটা উত্তর শেয়ার করতে চাই। আশা করছি, অন্য চিঠিগুলোরও উত্তর দেবো।

প্রতি বছর কয়েকজন নির্মাতা বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সিনেমা হলে দর্শক আকৃষ্ট করতে চমকের ওপর চমক দিতে থাকেন, সঙ্গে চটকদারি গান এবং লোকেশন। কিন্তু যেটা সবচেয়ে দরকারি সেটার ব্যবহার প্রায়ই অনুপস্থিত থেকে যায়। আর সেটা হলো একটা ভালো গল্প, ভালো নির্মাণ কৌশল। ভালো গল্প না থাকলে দর্শক সিনেমা হলে কেনো যাবে? রসিকতা করে বলা যায়- ঘুমাতে! কিন্তু এই গরমে ঘুমানোর জন্য তো প্রয়োজন ভালো একটু শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, তা-ও তো আমাদের নেই (কয়েকটা সিনেমা হল ছাড়া)। আর চমকের কথা যদি বলি তাহলে একজন পরিচালক এতো অল্প টাকায়, এতো অব্যবস্থাপনায় কিইবা দিতে পারেন? যেখানে এখানকার দর্শকরা আমাদের ছবিতেও হলিউড বা বলিউডের ছবির মান দেখতে চান।

প্রচারেই প্রসার হওয়ার আশায় দর্শককে প্রলোভনের জালে আটকে যা-ও একটু হলে আনা হয়, কিন্তু সিনেমা শেষে দর্শক বিরক্তি প্রকাশ করতে থাকে। সঙ্গে যোগ হয়- ‘আজাইরা প্রচার প্রপাগান্ডা’। আবার তারা হলিউড-বলিউডের হিন্দি ছবিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত হন। ফলে আমরা যারা চলচ্চিত্রকে জীবিকা করে বেচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাদের পেটে লাথি পড়ে। এ যেন এক চরম ‘চক্র’। কোনোভাবেই এর থেকে পরিত্রাণ নেই যেন!

সিনেমাকে ভালোবাসার পর থেকে শুনছি- ‘চলচ্চিত্রের এখন ক্রান্তিকাল’। প্রশ্ন হলো আমাদের এই ক্রান্তিকাল কবে যাবে? জানি উত্তর নেই। দেশের মূলধারার পাশাপাশি বিকল্পধারার যে একটা প্রচেষ্টা রয়েছে এবং পূর্বেও ছিলো, এখন তাদের অবস্থা আরও খারাপ। কিয়দাংশ তার অতীব অল্প টাকায় টেলিফিল্ম নির্মাণ করে ফিল্মের তকমা লাগিয়ে সেন্সর বোর্ডে জমা দেন এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তারপর কোনো একটা টিভি চ্যানেলে বিক্রি করে কিছু টাকা পকেটস্ত করেন এবং এখানেই সিনেমার অগ্রযাত্রা থেমে যায়। বিকল্পধারার যে দুই-একটা সিনেমা ভালো হয় সেগুলো কেবল দেশ-বিদেশে কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শন এবং কিছু পুরস্কার অর্জনে সীমাবদ্ধ। এই দুই-একটা ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রের মতো এতো বড় শিল্পের আদৌ কোনো উপকার হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

দর্শক এখন কনফিউজড এই ভেবে- কোনটা নাটক, কোনটা টেলিফিল্ম এবং কোনটা চলচ্চিত্র! এই নাটক নামক দৃশ্যবস্তুটি যে কীভাবে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জুড়ে গেলো এটাই একটা গবেষণার বিষয়। এখন তাহলে উপায়?

উপায় নেই বন্ধু, উপায় নেই। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার জন্য যেমন কোনো ঘণ্টা অবশিষ্ট নেই, তেমনি নেই কোনো বিড়ালও। বিড়ালরা এখন বন্দি বস্তায়। তারা এখন তাদের স্বাভাবিক ডাকটাও ডাকতে ভুলে গেছে।

বাংলাদেশ সময় : ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ