ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

আবু শাহেদ ইমনের সঙ্গে কিছুক্ষণ

‘বিদেশের চেয়েও দেশে প্রশংসা পাচ্ছি বেশি’

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫
‘বিদেশের চেয়েও দেশে প্রশংসা পাচ্ছি বেশি’ আবু শাহেদ ইমন

বেশ কয়েকটি ভিনদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়ে এবার দেশে মুক্তি পেলো ‘জালালের গল্প’। ছবিটির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন।

এটি তার প্রথম চলচ্চিত্র। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকাসহ দেশের ১৪টি প্রেক্ষাগৃহে এর প্রদর্শনী চলছে। এগুলো হলো- স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, শ্যামলী ডিজিটাল সিনেমা, মধুমিতা, আনন্দ, জয়দেবপুরের বর্ষা, ময়মনসিংহের পূরবী, খুলনার শংখ, পাবনার রূপকথা, চালার সাগরিকা, শেরপুরের রূপকথা, মধুপুরের মাধবী এবং সিরাজগঞ্জের মমতাজ।

ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৌকীর আহমেদ, মোশাররফ করিম, মৌসুমী হামিদ, শর্মীমালা, নূরে আলম নয়ন, মিতালি দাশ, ফজলুল হক, আহমেদ গিয়াস-সহ অনেকে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নবাগত মোহাম্মদ ইমন ও আরাফাত রহমান। সংগীত পরিচালনায় চিরকুট ব্যান্ড। ছবিটি নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আবু শাহেদ ইমন।

বাংলানিউজ : ছবিটিতে তিনটি পর্বে এক নবজাতক, ৮ বছরের এক শিশু ও ২০ বছরের এক ছেলের গল্প বলা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই নাম জালাল এবং নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীর পাড় ধরেই যাদের জীবন সংগ্রাম। জালাল নামটি বেছে নিলেন কেনো? অন্য নামও তো নিতে পারতেন!
আবু শাহেদ ইমন : দর্শককে চরিত্রের সঙ্গে সহজে সম্পৃক্ত করা যায় এমন একটি নাম খুঁজছিলাম। জালাল নামটি আমাদের দেশে অহরহ শোনা যায়। আমি অন্তত জনা বিশেক জালালকে চিনি। নাম বাছাইয়ের সময় তাই জালালের কথাই মনে হয়েছে বেশি।

বাংলানিউজ : জালালের গল্প আপনার মাথায় এলো কীভাবে?
আবু শাহেদ ইমন : ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ফিল্ম স্কুলে পড়তাম। তখন চিত্রনাট্যের ক্লাসে অনেক ট্রিটমেন্ট লিখেছিলাম। তার মধ্যে ‘জালালের গল্প’ একটি। প্রথমে ‘জালালের পিতাগণ’ নামে ছিলো ছবিটির নাম। চিত্রনাট্য লিখার প্রক্রিয়ার পর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু জিনিস পরিবর্তিত হয়, এ কারণে নামটাও পরিবর্তন করি।

বাংলানিউজ : ‘জালালের গল্প’ মোট কয়টি উৎসবে অংশ নিয়েছে এবং পুরস্কার জিতেছে?
আবু শাহেদ ইমন : এ পর্যন্ত ১১টি উৎসবে অংশ নিয়েছে আমার ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বুসান, গোয়া, মন্ট্রিল, আভাঙ্কা, জয়পুর, ফজর, ফিজি ইত্যাদি। আমি উৎসবের পরিমাণের চেয়ে উৎসবের মানের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি সবসময়। ধরুন বুসান, ভারতের গোয়া বা মন্ট্রিল- এগুলো এফআইএপিএফ (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম প্রডিউচার্স অ্যাসোসিয়েশনস) স্বীকৃত। এর মধ্যে গোয়া উৎসব ৪৫ বছর, মন্ট্রিল ৩৭ বছর আর বুসান উৎসব হচ্ছে ২০ বছর ধরে। এসব আয়োজনে পৃথিবীর বড় বড় উৎসবের প্রোগ্রামাররা আসেন। ফিল্ম মার্কেট থাকে। ছবি নিয়ে ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টারের মতো সংবাদমাধ্যম পর্যারোচনা করে। নির্মাতাকে উৎসব আয়োজকরা হোটেল ও উড়োজাহাজ ভাড়া দিয়ে নিয়ে যায়। ছবি নিয়ে দর্শকের সঙ্গে আলোচনা হয়। তাই আমি বরাবরই ভালো উৎসবগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছি। এ কারণে ‘জালালের গল্প’ সংখ্যার চেয়ে মানের বিবেচনায় পৃথিবীর সেরা উৎসবগুলোতে গেছে। প্রথম বাংলাদেশি ছবি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বুসান উৎসবের ‘নিউ কারেন্টস’ বিভাগে। পুরস্কার জিতেছে মূলত তিনটি। জয়পুর উৎসবে সেরা নবাগত নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছি আমি। আর আভাঙ্কা উৎসবে সেরা ছবি হয়েছে ‘জালালের গল্প’, সেরা অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছেন মোশাররফ করিম।

বাংলানিউজ : বিদেশের মতো দেশেও কি ছবিটির জন্য প্রশংসা পাচ্ছেন?
আবু শাহেদ ইমন : আমার তো মনে হচ্ছে বিদেশের চেয়েও দেশে প্রশংসা পাচ্ছি বেশি। বলাকা, মধুমিতা, শ্যামলী বা আনন্দ সিনেমা হলে দর্শকের সঙ্গে রিয়ার স্টলে বসে ছবি দেখেছি। ছবি বানানোর পর অনেকে আমাকে বলেছিলেন, হয়তো সিনেপ্লেক্সের দর্শকদেরই শুধু পাবো। কিন্তু ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ১৪টি প্রেক্ষাগৃহে ছবি যাওয়ার পর থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। নাচ, গান না থাকলেও ছবিটি দর্শকের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ স্থাপন করছে। ঢাকার বাইরের সিনেমা হলগুলোর সেলস রিপোর্ট ভালো। আমাদের দেশের দর্শকের রুচি শুধু ফর্মুলাতে আটকে আছে, একথা আমি এখন মানতে নারাজ। আমার তো মনে হচ্ছে, এ দেশে দর্শকের ভালো গল্পের ছবির প্রতি অনেক আগ্রহ আছে।

বাংলানিউজ : চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে এসে কী ধরনের প্রতিক‚লতার সম্মুখীন হয়েছেন?
আবু শাহেদ ইমন : সত্যি বলতে বাংলাদেশে ছবি নির্মাণ করাটাই একটি প্রতিকূল পেশা। প্রতি মুহূর্তে তাই নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। যেমন, ‘জালালের গল্প’র শুটিংয়ের সময় দেশে রাজনৈতিক অস্তিরতা চলছিল। আমাদেরকে গাছের গুড়ি সরিয়ে, ব্যারিকেড দেওয়া রাস্তা পেরিয়ে, শুধু মধ্যরাতে শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে চলাফেরা করতে হতো। তবে এসব থাকবেই। এ দেশে যেখানে মৌলিক চাহিদারই সংকট রয়েছে, সেখানে শিল্প তো সঙ্কটে থাকবেই।

বাংলানিউজ : নতুন ছবির কথা ভেবেছেন?
আবু শাহেদ ইমন : নতুন বেশ কয়েকটি ছবির ভাবনা আছে মাথায়। নাম বা বিষয়বস্তু এখনই বলতে চাচ্ছি না। এটুকু বলতে পারি, ‘জালালের গল্প’ নিয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখছি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে যাচ্ছে ছবিটি। আগামী কয়েকদিনের ভেতরেই আমরা সেগুলো জানাবো। আন্তর্জাতিকভাবে ছবি শুধু পুরস্কার আর স্বীকৃতি আনলেই হবে না, প্রযোজকের জন্য পয়সা আনতে হবে। আমি এই নীতিতে বিশ্বাসী। বাইরের দেশে আন্তর্জাতিক ছবির এক বিশাল বাজার আছে। ডিভিডি, টিভি, ইন্টারনেটে ভিডিও-অন-ডিমান্ড বা সিনেমা হলে ডিস্ট্রিবিউশন- এমন নানান মাধ্যমে ছবি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব। আমার পরের ছবিটি আরও বড় ক্যানভাসে আরও ভালোভাবে নির্মাণ করতে চাই। প্রথম ছবিতে আমার সামর্থ্যরে মাত্র ৩৩ ভাগ করতে পেরেছি। নিজেকে কেবল পাশ নম্বর দিচ্ছি, ছবিটি শেষ করতে পেরেছি বলে। এর বেশি কিছু না। আমার পক্ষে  আরও ভালো নির্মাণ দেখানো সম্ভব। প্রথম ছবিতে অনেক আক্ষেপ ছিলো আমার। পরের ছবিতে লেটার মার্ক পাওয়ার প্রত্যাশায় এখন থেকেই কাজ শুরু করেছি। এ ক্ষেত্রে সবার আশীর্বাদ প্রত্যাশা করবো।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ