২০১৫ সালে এসেও ‘দুঃসময়’ কাটেনি টিভি নাটকের। ভালো গল্পের সংকট, বাজেটে খরা, বিশৃঙ্খল নিয়ম-নীতিসহ ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক চেষ্টা করেছেন ‘ভালো কাজ’ উপহার দেওয়ার।
এমন নয় যে, এ বছরই টিভি নাটকে ‘টিন এজ’কে প্রাধান্য দিয়ে গল্প বলার চল চালু হয়েছে। বছর কয়েক আগে থেকেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বয়সীদের প্রেম-যাপন-সংকট নাটকের প্রধান চরিত্র হয়ে উঠছে। গুরুত্ব পাচ্ছে আলাদাভাবে। কিন্তু এ বছরটা আলাদা করে বলার কারণ হচ্ছে, বিস্তার পেয়েছে ব্যাপকহারে। অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে এক ঝাঁক নির্মাতা, ক্যামেরাম্যানসহ অন্যান্য কলাকুশলী যারা সবাই বয়সে খুবই তরুণ, যাদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়পর্বও শেষ করেননি এখনও; নাটকপাড়ায় জেঁকে বসেছেন শক্ত অবস্থান নিয়ে। পরিচিতিও তৈরি হয়েছে দর্শকমহলে। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক।
নাম বলতে গেলে তৌসিফ মাহবুব আসবেন প্রথমেই। তার অভিনয়-জীবন শুরু হওয়ার ঘটনা এখনও খুব বেশি পুরনো হয়নি। কিন্তু বেশ পরিচিত। দাপিয়ে কাজ করছেন। প্রশংসিতও হচ্ছেন মাঝে মধ্যে। একই অবস্থা ঈশিকা খানের ক্ষেত্রেও। এ বছরটি তাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে, সেটি ঈশিকা নিজেও স্বীকার করবেন। মিষ্টি হাসি নিয়ে শবনম ফারিয়া দাঁড়িয়ে আছেন তালিকায়। আছে তার ন্যাচারাল অভিনয় দক্ষতা।
এ বছরে কাজ অনেক বেড়েছে অ্যালেন শুভ্র’র। চরিত্রের ভিন্নতাও আনতে পেরেছেন পর্দায়। সাবিলা নূরের কথাও উল্লেখ করতে হবে। অভিনয়ে একেবারেই নতুন হিসেবে ফারহান আহমেদ জোভান দৃষ্টি কেড়েছেন মাবরুর রশিদ বান্নাহর ‘ব্রাদার্স’ দিয়ে। এছাড়া পিয়া বিপাশা, সালমান মুক্তাদির, আশা, তানজিন তিশা, শেহতাজের নাম আসলেও অতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেননি এ বছর। দীর্ঘদিন পর্দায় আলোচিত কোনো কাজ নেই টয়ার। ফলে অনেকটাই নিষ্প্রভ তিনি, বলাই যায়। একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি সাম্প্রতিক রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা, অভিনয় করতে আসা মুখগুলো।
টিভি নাটকে এই যে ‘টিন এজ’-এর জয়জয়কার, প্রবণতা হিসেবে এটি ইতিবাচক হলেও, নাটকের মানের হিসেব কষলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফল দাঁড়াবে- ‘অবস্থা শোচনীয়’। ইয়াং-গ্ল্যামারাস গল্প বলতে গিয়ে, অভিনয়শিল্পী হিসেবে যাদেরকে নির্বাচন করা হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই মূলত অভিনয়শিল্পী নন, মডেল। বিজ্ঞাপনচিত্র থেকে উঠে আসা। সেটা সমস্যা নয়। সমস্যা যেটা তৈরি করেছে, সেটি হচ্ছে তাদের ‘অভিনয়-অজ্ঞতা’।
তরুণ অভিনয়শিল্পীদের দু’একজনকে বাদ দিলে, বাকি সবার ক্ষেত্রে বছর জুড়ে প্রধান অভিযোগ- গতানুগতিক অভিনয়। গল্প-চরিত্র বিশ্লেষণে অক্ষমতা, শেখার অনাগ্রহ, রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার ‘লোভ’, অনেকক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা- বিষয়টিকে করে তুলেছে আরও জটিল, আরও সমস্যাযুক্ত। যেটার প্রভাব পড়েছে গোটা টিভি-ইন্ডাস্ট্রিতে। নাটকের দর্শক আরও কমেছে। তরুণ প্রজন্মকে টিভি নাটকে আকৃষ্ট করার যে উদ্দেশ্য নিয়ে জোর দেয়া হয়েছিলো তারুণ্যের গল্পে, সেটাও ব্যর্থ বলা চলে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লাইক-কমেন্টের হার হিসেব করে অভিনয়শিল্পী নির্বাচনের ‘মুর্খ প্রবণতা’টিও কম ক্ষতি করেনি।
বিশ্লেষকরা বলতে চান- ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তা নয়, গ্ল্যামারের বহরও নয়, কেবল অভিনয়-দক্ষতার ওপর জোর দিলেই পর্দায় এবং দর্শকমহলেও তারুণ্য আরও ইতিবাচভাবে, আরও ব্যাপকহারে জোয়ার এনে দিতে পারে। টিভি অঙ্গন পেতে পারে কিছু নির্ভরযোগ্য মুখ, যারা সত্যিকার অর্থেই নাটককে ভবিষ্যতে আরও সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
* শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলানিউজের বিনোদনে পড়ুন :
দেশীয় টিভি নাটকের সালতামামি ২০১৫ (পর্ব ৪) : এগিয়ে নিশো, অপূর্ব রোমান্টিকই, সজল সমান্তরাল
** তিশার প্রতিদ্বন্দ্বী নেই!
** সাবধানী মোশাররফ, জাহিদ গতানুগতিক, মাহফুজের দূরদৃষ্টি
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
কেবিএন
তারার ফুল
টিভি নাটকের সালতামামি ২০১৫ (পর্ব ৩)
বছরজুড়ে ছোটপর্দা তারুণ্য-বান্ধব, কিন্তু…
খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।