ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

সাংবাদিক সুপারম্যানের বীরের মৃত্যু!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৬
সাংবাদিক সুপারম্যানের বীরের মৃত্যু!

ঢাকা: ধ্বংস হচ্ছিলো মেট্রোপলিস শহর। একেকটি ভবন, আর স্থাপনা যখন ধসে চুরমার হচ্ছিলো তখন তারই মধ্য থেকে ছিটকে আসা একটি ইটের টুকরো ঠিক কপাল বরাবর এসে লাগলো।

‘ইশ’ করে শব্দ উঠলো গোটা প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে। প্রত্যেকেই বুঝি নিজ নিজ কপালে হাত দিয়ে নিশ্চিত হলো রক্ত গড়ায়নি। সম্বিত ফিরলো, না এ তো সিনেমা হল। তারা কেউ এখন নন-মেট্রোপলিস শহরে। সবাই বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে। যেখানে যুদ্ধ চলছে সুপারম্যান ও ব্যাটম্যানের মধ্যে। ফলে যা কিছু ঘটছে তা স্রেফ পর্দায়। আর ওই ছুটে আসা পাথর ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির (থ্রি-ডি) কেরামতি।  

ততোক্ষণে দর্শককুল সিনেমায় মজে গেছে। সেখানে জডের শরীরে মন্দ মানুষ লেক্স লুথারের (জেসি আইজেনবার্গ) ডিএনএ দিয়ে সৃষ্ট এক দৈত্য পুরো মেট্রোপলিস শহরটিকে দুমড়ে মুচড়ে ধ্বংস করছে। আর দৈত্যকে ধ্বংস করতে যৌথ মিশনে অংশ নিয়েছে ব্যাটম্যান (বেন অ্যাফ্লেক) ও সুপারম্যান (হেনরি ক্যাভিল)। সঙ্গে ওয়ান্ডার ওম্যান ডায়ানা প্রিন্স।

কাহিনীর বিস্তারে একসময় মরণঘাতী ক্রিপ্টোনাইট অস্ত্র দিয়ে দৈত্যকে মেরে ফেললেন সুপারম্যান। কিন্তু তাতে ধ্বংসের মুখে পড়ে পুরো মেট্রোপলিস। সুপারম্যান নিশ্চিত ছিলেন একমাত্র তার মৃত্যুই রক্ষা করতে পারে মেট্রোপলিসকে। তাই নিজের মৃত্যুই বেছে নেন তিনি। কাহিনীর ক্লাইমেক্সে বীরের মৃত্যু হয় সুপারম্যানের। আর তাতে গোটা শহরে নেমে আসে শোকের ছায়া।
 
পরের দৃশ্যে দেশটির প্রধান সংবাদপত্র ডেইলি প্ল্যানেটের এডিটর ইন চিফ পেরি হোয়াইট নিজের ছাপানো পত্রিকার শিরোনামটি দেখছিলেন। কালো অক্ষরে ব্যানার লিড নিউজ করা হয়েছে ‘আর নেই সুপারম্যান’। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন পেরি হোয়াইট। মানে ওই চরিত্রের অভিনেতা লরেন্স ফিশবার্ন। এই যুদ্ধের রিপোর্ট করতে গিয়ে তার পত্রিকার রিপোর্টার ক্লার্ক কেন্টেরও মৃত্যু হয়েছে। সে সংবাদটিও প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার তৃতীয় পাতার তৃতীয় কলামে।

ভক্তরা সবাই জানে, এই ক্লার্ক কেন্টই হচ্ছেন সুপারম্যান। যদিও কাহিনির বিন্যাসে এডিটর ইন চিফ তথা গোটা মেট্রোপলিসবাসীর কাছে বিষয়টি অজানা। সুপারম্যান একজন সাংবাদিক, তাকে দেখতে বসলে এই কথাটা উৎসাহব্যঞ্জক মনে হয়। সাংবাদিকরাও যে সুপ্যারম্যানের ক্ষমতা রাখেন, তেমন একটা আনন্দ আর কি! মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়ে দিলাম পরিচালক জ্যাক স্নাইডারকে।
 
গত ২৫ মার্চ সারা দুনিয়ায় একযোগে মুক্তি পায় সুপারহিরো নির্ভর এই ছবি- ‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস’। এটি মুক্তির আগে থেকেই কমিকস জগতের এ দুই সুপারহিরোর যুদ্ধ দেখতে মুখিয়ে ছিলো ভক্তরা। চারদিকে কৌতূহলী মনোভাব- কার জয় হচ্ছে এই যুদ্ধে!  
 
শুধু শিশুরা নয়, ডিসি কমিকসের এই সুপারহিরোদের ভক্ত বুড়োরাও। গত ২৫ মার্চ থেকে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স আর ব্লকবাস্টার সিনেমাসেও মুক্তি পায় ছবিটি। ওইদিন সকালেই স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, প্রথম তিন দিনের টিকেট শেষ! অবশেষে এপ্রিলের প্রথম দিনের টিকেট মিললো। এপ্রিল ফুলের সকল শঙ্কা নিয়ে সকাল ১১টায় পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটের শোতে স্থান মিললো রেগুলার সিটে। প্রতিদিন পাঁচটি করে শো হচ্ছে। তারপরও উপচেপড়া ভিড় মানুষের। শিশুদের চেয়ে বড়দেরই চাপ বেশি। থ্রি-ডি ছবি দেখার জন্য চশমা হাতে হলে ঢুকছিলেন দর্শকরা।
 
শুরুতে দুই সুপারহিরোর দ্বন্দ্বের পটভূমি আর তাদের সৃষ্টির ইতিবৃত্ত দেখালেন পরিচালক। এই অংশ কিছুটা ধীরগতির মনে হচ্ছিলো। কমিকসের ভিলেন চরিত্র জেনারেল জোডের সঙ্গে শেষ দ্বন্দ্বের পর থেকে মেট্রোপলিসবাসী সুপারম্যানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করে। এমনকি সিনেটর জুন ফিঞ্চ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সুপারম্যানকে বিচারের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করান। কিন্তু লেক্সকর্প কোম্পানির চেয়ারম্যান লেক্স লুথারের পৃথিবী বিধ্বংসী গবেষণায় ফিঞ্চ সাড়া না দেওয়ায় সেই আদালতকে বোমা ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেয় লুথার।
 
এদিকে পুরনো প্রতিশোধের জের ধরে সুপারম্যানকে মৃত্যুর স্বাদ দেওয়ার সংকল্প নেয় ব্যাটম্যান। নিজের শারীরিক শক্তি ও যান্ত্রিক কৌশল বাড়াতে থাকে সে। সুপারম্যান তার প্রেমিকা সহকর্মী লয়েস লেনের যে কোনো বিপদে উড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে মৃত্যুর হাত থেকে, এটাই তো চেনা চিত্র। তবে এবার সুপার‌ম্যানকে উল্টো ব্যাটম্যানের হাত থেকে রক্ষা করে লেন। তা না হলে ক্রিপ্টেনের তৈরি সবুজ অস্ত্র দিয়ে সুপারম্যানকে নিঃশেষ করে দিতো ব্যাটম্যান!
 
এতো যুদ্ধ, সংঘর্ষ, মারামারির মাঝেও এ ছবিতে প্রেমটা ভালোই জমিয়েছেন পরিচালক। আর মা ও স্ত্রীর মধ্যে পুরুষ কাকে বেশি ভালোবাসে, গুরুত্ব দেয়, সে নিয়ে বিতর্কে একটা নতুন উষ্কানিও রয়েছে এই চলচ্চিত্রে। দেখা গেছে সুপারম্যান সবসময়ই তার ঐশ্বরিক ক্ষমতায় জানতে পারে, প্রেমিকা লেন কোথায় বিপদে পড়েছে। তার কাছে সংকেত আসে আর শেষ মূহূর্তে হলেও ছুটে গিয়ে বান্ধবীকে উদ্ধার করে।

আর মা মার্থা কেন্টকে যখন লুথারের লোকেরা তুলে নিয়ে গেলো তার কোনো সংকেত আসে না সুপারম্যানের কাছে! সুপারম্যান ভক্তদের মনে জিজ্ঞাসা, তাহলে কি মায়ের চেয়ে প্রেমিকার প্রতিই বেশি দূর্বলতা তার?

সুপারম্যান শারীরিক শক্তিতে বলীয়ান আর অন্যদিকে ব্যাটম্যানের ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে কৌশলটাই গুরুত্বপূর্ণ। সুপারম্যানের মাঝে শক্তির পাশাপাশি কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বেশি দেখলে ভক্তদের ভালো লাগতো।

গল্পে কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন সুপারম্যান। এসব সময় লেনের চুমুই তার জ্ঞান ফেরায়। বিষয়টি দর্শকসারির যুগলদের নতুন করে ভাবনা ও প্রয়োগ চিন্তার খোরাক যোগায় বৈকি!   
 
সব মিলিয়ে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের এ ছবির প্রথম দিকের ধীরগতিকে কাটিয়ে তোলে শেষার্ধের উত্তেজনা। আর সুপার হিরোইন ডায়ানা প্রিন্সের চরিত্রে গ্যাল গ্যাডটের বিমানের ফ্লাইট রেখে দৈত্য ধ্বংসের ‍যুদ্ধে দুই সুপারহিরোর সঙ্গে যোগ দেওয়া নতুন মাত্রা আনে ছবিতে। পুরো ছবিতেই রহস্যময়ী ও আবেদনময়ী নারী হিসেবে সৌন্দর্য ছড়িয়েছেন এই জিউসকন্যা।
 
বাংলাদেশে থ্রি-ডি জনপ্রিয় হলেও বিশ্বব্যাপী আইম্যাক্স থ্রি-ডি এবং ফোর ডিএক্স ভার্সনেও চলছে ছবিটি। থ্রিডি গ্রাফিক্স এবং ডলবি সাউন্ডে ছবিটি দেখার সময় নিজেকে ছবির প্লটেই ভাবতে পারে দর্শক। কখনও কখনও মনে হয়, শহরের ধ্বংসস্তুপের ইটের টুকরো এসে শরীরেই পড়লো বুঝি!
 
‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস’ বানাতে খরচ হয়েছে ২৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ১ হাজার ৯৫৯ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা! আর ছবিটি আয় করে ফেলেছে ৫৩ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা চার হাজার ২১৫ কোটি টাকারও বেশি!

এসব নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিসি কমিকস আর পরিবেশনা সংস্থা ওয়ার্নার ব্রাদার্সের পাওনা। একজন রিপোর্টার হিসেবে সেরা পাওনা বলে মনে হচ্ছিলো- সুপারম্যান তো আদতে একজন রিপোর্টার। নিজেকে সুপারম্যান ভাবতে ভাবতেই সিনেমা হল ছাড়লাম। আরও একবার আলতো করে কপালে হাত দিয়ে নিশ্চিত হলাম সত্যিই ইটের টুকরোটি কপালে আঘাত হানেনি!
 
বাংলাদেশ সময় : ১৭১২ ঘন্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৬
এমএন/এমএমকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ