ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: ২০১৪-১৫ অর্থবছরে থাইল্যান্ড বাংলাদেশে ৮৩৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডে পণ্য রফতানি করতে পেরেছে মাত্র ৩২ মিলিয়ন ডলারের।
আকাশ-পাতালসম এই বাণিজ্য বৈষম্য কমানো এবং বাংলাদেশ যে এশিয়ার নতুন অর্থনৈতিক পরাশক্তি হতে যাচ্ছে সেই বার্তা দিতে থাইল্যান্ডে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০১৬।
‘এক্সপিরিয়েন্স এশিয়াস নেক্সট ইমারজিং টাইগার’ স্লোগানে ব্যাংককের কুইন সিরিকিত জাতীয় সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ৩০ মে শুরু হবে তিন দিনব্যাপী এই পণ্য প্রদর্শনীর আসর।
৪৪ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রদর্শনী নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের উচ্ছ্বাস এবং কর্মব্যস্ততার কমতি নেই।
ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী সংগঠনকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের ৬০টি প্রথম সারির শিল্প গ্রুপ এরইমধ্যে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে।
ব্যাংককের সুকুমভিতের আকামাই গলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে দেখা গেছে প্রদর্শনী নিয়ে কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী মুনতাসির মুরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, থাইল্যান্ডের পাঁচ হাজার ট্রেড বডিকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। দূতাবাস থেকে টেলিফোনে সবার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। আলাদা একটি প্রতিষ্ঠানও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শনী আয়োজনের লক্ষ্য কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতিটা বিশাল। আমরা চাই বাংলাদেশে যেসব রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে তাদের পণ্য থাইল্যান্ডে প্রবেশ করুক। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের বাজারটা আরও বিস্তৃত হোক।
‘বাংলাদেশ যে অর্থনীতিতে নেক্সট ইমারজিং টাইগার হতে যাচ্ছে সেটা তো থাইল্যান্ডবাসী জানে না। সেই বার্তাটাও আমরা থাইল্যান্ডবাসীকে দিতে চাই। আগে বাংলাদেশ ৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতো। এখন ৮ মিলিয়ন কমে গেছে। সেটার জন্য অবশ্য থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব আছে। তো সব মিলিয়ে আমরা চাই, আমরা থাইল্যান্ডের বাজারে ঢুকবো,’ বলেন কাজী মুনতাসির মুরশেদ।
দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে মূলত তিনটি পণ্য থাইল্যান্ডের বাজারে নিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে, ওষুধ, তৈরি পোশাক এবং পাটজাত পণ্য।
ওষুধ কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকো, ইনসেপটা এবং স্কয়ার থাইল্যান্ডের বাজারে রফতানির লাইসেন্স পেয়েছে। এর বাইরে আরও যেসব কোম্পানি রফতানি করার উপযোগী ওষুধ তৈরি করে তাদেরও থাইল্যান্ডের বাজারে নিয়ে আসতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
থাইল্যান্ডে তৈরি পোশাক রফতানির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে বাংলাদেশ দূতাবাস আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী মুনতাসির মুরশেদ।
তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের বাজারে ওষুধ রফতানির প্রচুর সুযোগ আছে। একসময় পাটজাত পণ্য বিশেষ করে ব্যাগ প্রচুর পরিমাণে থাইল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতো। আমরা সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে চাই।
৩০ মে সকাল ১০টায় শুরু হবে প্রদর্শনীর বর্ণাঢ্য আয়োজন। থাইল্যান্ডের শিল্পমন্ত্রী অপিরাদি থানত্রাপরন এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।
বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি আগামী ১ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী দু’দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ওয়ান টু ওয়ান মতবিনিময়ের সুযোগও রেখেছে থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস।
প্রথম দিন ৩০ মে তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক ও টাইলস, ফার্নিচার, চামড়াজাত ও পাটজাত পণ্য ব্যবসায়ীরা মতবিনিময় করবেন।
৩১ মে জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজভাঙা শিল্প, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস, আইসিটি ও সফটওয়্যার, ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম, হস্তজাত শিল্প, খাদ্য, পানীয় ও হিমায়িত খাদ্য এবং ভেষজ চা ও খাদ্য ব্যবসায়ীরা মতবিনিময় করবেন।
১ জুন সমাপনী দিনে পলিমার, প্লাস্টিক, মেলামাইন, কাচ, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম, কেমিক্যাল, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ, হসপিটাল ও মেডিকেল, ডায়মন্ড ও জুয়েলারি, কৃষি ও অটোমোবাইল খাতে বিনিয়োগকারীরা মতবিনিময় করবেন।
থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী মুনতাসির মুরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ৬০টি প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ৪০টি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি ২০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো পাঠাবে।
পণ্যের পসরা নিয়ে থাইল্যান্ডে আসছে যেসব প্রতিষ্ঠান
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপোতে ওষুধ নিয়ে আসছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে ইনসেপটা, ওয়ান ফারমা, বায়োফারমা, স্কয়ার ফারমাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং এস-কে এফ বাংলাদেশ লিমিটেড।
তৈরি পোশাকের পাঁচ প্রতিষ্ঠান
প্রদর্শনীতে ঢাকার ব্রাদারস ফ্যাশন লিমিটেড, ওরিয়েন্টাল উল উইয়্যারস লিমিটেড, বান্ডু ফ্যাশন লিমিটেড ও সিনহা নিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং গাজীপুরের টঙ্গীর বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড।
পাটজাত পণ্য নিয়ে আসছে পাঁচ প্রতিষ্ঠান:
পাটজাত পণ্য নিয়ে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আকিজ জুট মিল, সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার এবং বাংলাক্র্যাফট।
জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে আসছে ঢাকার মৌসুমি জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরি ও ময়না টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির।
ইলেকট্রনিকস আইটেম নিয়ে আসছে ঢাকার সুপার স্টার ইলেকট্রিক্যাল এক্সেসরিজ লিমিটেড।
হস্তজাত পণ্য নিয়ে আসছে ঢাকার সান ট্রেড লিমিটেড, টিডিকে (বিডি) লিমিটেড ও ঢাকা হ্যান্ডিক্র্যাফটস লিমিটেড।
ন্যাপকিন, টাওয়েল টেবিল ক্লথ, ফ্ল্যাট শিটসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসছে অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিল লিমিটেড।
জুতা, ব্যাগসহ চামড়াজাত পণ্য নিয়ে আসছে ঢাকার পারুমা সু লিমিটেড, আরএমএম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও পিকারড বাংলাদেশ লিমিটেড। বিশেষায়িত কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে আসছে হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেড।
অ্যালুমিনিয়ামের বিভিন্ন রান্নার সামগ্রী নিয়ে আসছে বিল্ডট্রেড ফয়লস লিমিটেড। খ্যাতিমান প্রকাশনা সংস্থা নিম্ফিয়া পাবলিকেশন নিয়ে আসছে বইয়ের সম্ভার। কোমল পানীয়, চিপসসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য নিয়ে আসছে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।
এ ছাড়া দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরতে বাংলাদেশের বিজনেস কমিউনিটির জন্য রাখা হয়েছে দু’টি স্টল।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
আরডিজি/টিসি