সেবা, সততা আর নিষ্ঠায় আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত। খুলেছেন ট্রেডিং কোম্পানি।
স্ত্রী মর্জিনা লিলিকে নিয়েই গড়ে তুলেছেন বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমদানি, রপ্তানি আর ট্যুরিজম। প্রধান লক্ষ্যই সততায় আর সাশ্রয়ী মূল্যে দেশের মানুষের সেবা দেয়া।
সেলিম জাহাঙ্গীর দম্পত্তির মতে, এটাই আমাদের দেশপ্রেম। সততার সঙ্গে সেবা দেওয়াটাই আমাদের অঙ্গীকার।
যে কারণে নানা ব্যক্তি, পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠানের গ্রুপ ট্যুরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দু'জনকেই ব্যস্ত থাকতে হয় দিনে বা রাতে।
অথচ শূন্য হাতে এসে এদেশে মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকা, জীবন মান উন্নয়ন করা- সব কিছুর নেপথ্যেই কঠোর পরিশ্রম আর সততা। -বলেন সেলিম দম্পতি।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর থানার মালতিডাঙ্গা গ্রামের মৃত ইসমাঈল হোসেনের ছেলে সেলিম জাহাঙ্গীর (৪৯)। পেশায় ছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। দুই ভাই কর্মরত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
তাদের একজন কর্মরত ছিলেন ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসে। তার কাছে বেড়াতেই ১৯৯২ সালে এ দেশে আসেন সেলিম জাহাঙ্গীর।
ইচ্ছে ছিলো, এ দেশ থেকেই ভিন্ন কোন দেশে অভিবাসী হবেন। তবে দেশটির সংস্কৃতি, পরিবেশ আর জীবনযাত্রা ভালো লেগে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন থেকে যাবার। যোগ দেন রপ্তানিমুখী একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানেই কাজ করেন টানা ১৪ বছর।
প্রবাস জীবন। সংগ্রাম ও কষ্ট করেই টিকে থাকতে হয় এখানে।
বাড়তি রোজগারের আশায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবেও কাজ করতেন খ্যাতনামা বামরুনগ্রাড হসপিটালে।
বিয়ের পর ১৯৯৭ সালে স্ত্রী মর্জিনা জাহাঙ্গীর লিলিকেও নিয়ে আসেন এ দেশে।
২০০৬ সালে ২৯/৪৫ সুকুম্ভিটে সয় থ্রী এলাকার জেনিথ সুকুম্ভিট হোটেলের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তোলেন রাইজিং সান ট্রেডিং কোম্পানি লিমিডেট। তারপর থেকে দু'জন মিলেই এগিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। সম্প্রসারণ করছেন ব্যবসার পরিধি।
এমন দিনও গেছে, আমার স্ত্রী বাসায় রান্না করতেন, আর সেই খাবার নিয়ে আমি ছুটতাম এখানে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের ঠিকানায়।
এভাবে আমরা ঘরোয়া পরিবেশ খাবার তৈরি করে তাও পৌঁছে দিয়েছি এখানে আসা বাংলাদেশিদের। আমি রেঁধেছি আর ও কষ্ট করে তা পৌঁছে দিয়েছে নানা ঠিকানায়। আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে ছোট বড় এমন অসংখ্য গল্প রয়েছে- বলেন মর্জিনা লিলি।
নিজেদের অভিজাত ও ব্র্যান্ড নিউ তিনটি গাড়ি দিয়েই বিমানবন্দর থেকে গেস্টদের রিসিভ করে হোটেলে পৌঁছানো, তাদের খাবার দাবার থেকে শুরু করে ঘুরে বেড়ানো- নিখুঁতভাবে ভ্রমণ সেবা দিতে দিনে রাতেই ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের।
আমিও ফোনগুলোকে এমনভাবে সেট করেছি, চার্জ ফুরিয়ে আমার ফোন বন্ধ হয়ে গেলেও যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার স্ত্রীর ফোনে কলটি পৌঁছে যায়। এভাবে আমরা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়েই আজ এই পর্যায়ে।
এ দেশে এসে অনেকেই দেশের মতো আচরণ করেন। যত্রতত্র ময়লা, থুতু, এমনকি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ফেলেন। তারা এটা জানেন না যে এখানে এগুলো অপরাধ। ধরা পড়লো গুণতে হয় স্থানীয় মুদ্রায় দু’হাজার বাথ। আবার অনেকে দেশের কথা, নিজের ধর্ম ও সাংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে যখন শালীনতার সীমা অতিক্রম করেন- বাংলাদেশি হিসেবে তখন আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। কারণ এখানে ভারতীয়দের চেয়ে বাংলাদেশিদের মর্যাদা অনেক বেশি।
এ বিষয়গুলো এখানে আসা পর্যটকদের স্মরণে রাখা জরুরি বলেও মনে করেন সেলিম জাহাঙ্গীর।
সেলিম-মর্জিনা দম্পত্তির দুটি সন্তান। বড় ছেলে রাফি জাহাঙ্গীর পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। ছোট সাফি জাহাঙ্গীর পড়ছে গ্রেড নাইনে। থাই, চীনা ভাষার পাশাপাশি বাংলায় চলে পড়ালেখা, সঙ্গীত চর্চা।
প্রবাসে এভাবেই নিজের দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করে চলেছে এই পরিবার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
জেডএম/
** প্রত্যয় নিয়ে স্বপ্নের সাগরে যেতে চায় নদী
** আকমার আরীবের মনে বাজে "আমার সোনার বাংলা"
** প্রবাসে সংস্কৃতির দূত ফারজানা
** ফুটপাত থেকে কোম্পানির এমডি জামাল ‘পিএসসি
** সন্তানের ছবি দেখেই জামানের কষ্টের নোনা জল মেশে সাগরে
** মেরিনের হাসিমুখে ভাসে মমতার বাংলাদেশ!
** দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন