ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান। একইসঙ্গে দেশের তরুণ প্রজন্মসহ পর্যটন শিল্পের নিবিড় এবং টেকসই উন্নয়নে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ‘পর্যটন সপ্তাহ’ ও ‘পর্যটন মাস’ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পর্যটন সচিব এসব কথা বলেন।

প্রতি বছরের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২৪’ যথাযথভাবে উদযাপিত হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার নির্ধারিত এবছরের প্রতিপাদ্য ‘টুরিজম অ্যান্ড পিস’, যার বাংলা প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘পর্যটন শান্তির সোপান’।

সচিব বলেন, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে এবং ইতোমধ্যে এ উপলক্ষে গণমাধ্যমে বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন অব্যাহত আছে। মোবাইল ফোনে দিবস সংক্রান্ত ম্যাসেজ পাঠানো হবে।

নাসরীন জাহান বলেন, বাংলাদেশ বিপুল পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি দেশ। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের দেশকে পরিণত করেছে একটি অনন্য আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছেদ্য সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের চা-বাগানসহ আরো অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই প্রিয়দেশ। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমূহ এবং বাঙালির আতিথেয়তা এই আমাদের পর্যটন সম্পদ। পর্যটন শিল্প বিকাশের সব সম্ভাবনা এ দেশে বিরাজমান। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে কাজ করছি। এ ব্যাপারে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত নেওয়া হবে।

সচিব বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তরুণ ও যুবকদের এ সেক্টরে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে অন্যদিকে এর মাধ্যমে নবীনরা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের অকুতোভয় বীর শহীদদের গৌরবগাথাকে অমলিন করার লক্ষ্যে শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে এ বিপ্লব এক ভিন্ন মহিমায় উদ্ভাষিত হবে।

তিনি আরও বলেন, পর্যটন শিল্প পৃথিবীর একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত। আমরা জানতে চাই, জানাতে চাই, শুনতে চাই, শোনাতে চাই। দেশের সব মানুষকে নিয়ে পর্যটন বান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস’ আমাদের সে সুযোগ উন্মোচন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।  

দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৩.০২ শতাংশ এই শিল্প থেকে আসে উল্লেখ করে সচিব বলেন, জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ পর্যটনশিল্পের ১২টি উপখাতের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সংকট কাটিয়ে পর্যটন শিল্পে নতুন উদ্যোগ ও ভাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে কাজ করছি আমরা। ধীর গতিতে হলেও বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নীতিমালা হালনাগাদকরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অনুমোদন এবং তার আলোকে অগ্রাধিকার নির্ণয় করে বিনিয়োগের মাধ্যমে পর্যটন খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলো, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টায় রাজধানীর আগারগাঁও পর্যটন ভবন থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হবে। সকাল ৯টায় পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত হলে দিবসের প্রতিপাদ্যের ওপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স টিকিটে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে।  

শিশুদের মাঝে পর্যটনের সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শিশুদের নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রিক চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়েও উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস’ উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন; যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৭০ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা পৃথিবী ভ্রমণ করবেন। অর্থাৎ বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।