জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) থেকে: স্বপ্নের দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস নিশ্চিত করতে কী-ই না করতে হয় এখানকার প্রবাসীদের। এমনকি ঘরে তুলতে হয় কাগজের বউ! আর সেই বউ যদি মুখরা হয়, তাহলে তো রক্ষা নেই।
পাশাপাশি প্রবাসে বহু কষ্টে অর্জিত সেই অর্থ চুষে নেয় এসব ‘কাগজের বউ’। শুরু হয় ব্ল্যাক-মেইল। পুলিশে রিপোর্ট করে দিনের পর দিন অর্থ নিতে থাকে এসব কাগজের বউ।
মাঝে বিয়ে নামের এই চুক্তির ফাঁদে পড়ে স্থায়ী অভিবাসী হওয়ার সুযোগগুলো উপক্রম হয় হাত ছাড়ার।
তুলনামূলক উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পাড়ি দেন আল্পস পর্বতমালা, প্রশস্ত হৃদ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ডে।
এখানে পারিশ্রমিক বেশি। উন্নত জীবন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা তাই হাতছানি দিয়ে ডাকে অভিবাসীদের।
পাশের দেশ ফ্রান্সে যেখানে বেতন দেড় হাজার ইউরো, এখানে মেলে আড়াই থেকে তিন হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক। বর্তমানে ইউরো আর ফ্রাঙ্কের মূল্যমান প্রায় কাছাকাছি।
আর স্থায়ী অভিবাসী হলে তো কথাই নেই। কাজ না পেলেও রয়েছে সরকারি ভাতাসহ নানা মৌলিক সুবিধা। যে কারণে অনেকেরই গন্তব্যই থাকে স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ড।
এখানে পৌঁছেই অভিবাসীদের লক্ষ্যই থাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি।
আর সেটি করতে, ‘দেশে নিজের জীবন সংশয়’ প্রথমে এই আকুতি জানিয়ে মানবিক কারণ দেখিয়ে প্রার্থনা করতে হয় রাজনৈতিক আশ্রয়।
তথ্যের অসঙ্গতি, প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় না নিয়েই মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যায় রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের প্রচেষ্টার কারণে দেশটিতে ক্রমেই সীমিত হয়ে এসেছে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের সুযোগ।
যে কারণে সুইচ নারীকে বিয়ে করে অভিবাসী হওয়ার সর্বশেষ চেষ্টা চলে প্রবাসীদের।
ভাগ্য ভালো হলে অনেকের সঙ্গেই ভাববিনিময় থেকে প্রেম আর ভালোবাসা গড়ায় বিয়েতে। নিয়মিত সাংসারিক জীবন-যাপন করে অনেকে পান স্থায়ী অভিবাসী হওয়ার সুযোগ। তবে এ সংখ্যাটি কেবলই হাতে-গোনা।
অধিকাংশই বিয়ে করেন চুক্তিতে। কেবলই কাগজে-কলমে। এ ক্ষেত্রেই বাড়তি অর্থ আর ঝুঁকির মাত্রাটা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিউনিটির একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানান, জেনেভায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছেন এদের সংখ্যাটা একেবারেই হাতে-গোনা।
ভাগ্যবান দু’চারজন ছাড়া অবশিষ্টদের এ প্রক্রিয়ায় যেতে খরচ করতে হয়েছে বাড়তি টাকা।
সূত্রমতে, কোনো সুইচ নারীকে চুক্তি বিয়ের জন্য প্রবাসীকে গুনতে হয় ৪০ হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত ইউরো। টানা ৫ বছর সফলভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে তবেই মেলে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি।
এই সময়টাতে সংসার না করেও যুগিয়ে যেতে হয় যাবতীয় ভরণপোষণ। কারণ কাগজ-তথ্য অনুযায়ী ওই সুইচ নারী তখন তার স্ত্রী।
আইন অনুযায়ী কোনো সুইচ নারী একই সঙ্গে দু’জন স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন না। আবার যিনি বিয়ে করছেন, তারও দেশে বা বিদেশে স্ত্রী থাকতে পারবে না।
যে কারণে বয়সে দ্বিগুণ হলেও অনেকের পছন্দ বিধবা কোনো সুইচ নারী। তবে সমস্যা প্রকট হয় তখনই, যখন চুক্তির বাইরে সেই নারী দাবি করতে থাকেন বাড়তি অর্থ।
অন্য কারো ইন্ধনে ওই সুইচ নারী আদালতে মামলা ঠুকে দিলে অভিবাসন প্রত্যাশা আর টাকা- দু’টাই জলে যায়।
ভুক্তভোগী একাধিক প্রবাসী বাংলানিউজকে জানান, তাদের পরিচিত অনেকেই প্রথমে চুক্তির বিয়েতে অর্থ ঢেলে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সুইচ নারী মামলা ঠুকে দেওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতোও প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছেন না অনেকেই।
মামলার ফাঁদে পড়ে টাকা আর হয়রানি দু’টোই সহ্য করতে হচ্ছে।
আবার সুইচ নারীকে বিয়ে করে কাগজের বউ দেখিয়ে অভিবাসী হলেও নিজের মূল্যায়ন বা মর্যাদা কমে যায়- এই ভয়ে দেশে বিয়ে করতে গিয়েও কাগজের বিয়ের কথাটাও খোলাখুলিভাবে বলেন না অনেকে। যে কারণে নানা চেষ্টার পর স্বদেশি বউ নিজের কাছে নিয়েও বিপাকে পড়েন প্রবাসীদের একটা বড় অংশ।
এখানে এসে স্বামীর আগের স্ত্রীর কথা জানতে পেরে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনেন অনেকে। সেই জের ধরে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে।
এ নিয়েও প্রবাস জীবনে চলে নানা ধরনের মানসিক অশান্তি। যে কারণে প্রবাসে কষ্টের অর্থ ব্যয় করেও স্বপ্ন বাস্তব হয় না অনেকের। অধরা ‘স্বপ্ন’ থেকে যায় কেবলই ‘স্বপ্ন’।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
আইএ