ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম

গুটি থেকে গ্র্যাফটিং (ভিডিওসহ)

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
গুটি থেকে গ্র্যাফটিং (ভিডিওসহ)

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে: আমের ভরা মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ-কানসাট-ভোলাহাটসহ আশপাশের এলাকার মানুষ আম খেয়ে গুটিটি সংরক্ষণে রাখেন। পরবর্তীতে এসব আমের গুটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে আনেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

সেগুলো তারা আড়তে এনে বিক্রি করেন।

গ্র্যাফটিং বা কলমের জন্য চারাগাছ তৈরিতে আড়ৎ থেকে এ গুটি ৩০০ টাকা হাজার হিসেবে কিনে আনেন আমের চারা ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, এক একর জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার আমের গুটি রোপন করা হয়। এসব গুটি থেকে বের হওয়া চারা একটু বড় হলে অসুস্থ ও কম বাড়ন্ত চারাগুলো তুলে ফেলা হয়। এরপর একর প্রতি ৩৫/৩৬ হাজার চারাগাছ কলমের জন্য তৈরি করা হয়।

এভাবে মেধা ও শ্রম দিয়ে চারাগাছ তৈরি করে বিক্রি করেই স্বাবলম্বী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার মাসুদ রানা। গ্রামের লোকজন তাকে কোটিপতি মনে করেন। তাতে আপত্তি নেই মাসুদ রানার। কেননা তার সম্পদ এখন কোটি টাকারও বেশি।

এসএসসি’র গণ্ডি না পেরোনো মাসুদ রানা শোনালেন তার সংগ্রাম, আমের চারা তৈরি ও ‘কোটিপতি’ হওয়ার গল্প।

২০০০ সালে মা মারা যান। সে বছর এসএসসি পরীক্ষা দিলে অকৃতকার্য হন তিনি। হতাশ, বেকার যুবক মাসুদ রানা আনসার বাহিনীতে চাকরির চেষ্টা করেন। ট্রেনিংও গ্রহণ করেন। ট্রেনিংয়ের সময় তার প্রশিক্ষক বলেছিলেন, ট্রেনিং শেষে চাকরির জন্য তোমরা কেউ বসে থাকবেনা। ফলের দোকান, চায়ের দোকান, নার্সারি যে যা পারো করবে।

২০০৩ সালের কথা। ট্রেনিং শেষে গ্রামে ফিরে আসেন মাসুদ রানা। পার্শ্ববর্তী জুল্লু মিয়া নামে দাদা সম্পর্কে‍ এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক একর জমি নেন। পরে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৩ হাজার টাকার গুটি কিনে জমিতে রোপন করেন। শর্ত ছিলো, যত চারা হবে তার একভাগ জমির মালিকের, দুই ভাগ তার।

মাসুদ জানান, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এর পরেও করা যায়। সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত রোদ থাকে এমন উঁচু জমি ভালো ফলনের জন্য উপযুক্ত।

চারার বয়স ৯-১২ মাস হলে সাধারণত মে-জুন মাসে সুস্থ সবল মাতৃগাছ থেকে সায়ন (গাছের অগ্রভাগের কচি ডাল) নিয়ে কলম করা হয়।

তিনি জানান, প্রথমে ছোট ধারালো একটি ছুরি দিয়ে চারা আম গাছের মাথা কেটে একদিকে কাণ্ডসহ প্রায় অর্ধেকটা ছিলে ফেলা হয়। সায়নের গোড়ার দিকের ছালও কাণ্ডসহ প্রায় অর্ধেকটা কেটে ফেলা হয়। দু’টি গাছের কাটা অংশ একটার সঙ্গে অন্যটি জোড়া দিয়ে পাতলা পলিথিন দিয়ে চেপে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর একটি পাতলা পলিথিন পেপার দিয়ে আলতো করে ঢেকে বেঁধে বায়ুরোধী করে দিতে হয় পুরো ডগাটি। এভাবেই তৈরি করা হয় গুটি থেকে গ্র্যাফটিং।

সায়নের মাথায় কুঁড়ি গজানোর সঙ্গে সঙ্গেই পলিথিনের ক্যাপটি খুলে দিতে হবে। মাস খানেক পর জোড়া স্থায়ী হলে সায়নের জোড়ায় শক্ত করে বাঁধা পলিথিনটিও খুলে দিতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোড়াটি স্থায়ী হতে দুই থেকে আড়াই মাসও লাগতে পারে।

এভাবে একটু একটু করে বাড়ে চারাগাছ, বাড়ে মাসুদ রানার স্বপ্ন।

মাসুদ রানা বলেন, ২০০৫ সালটি ছিল টার্নিং পয়েন্ট। সে বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় তিনি চারাগাছ বিক্রি শুরু করেন। লাভ হয় ১৫ লাখ টাকা। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে টাকা বিনিয়োগ করেন আমবাগানে। সেখান থেকে আসতো লাভ। আর চারাগাছ বিক্রিতো আছেই।

তিনি বলেন, এটা করেই এখন তার চার একরের দু’টি বড় নার্সারি, ৫টি আম বাগান, ১৬টি পুকুরে মাছের চাষ, আর রয়েছে একটি কীটনাশকের দোকান।

আর এভাবেই গুটি থেকে গ্র্যাফটিং করে প্রায় শূন্য থেকে কোটিপতি শিবগঞ্জের এসএসসি’র গণ্ডি ‍না পেরোনো মাসুদ রানা। এখন সে এলাকার দৃষ্টান্ত। তার দেখাদেখি সেখানে গড়ে উঠেছে আরও ৮-১০টি নার্সারি।



**উচ্চ ফলনশীলে হারিয়ে যাচ্ছে বাহারি সব আম
** আমযজ্ঞ দেখতে চাঁপাইনবাবঞ্জের শিবগঞ্জ-কানসাট
** ‘বাগানের আম ফরমালিনমুক্ত’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
এমআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।