ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম

যে উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষই ‘আম অর্থনীতি’ নির্ভর

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
যে উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষই ‘আম অর্থনীতি’ নির্ভর

শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে: কেউ আম বাগানি, কেউ আম বাগান লিজ নিয়েছেন, কেউ আম প্রহরী, কেউ পরিচর্যাকারী, কেউ বহনকারী, কেউ আড়তদার, কেউ তিন মাসের জন্য অস্থায়ী হোটেল ব্যবসায়ী, কেউ ঝড়া আমের কারবারি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ‘আম অর্থনীতি’র সঙ্গে জড়িত- বলছিলেন স্থানীয় স্যানেটারি সামগ্রী ব্যবসায়ী শামীম।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে আমের ব্যবসা মন্দা। মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই কেউ নতুন বাড়িঘর করছেন না। আমাদের স্যানেটারি সামগ্রীও বিক্রি হচ্ছে না। আমের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় আমাদের ব্যবসাও মন্দা।

তিনি আরও বলেন, শুধু স্যানিটারি নয়। আমের বাজার মন্দা হওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলার সব ব্যবসা মন্দা। এ উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষই আম অর্থনীতির সঙ্গে নির্ভরশীল।

নারী-শিশুরাও আম অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঝড়ে পড়া আম নারী ও শিশুরা কুড়িয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে। সে সময় কাঁচা আমের দাম পড়ে যাওয়ায় মহিলারা আম কেটে শুকিয়ে আমচুর কিংবা আমসত্ব তৈরি করে রাখেন। সুবিধামতো সময়ে তা বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করেন। মহিলারা আম প্রহরী হিসাবেও কাজ করেন। আমপাতা কুড়িয়ে তারা ‘পালা’ দিয়ে রাখেন। যাতে অন্তত ছয়মাসে জ্বালানি হয়ে যায়।

আমচুর-আমসত্ব কিনতে শিবগঞ্জ কানসাটের বাজারে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি আড়ৎ। তারা সেখানে শত শত মন আমচুর কিনে রেখেছেন। কানসাটের আড়ৎদার তাজউদ্দিন আহমেদ টিটু জানান, শিবগঞ্জে আমচুর-আমসত্বেই আবর্তিত হয় কোটি টাকার অর্থনীতি।

স্থানীয় আম ব্যবসায়ী নূর ইলাহী জানান, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষেরই বাগান আছে। যাদের নেই অন্তত ২/৩টি আমগাছ আছে। তারা দু’একটি গাছের আম খাওয়ার জন্য রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেন। অনেকে আম বাগান লিজ নিয়েও চাষ করেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমচাষ করা হয়। এ বিশাল এলাকা পাহারা দিতে প্রয়োজন হয় বিপুল সংখ্যক প্রহরীর। এছাড়া বাগানের আম পাড়ার জন্য প্রয়োজন হাজার হাজার শ্রমিকের। আমগুলো বস্তা, কার্টন কিংবা ক্যারেটে ভরে আড়তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও লাগে ভ্যান, শ্রমিক।
 
শুধু শিবগঞ্জ উপজেলাতেই আছে দুই থেকে আড়াই হাজার আড়ৎ। এ আড়তগুলো স্থানীয়রা তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। তারা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আম অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এ আড়তগুলোতে অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হয়। আম মৌসুমকে ঘিরে গড়ে ওঠে প্রচুর সংখ্যক মৌসুমী খাবার হোটেল।

এছাড়া আম পরিবহনের জন্য ক্যারেট ব্যবসায়ী, ঝুড়ি, ঠেকার জন্য বাঁশ, ডালি, বহু কীটনাশক ও সারের দোকান, আমের চারার জন্য নার্সারি, গ্র্যাফটিং শ্রমিক আরও কতকি।

ব্যবসায়ীরা জানান, ফরমালিনসহ বিভিন্ন গুজবে আমের দাম পড়ে গেলে শিবগঞ্জসহ আম নির্ভর ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই আম নিয়ে অহেতুক গুজব না ছড়ানোর জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

**গুটি থেকে গ্র্যাফটিং (ভিডিওসহ)
**উচ্চ ফলনশীলে হারিয়ে যাচ্ছে বাহারি সব আম
** আমযজ্ঞ দেখতে চাঁপাইনবাবঞ্জের শিবগঞ্জ-কানসাট
** ‘বাগানের আম ফরমালিনমুক্ত’

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
এমআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।