ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

গড়ে উঠছে পর্যটনকেন্দ্র হরিণবাড়িয়া, থাকবে লালদিয়া সি-বিচও

অশোকেশ রায়, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৬
গড়ে উঠছে পর্যটনকেন্দ্র হরিণবাড়িয়া, থাকবে লালদিয়া সি-বিচও  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা (বরগুনা থেকে) ফিরে: বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন পর্যটনকেন্দ্র হরিণবাড়িয়া। বিষখালী নদীপাড়ের এ পর্যটনকেন্দ্র চলে যাবে বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত, যেখানে থাকবে কক্সবাজারের আদলে সমুদ্র সৈকত (লালদিয়া সি-বিচ)।

পাথরঘাটা উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা গ্রামে বিষখালী নদীর তীরে অবস্থান লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও হরিণবাড়িয়া পর্যটনকেন্দ্রের। সেখানকার বিষখালীর অদূরে বঙ্গোপসাগরের পাড়ে হচ্ছে লালদিয়া সি-বিচ।

‘চরলাঠিমারা থেকে শুরু করে মুতাইন্যা পর্যন্ত ৫ হাজার ৬শ’ একরের এ পর্যটনকেন্দ্রের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিরিবিলি পরিবেশে পাখিদের কিচির-মিচির শোনা যাবে। বন্যপ্রাণীদের স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে দেখেও মুগ্ধ হবেন পর্যটকরা। লালদিয়া সি-বিচে উপভোগ করা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত’- বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের আওতাধীন পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা সোলায়মান হাওলাদার।

এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলটিকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণার আবেদন জানানো হয়েছে। সেটি হয়ে গেলে তখন এ বনের পাখি ও বন্যপ্রাণী শিকার করা যাবে না, গাছ কাটা যাবে না। আর পর্যটন শিল্পের আওতায় সি-বিচ তৈরিতে প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।      

গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হরিণবাড়িয়া বনকেন্দ্রটির (ইকোপার্ক) উদ্বোধন করে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে বছরে গড়ে দেড় লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে বলে জানান রাজস্ব আদায়ে (টিকিট বিক্রি) নিয়োজিত ফরেস্ট গার্ড মো. মতিয়ার রহমান।     

সরেজমিনে জানা গেছে, বিষখালী-বলেশ্বর-পায়রার মোহনায় লালদিয়ার চরে গড়ে তোলা হচ্ছে ঝাউবন। বিষখালী-পায়রার মোহনার এ ঝাউবনে যেতে বিষখালীর খাল থেকে ট্রলার সার্ভিস চালু রয়েছে। ‘লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি প্রকল্পের’ আওতায় ৯৫০ মিটার ফুটট্রেল (পায়ে হাঁটার কাঠের ব্রিজ) স্থাপন করা হয়েছে। ফুটট্রেলটিকে লালদিয়া সি-বিচ পর্যন্ত সম্প্রসারণেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নতুন প্রকল্পের আওতায়। সেখানে সাগর পাড়ে হবে ৮ তলা ওয়াচ টাওয়ারও।

পর্যটকদের জন্য ইতোমধ্যেই বনের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে ৪টি ওয়াচ টাওয়ার, ১০টি বেঞ্চ, ঘাটলা ও ইটের রাস্তা। মিঠা পানির জন্য খনন করা হয়েছে একটি পুকুর। গড়ে উঠছে ম্যানগ্রোভ ও কেওড়া, সুন্দরী, পশুর, রেইনট্রি বনও। প্রদর্শনী প্লটের আওতায় আরও নানা ধরনের উদ্ভিদ ছড়িয়ে দেওয়া হবে আর বর্তমানে বনে থাকা নানা প্রজাতির পশু-পাখির সঙ্গে হরিণ-কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণীও বিচরণ করবে অদূর ভবিষ্যতে।

এদিকে লালদিয়ার চরের পরে পায়রার মোহনায় জাগছে নতুন চর। আগামী ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পুরোপুরি জেগে গেলে চরটিকে পর্যটনকেন্দ্রের আওতায় এনে এটিকে আরও সম্প্রসারণের স্বপ্নের কথা শোনালেন রেঞ্জার সোলায়মান হাওলাদার। তিনি মনে করেন, এখানকার কেওড়া ফলের আচার শিল্প গড়ে তোলা গেলেও প্রচুর রাজস্ব আসবে।    

হরিণবাড়িয়া বনকেন্দ্রের বিট অফিসার বেলায়েত হোসেন জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ। সাড়ে চার কোটি টাকার এ প্রকল্পের তিন কোটি টাকা ইতোমধ্যেই বরাদ্দ এসে গেছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে এ নির্মাণযজ্ঞ।

তবে বিশাল এই সম্পদ রক্ষা ও রাজস্ব আদায়ে সরকারি জনবলের সংখ্যা মাত্র সাতজন। নিয়োজিত বন কর্মকর্তা ও কর্মীরা থাকছেন জরাজীর্ণ টিনের ঘরে। অবশ্য তাদের জন্য বাসভবন তৈরি হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়।

যেভাবে যাওয়া যাবে ও পর্যটন ফি
ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে সুরভি, সুগন্ধা, সাকুরাসহ বিভিন্ন পরিবহনের গাড়ি যায় পাথরঘাটা পর্যন্ত। ভাড়া সায়েদাবাদ থেকে ৫০০-৫৫০ টাকা আর গাবতলী থেকে ৬৫০-৭০০ টাকা। এছাড়া বরিশাল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে যাতায়াতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লোকাল ও বিআরটিসি গাড়ি, যার ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকা। পাথরঘাটা থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ নানা যানবাহনে পৌঁছানো যায় হরিণবাড়িয়ায়।

তবে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় সদরঘাট থেকে লঞ্চে বরিশাল হয়ে যাতায়াত বেশি জনপ্রিয়। বরিশাল, আমুয়া ও পাথরঘাটা লঞ্চঘাট থেকে রিজার্ভ লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোর্ড বা ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে সরাসরি নামা যায় বিষখালীর হরিণবাড়িয়া খাল-কূলে, যা পর্যটনকেন্দ্রের ভেতরেই অবস্থিত।

সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইকোপার্কটিতে দেশি পর্যটকদের ১০ টাকা ও বিদেশি পর্যটকদের ৫০ টাকা জনপ্রতি ভ্রমণ ফি নেওয়া হয়। ওয়াচ টাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা করেও টিকিটের সঙ্গেই দিতে হয়। পিকনিকস্পট ভাড়া সংখ্যাভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা ছাড়াও জলযান ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রবেশ, ভিডিও ক্যামেরা ও পার্কিং ফি বিভিন্ন হারে নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া হরিণবাড়িয়া থেকে ঝাউবন পর্যন্ত বন বিভাগের ট্রলার ভাড়া ৭৫ টাকা ও লঞ্চ ভাড়া ৩০০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।