ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বানিয়াচং ঘুরে: সন্ধ্যে গড়িয়ে ঘড়ির কাটায় সাড়ে ৭টায় পৌঁছেছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বানিয়াচং গ্রামের বড়বাজারের মাছ বাজার।

বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোতে চকচক করেছে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা ফ্লোরটি। যা প্রায় আধাঘণ্টা আগেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে গমগম করছিলো। এখন ফাঁকা।

এর ঠিক পাশেই প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে দোকানের পটল, আলু, চিচিঙ্গা আর কচুর লতা ঢাকছিলেন বিক্রেতা আবদুল হাই (৫০)।  

সন্ধ্যা নামায় বাজারে লোকসমাগম নেই, তাই তিনিও সকাল-সকাল দোকান গুছিয়ে বাড়ির পথ ধরায় ব্যস্ত! বললেন, দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। অন্যদেরও ক্রেতা সমাগম কমে যাওয়ায় মাটিতে বিছানো দোকান উঠাতেই ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।  

বাংলানিউজকে চল্লিশোর্ধ্ব আবুল হোসেন বলেন, বাজারে রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না। কাদা-পানিতে বৃষ্টির দিনে কেউ-ই সন্ধ্যার পর বাজারে থাকতে চান না। ‘তাই আমরাও এশার সময়েই দোকান বন্ধ করে ফেলি,’ বলেন তিনি।

শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে দেখা যায়,  বড়বাজার এলাকার মাছের বাজার বেশ জমজমাট। তবে, তখন হাওরের মাছ খুব একটা চোখে পড়েনি। ১৫ বিক্রেতার মধ্যে শুধু দুইজন পুঁটি আর পাবদা নিয়ে বসে আছেন। আর বাকিদের কেউ পাঙ্গাস, চাষের কৈসহ অন্যান্য চাষের মাছ নিয়ে বসে আছেন।

তাদেরই একজন হাবিবুর রহমান বলেন, হাওরের মাছ আমদের এখানে কম আসে। বাইরে চলে যায় নৌকায় থাকতেই। ‘এখানে স্থানীয়ভাবে চাষ করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেশ সস্তায় মেলে বরে জানান তিনি।

পাশে দাঁড়িয়েই শুনছিলেন সবজি বিক্রেতা মামুন। কিছু জানতে চাওয়ার আগেই নিজ থেকে বলা শুরু করলেন,‘মৌসুমী শাক-সবজি বিশেষ করে কদু, কচু, লতা, শাক এই বাজারে লইয়া আয়ুন মানুষ। কিন্তুক বেশির ভাগই হবিগঞ্জতে আনি আমরা। ’

বানিয়াচংয়ের গ্যানিংগঞ্জ বাজার, ৫/৬ নং বাজার, আদর্শ বাজার ও বাবুর বাজারেও চিত্র এক। এসব বাজারে শাক-সবজি ছাড়াও আম, আনারস, কলাসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদিও পাওয়া যায়।

এদিকে, টিন-কাঠের পাশাপাশি ইটের তৈরি ভবনেরই আধিক্য হবিগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বানিয়াচংয়ে। উপজেলা পরিষদসহ গোটা তিনেক ভবন ছাড়া কোনো বহুতল ভবন চোখে পড়েনি।

দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬.৫ কিলোমিটার ও প্রস্থে  ৪.৫ কিলোমিটার (উপজেলার আয়তন ৪৮২.২৫ বর্গকিলোমিটার) এ গ্রামের চার পাশে রয়েছে গড়ের খাল। রয়েছে ছোট-বড় পুকুর নালা-ডোবাও।  খালের পাড় দিয়ে এঁকে বেঁকে চলেছে কাঁচা-পাকা সড়ক। তবে, এসব সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। কোথায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা কিংবা পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

ভৌগলিক দিক দিয়ে বানিয়াচংয়ের উত্তরে সীমানা গেড়েছে সুনামগঞ্জের দিরাই, সাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই।

পূর্বেও ঠেকেছে হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলায়, পশ্চিমে আজমিরীগঞ্জ। আর আজমিরীগঞ্জের সঙ্গে পশ্চিমে সামিল হয়েছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম। প্রশাসনিক সুবিধার্থে চার ইউনিয়নে বিভক্ত বানিয়াচং। এগুলো হচ্ছে ১নং উত্তর-পূর্ব বানিয়াচং ইউনিয়ন, ২নং উত্তর-পশ্চিম বানিয়াচং ইউনিয়ন, ৩নং দক্ষিন-পূর্ব বানিয়াচং ইউনিয়ন ও ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম বানিয়াচং ইউনিয়ন।

দেশের অন্যতম প্রাচীন এ থানার প্রধান নদী কালনী। তবে রয়েছে চোরগাঁও, চাকুয়া, সোনামুয়া, বাটা, আন্দুরা, ধলা বিল, বাউড়াবান্দা, কান্দাইয়ালসহ অসংখ্য বিল। হেমন্তে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, অগ্রহায়ণে আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধ; বোরো মৌসুমে চারদিকে সবুজের সমারোহ। যেন লিলুয়া বাতাসে ধানগাছের কচি ডগার খেলানো ঢেউয়ে দোলে উঠে উদাসী  প্রাণ।

এছাড়া প্রাচীন নিদর্শন রাজবাড়ি, বিবির মোকাম মসজিদ, কালিকাপাড়া মসজিদ, ২নং হাবিলী মসজিদ, পুরানবাগ জামে মসজিদ, চানপাড়া মসজিদ ও শতবছরের পুরানো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখতেও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে যান প্রাচীন আমলের লাউড় রাজ্যের রাজধানীতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এমএ/পিসি

** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও

**স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।