ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বাঁশ-বেতশিল্পীদের ডেরায় প্লাস্টিকের থাবা

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৬
বাঁশ-বেতশিল্পীদের ডেরায় প্লাস্টিকের থাবা ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কানাইঘাট ও শ্রীমঙ্গল বাজার ঘুরে: বাঁশ-বেতের নকশির বুননে মিষ্টি গন্ধ আছে একরকম। পরতে পরতে শিল্পীর হাতের ছোঁয়া সে গন্ধকে রূপ দেয় সৌন্দর্যে।

প্রাত্যহিক কাজের অন‍ুষঙ্গ হয়ে ওঠে সে শিল্পসৌন্দর্য। নকশি পাটি, শীতল পাটি, বাঁশের কুখা, খলই, চতুল, মাথাল, হেয়ত, পাখা প্রভৃতি প্রয়োজনীয় উপকরণের সমৃদ্ধ সংগ্রহে বড়ই বেমানান প্লাস্টিকের পরিবেশ বিধ্বংসী পাখা, পাটি।  

টিলাঞ্চলে ভালো জন্মানো বেতি বাঁশ সিলেটের কানাইঘাট, হরিপুর কিংবা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। এসব অঞ্চলে বেতও জন্মে ভালো। ফলে বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ হয়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন শিল্পে। অধিক টেকসইয়ের তকমা লাগিয়ে সে শিল্পকে ধ্বংস করতে এগিয়ে আসছে প্লাস্টিক পণ্য।

সিলেটের অনত্যম সমৃদ্ধ বাজার কানাইঘাটের থানার বাজার। এখানে হাট বসে সপ্তাহে দু’দিন। এসময় বিভিন্ন এলাকার সেরা সৃষ্টিকর্মগুলো হাজির হয় হাটে। বাজারঘেঁষেই লোভা নদী। অদূরে সুরমার মোহনা, শাখা নানকার খাল, লোভাছড়া চা বাগান। ওপারের সীমান্তে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় শ্রেণী। তাই সৌন্দর্যসঙ্গমে ১৭ কিলোমিটার দুর্বিষহ রাস্তা মাড়িয়েও পর্যটকরা হানা দেন এ অঞ্চলে। তাদের কাছে এখানকার এসব হস্তশিল্প পণ্যও অন্যতম আকর্ষণ।

এ বাজারে রয়েছে কয়েকটি স্থায়ী দোকান। হাটের দিন রাস্তার পাশে বসেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। শ্রীমঙ্গল বাজারেও একই সারিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। এসব দোকানে শীতল পাটি, নকশি পাটি, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য উপকরণের পাশাপাশি দেখা গেলা প্লাস্টিকের বিভিন্ন সাইজের পাটি, পাখা। যা শোভা নষ্ট করছিলো দোকানগুলোর। জানতে চাইলে কানাইঘাটের ব্যবসায়ী নূরউদ্দীন এবং শ্রীমঙ্গলের নারী দোকানি জয়তুন বলেন একই কথা। তারা বলেন, কি করবো ভাই। মানুষ এখন এগুলো চায়। টেকে বেশি। দরকারের জন্যই রাখতে হয়।  

কানাইঘাটের নকশি পাটির বিশেষ নাম ও চাহিদা আছে। নূরউদ্দীনের দোকানে আকারভেদে দেখা গেলো ২শ থেকে ৩ হাজার টাকার নকশাকাটা পাটি। তবে এতো নজরকাড়া নকশি পাটির ভীড়ে সত্যি বেমানান নানা রঙের প্লাস্টিকের পাটি। এসব পাটিতে না আছে বসে আরাম, না স্বাস্থ্যসম্মত।

নদী ও হাওরাঞ্চল হওয়ায় মাছ সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের উপকরণ মেলে কানাইঘাটে। সবগুলোই আবার বেশ নজরকাড়া। এখানে দেখা গেলো ১২০ টাকা মূল্যের বাইন মাছ ধরার কুখ‍া, ৫০-৭০ টাকার মাথাল, ৭০-১০০ টাকার চাঙ্গা, ৮০ টাকার মাছ ধরা খলই, ৪০-৮০ টাকার খারা, মাল পরিবহনের টুকরি, হেয়ত প্রভৃতি।  

কানাইঘাট বাজার থেকে ১০ মাইল দূরের চতুলে তৈরি এসব উপকরণ। বাঁশশিল্পী কাজল জানান, সপ্তাহে তারা ২-৩টি বাঁশের কাজ করতে পারেন। মাসে সব মিলিয়ে ৮-১০ টাকা লাভ থাকে।  

শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী সুজিত জানান, তারা শুধু কিনে এনে বিক্রি করেন। যতই প্লাস্টিক আসুক তার মতে বাঁশের জিনিসের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। যদি আগের চেয়ে বেচাকেনা কম বলে স্বীকার করেন তিনি।  

সব জিনিসের মধ্যে টুকরির চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে এবং মাঘ-ফাল্গুন মাসে বিয়ের সিজনে ব্যবসা ভালো থাকে বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।

এ খাতে জড়িত শিল্পীরা তাদের শৈল্পিক দক্ষতা দেখিয়ে চলেছেন সব প্রতিকূলতা দূরে ঠেলেই। ব্যবসায়ীরাও অনেকটা তাই। শুধু সময়ের চাহিদা আর নিজেদের টিকে থাকার লড়াইয়ে হারতে হচ্ছে যন্ত্র আর প্লাস্টিকের কাছে। আর প্রয়োজনের কথা বলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন শিল্প আর ভালোবাসার থেকে।

**বর্ষাপর্যটনের নতুন গন্তব্য কাছাড়িয়া হাওর
** বৃষ্টিদিনে বৃষ্টির লালাখাল, নদীপাড়ের চা বাগান
** গাইডরাই চেনাবেন লাউয়াছড়া অভয়ারণ্য
** বানর-বেবুন-অজগর মানে না রেলের চাকা
** গাড়ির চাকায় পিষে যায় লাউয়াছড়ার প্রাণীপ্রাণ
** এক লেবুর দাম হাজার টাকা!
** সবুজের বুকে মোহময় শার্ফিন
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৪ (শেষ পর্ব)
** ছবিতে হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি
** ‘কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৩
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-২
** হাওরের হাঁসে হাসি​
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-১
** মায়ার বাঁধনে মায়া, সঙ্গী জেমস-মনা
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** নাগা মরিচের আরও ছবি
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
** তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
** রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
** পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
** চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৬
এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।