ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ভাঙা সড়কে বাধাগ্রস্ত সিলেটের পর্যটন

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
ভাঙা সড়কে বাধাগ্রস্ত সিলেটের পর্যটন ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: পর্যটন নগরী খ্যাত সিলেট। এ অঞ্চলে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।

চা বাগান, নৈসর্গিক ঝর্ণা পান্থুমাই, নীল জলের লালাখাল, প্রকৃতি কন্যা জাফলং, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল ও ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত হাকালুকি ছাড়াও রয়েছে দর্শনীয় স্থান। কিন্তু সেসব স্থান পরিদর্শনে প্রধান বাধা ভয়াবহ সড়ক যোগাযোগ!

মনোমুগ্ধকর সেসব স্থানে যেতে হলে পর্যটকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ভাঙা রাস্তা। সিলেটের সবক’টি পর্যটন কেন্দ্রের সড়কের একই দশা। যদি কেউ সিলেটের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তবে তাকে এসব ভাঙা রাস্তায় ভোগান্তি সয়েই যেতে হয়।

বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই: যেখানে প্রকৃতি তার আপন রূপ মেলে ধরেছে। পাহাড় বেয়ে পাথর ছুড়ে গড়িয়ে বহমান স্বচ্ছ জলধারা। পর্যটকরা প্রকৃতি আর পাথরের বিছানায় স্বচ্ছ জলে গা ভাসিয়ে ও ঝর্ণার কলতানে মুগ্ধ হন। কিন্তু পান্থুমাই ও বিছানাকান্দির সৌন্দর্য উপভোগে পাড়ি দিতে হয় ৪৫ কি.মি. ভাঙা সড়ক। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জের নরকের সড়ক দিয়ে যেতে হয় পর্যটকদের। নগর পেরিয়েই শুরু ভাঙা সড়কের গন্তব্যে পৌঁছা পর্যন্ত একই ভোগান্তি।

রাতারগুল: সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলের সড়কের একই অবস্থা। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের কিছু অংশ অতিক্রম করে যেতে হয়। খানা খন্দক পেরিয়ে যেতে হয় গন্তব্যে। ফলে পর্যটকদের কাছ থেকে ভাড়াও বেশি দাবি করেন যানবাহনের চালকরা।

জাফলং: সিলেট-তামাবিল সড়ক পেরিয়ে যেতে হয় জাফলংয়ে। পাথর আর কয়লাবাহী ট্রাক বারোটা বাজিয়েছে জাফলং-বল্লাঘাট সড়কের। যেকারণে ভোগান্তির শিকার পর্যটকরা।

হাকালুকি জিরো পয়েন্ট: পর্যটন সম্ভাবনার সিলেটে নতুন পালক যোগ করেছে ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। বাংলানিউজের কল্যাণেই নতুন এই পর্যটন কেন্দ্রের সন্ধান পান পর্যটকরা। হাকালুকি হাওরকে দেখে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এখানে আগত পর্যটকরা। তাই প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোণা থাকে ওই স্থানে। কিন্তু পর্যটন সম্ভাবনার এই স্থানে যেতেও পাড়ি দিতে হয় ভাঙা রাস্তায়। রাস্তার এক একটি গর্তই প্রমাণ করে দেয় কতকাল কাজ হয়নি সড়কটিতে।

সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তেমনি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেসব স্থানে বেড়াতে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের। যাত্রীবাহী বাসসহ শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন বেহাল সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বিটুমিন উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দের। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তার সেসব গর্তে পানি জমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে সেই সঙ্গে ঘটে দুর্ঘটনা।

সিলেট সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জ সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এই সড়কের কাজ অক্টোবরে শুরু হবে। সড়কটি সংস্কার হলে বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ও ভোলাগঞ্জ যেতে বেগ পেতে হবে না সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের।

তিনি বলেন, সওজের অধীনস্ত ভাঙা সড়কগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাফলং সড়কে রাস্তার শেষের ৭ কি.মি. অংশ বেশি খারাপ। এই সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জকিগঞ্জ-চারখাই থেকে শাহবাগ ১০ কি.মি., শাহবাগ থেকে কানাইঘাট ৫ কি.মি., বিশ্বনাথ লামাকাজি ৭ কি.মি. সড়কের সংস্কার কাজ প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়া সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও থেকে পালবাড়ী সড়কে গত বছরে কাজ হলেও সারকারখানার সার পরিবহনে ওভারলোডের কারণে রাস্তাটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। ওই রাস্তাটিও সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

তবে পর্যটন এলাকার কিছু সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। সেগুলোর কাজ ওই দফরের ওপর বর্তায় বলে জানান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) স্বপন কান্তি পাল বাংলানিউজকে বলেন, বিছনাকান্দি যাওয়ার সড়ক সালুটিকর থেকে গোয়াইঘাট পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৮৯ কি.মি. সড়কের কাজের টেন্ডার হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার সাহেবের বাজার থেকে ৬ দশমিক ৭৮ কি. মি. রাস্তা টেন্ডার হলেও বৃষ্টির জন্য কাজ আটকে আছে। একইভাবে ফেঞ্চুগঞ্জ ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮০ কি.মি. সড়কের কাজও থমকে আছে।  

এসব সড়কের কাজ হয়ে গেলে বিছনাকান্দি, রাতারগুল ও হাকালুকি হাওরে পর্যটকদের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে জানান স্বপন কান্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
এনইউ/জিপি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।