ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

পাহাড়ি পথে মেঘের মিছিলে শান্ত ঝরনার গান

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
পাহাড়ি পথে মেঘের মিছিলে শান্ত ঝরনার গান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শিলং। ছবি: বাংলানিউজ

শিলং (মেঘালয়, ভারত) থেকে: আঁকা-বাঁকা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ে উঠে গেছে সড়ক। পুরো সড়কে থেকে থেকে মেঘের ঝাপটা আর তার হিমশীতল পরশ। সবুজের চাদরের মায়ায় আবিষ্ট করে অদূরে-সুদূরে ঝরনাধারার ছন্দময় গান।

এই ছবির মতো দৃশ্যপট ‘প্রা‌চ্যের স্কটল্যান্ড’র। ভ্রমণপিপাসু‌দের কা‌ছে প‌রি‌চিত নাম ‘শিলং’।

ভার‌তের মেঘাল‌য় রাজ্যের রাজধানী। এককা‌লে এটা ছি‌লো অ‌বিভক্ত আসামের অংশ।  

হাতছানি দিয়ে পর্যটক ডাকতে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব লীলাভূমি শিলং কিন্তু বাংলা‌দে‌শের ওপারেই! সিলেটের তামাবিল সীমান্ত পেরোলেই।  

যদিও বাংলা‌দেশ থে‌কে শিলং ঘুর‌তে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা এখনও তেমন নয়। তবে বাড়‌ছে দিন দিন। প্রকৃতির আতিথেয়তা উপভোগের খবর যতো ছড়াচ্ছে, ততো শিলং অভিমুখে পর্যটকদের মিছিল বড় হচ্ছে।

পাহাড়ের কোলে ছোট্ট ছোট্ট ঘর-বাড়ির শহর শিলং
হোক ‘হানিমুন’ বা বন্ধু-বান্ধবের ‘গ্রুপ ট্যুর’। মেঘের রাজ্য মেঘালয়ের ডা‌কে পাস‌পোর্ট-ভিসায় সি‌লেট পে‌রি‌য়ে ‌শিলং পৌঁছে যা‌চ্ছেন অ‌নে‌কে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের তামাবিল-ডাউকি কাস্টমস অফিস থেকে জানা গেল, মেঘালয়ে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীর সংখ্যা এখন দি‌নে শতা‌ধিক।  

বে‌শিরভাগ পর্যটক এতোদিন সি‌লেট থে‌কে তামাবিল গিয়ে তারপর শিলং যেতেন। তবে এবার সরাস‌রি ঢাকা থে‌কেই যেতে পারবেন বাসে। একেবারে সরকার নির্ধা‌রিত বা‌সে। এভাবে যে‌তে চাই‌লে ভিসা ক‌রি‌য়ে দে‌বে বাস কোম্পানিই।  

বাংলাদেশ সরকা‌রের প‌ক্ষে ঢাকা থে‌কে শিলং-গৌহা‌টি‌তে বাস প‌রিচালনা শুরু ক‌রে‌ছে শ্যামলী এন আর ট্র্যা‌ভেলস। বাস‌টির প্রথম ট্রিপ শিলং পৌঁ‌ছে‌ছে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপু‌রে।

তামা‌বিল সীমান্ত দি‌য়ে সড়কপ‌থে বাসটি প্র‌বেশ করে মেঘাল‌য়ের ডাউ‌কিতে। তারপর মাত্র ৮০ কি‌লো‌মিটার। এই পুরো পথ যেন মোহে ডুবিয়ে রাখে প্রকৃতি। ঝুলন্ত সেতু, তার নিচে ছোট ছোট নৌকা। পাহা‌ড়ের বা‌ঁকে বাঁকে গাঁথুনির মতো সড়ক বেয়ে হাজার ফুট উচ্চতায় বাস পৌঁছে যায় শিলং‌য়ে।  

সেতুর নিচে নদীতে নৌকার ছোটাছুটি।  ছবি: বাংলানিউজ
শিলং যাওয়ার পথে মধ্যবর্তী কয়েকটি স্থানে পর্যটকরা থেমে চা-নাস্তা সেরে নিতে পারেন। শিলংয়ের স্থানীয় গাড়িগুলো বেশিরভাগ সময়ই পাইনার্সোলা স্পটে থামে। ডাউকি থেকে পাইনার্সোলা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথ পেরোনোর ক্লান্তি ঝাড়তে সেখানে বিশ্রাম নেন অনেকে। পাইনার্সোলা থেকে শিলং পৌঁছানো যায় এক ঘণ্টায়।  

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শিলংয়ের উচ্চতা সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট। সে হিসেবে এই পথ পেরোনোর সময় গাড়ি থেকে নিচের দিকে তাকালে গা হিম হয়ে যেতে পারে। নিচে যে কেবল হাজার ফুট গভীর খাদ।  

দীর্ঘ পথ পেরিয়ে চোখে যখন পড়বে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মনকাড়া পাইন গাছের সারি, তখনই বুঝতে হবে শিলং শহরের কাছে এসে গেছে গাড়ি। সাজানো-গোছানো ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি-ঘরের শান্ত শহর শিলং।

মে‌ঘের বা‌ড়ি চেরাপু‌ঞ্জি, সে‌ভেন সিস্টার্স ফলস, এলি‌ফ্যান্ট ফলসের মতো অনেক ঝরনা আর প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর নিদর্শনের হাতছানিতে শিলংয়ে আসেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক। কিন্তু ভারত হ‌য়ে শিলংয়ে পৌঁছাতে অ‌নেক কাঠখড় পে‌রোতে হয় তাদের। সেক্ষেত্রে বাংলা‌দেশ হ‌তে পা‌রে শিলং পৌঁছানোর অন্যতম সহজ প্রবেশপথ। অন্তত ঢাকা থেকে সরাস‌রি বাস চালুর পর এ সম্ভাবনা আরও বাড়‌লো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
এসএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।