ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

ভুটান: রাজার দেশের অবাক রূপ-১

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
ভুটান: রাজার দেশের অবাক রূপ-১

ভুটান থেকে ফিরে: গন্তব্য ছিল অন্য কোথাও। কিন্তু হঠাৎ করে ভ্রমণপাগল বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিল ভুটান যাবে। ভুটান যাওয়ার ইচ্ছেটা ভেতরে পুষে রাখলেও এত দ্রুত যাওয়া হবে ভাবিনি। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। ঈদের ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। সব ঠিকঠাক করে ৮ আগস্ট ১০ বন্ধু মিলে শুরু হলো আমাদের যাত্রা।

আগে থেকে ভারতের ট্রানজিট ভিসা সংগ্রহ করে আমরা ৮ আগস্ট বিকেলে লালমনিরহাটের বুড়িমারীর উদ্দেশে রওয়ানা হই। সকাল ৭টা নাগাদ পৌঁছে যাওয়ার কথা থাকলেও ঈদের ছুটির কারণে জ্যামে আটকে বুড়িমারী পৌঁছাই দুপুর ২টা নাগাদ।

দ্রুত দু’দেশের ইমিগ্রেশন শেষ করে ওপার থেকে রুপি করে একটি জিপ ঠিক করে রওয়ানা হই আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাঁর উদ্দেশে। যে শহরের সঙ্গে লাগোয়া ভুটানের সীমান্তবর্তী ফুয়েন্টসলিং।

রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আমরা জায়গাঁ পৌঁছি। যদিও পরিকল্পনা মোতাবেক দেশে জ্যামে না পড়লে এতক্ষণে থিম্পুতে থাকার কথা ছিল। জয়গাঁ নেমেই চোখে পড়লো ভুটানের গেট। যে দিক দিয়ে সবার সহজ যাতায়াত। আমরা খাওয়া-দাওয়া করে ভুটানের ফুয়েন্টসলিং শহরে ঢুকে গেলাম। ফুয়েন্টসলিংকে বলা হয় ভুটানের প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে প্রবেশে কোনো বাধা নিষেধ নেই। দিব্যি ঘুরে দেখেছি রাতের ফুয়েন্টসলিং শহর। জয়গাঁতে রাত্রিযাপন শেষে সকালে ভারতের ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে দ্রুত ভুটান গেট সংলগ্ন ভুটানের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে অনঅ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার কাজটি শেষ করে ফেলি।  
দৃষ্টিনন্দন ভুটান।  ছবি: বাংলানিউজকত কত গল্প শুনেছি ভুটান নিয়ে। আজ নিজেই কিনা ভুটান যাচ্ছি; এই ভাবনায় তর সইছে না। টিমের প্রত্যেকটা সদস্যের একই উপলব্ধি। ভুটান সফরে জিগমে নামে ভুটানের এক মাইক্রোবাস চালককে পাই। অসাধারণ এক মানুষ জিগমে।

ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা জয়গাঁ থেকে গাড়ি ঠিক করে রওয়ানা হই পারোর উদ্দেশে। যাত্রাপথে উঁচু-নিচু পাহাড় দখলে নিয়ে মেঘেদের উপস্থিতি দেখে মনে হবে যেন আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ভুটানকে বলা হয় সুখী মানুষের দেশ। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দেশটি ছবির মতো সুন্দর।

পথে পড়লো চেলালা পাস। প্রায় তিন হাজার ৯শ ৮৮ মিটার উচ্চতার চেলালা পাসের পথ ধরে যত উঠি তত মনে হচ্ছে কেউ একজন দু’হাত দিয়ে আমার কান চেপে রেখেছে। মূলত উচ্চতার কারণে কান ভোঁ ভোঁ শব্দ করছিল। চেলালা পাস পৌঁছেও বৃষ্টি আর ঠাণ্ডার কারণে অনেকক্ষণ গাড়িতে বসে থাকতে হয়। তবে বৃষ্টির পরবর্তী সময় পাহাড় ঘিরে মেঘেদের লুকোচুরি, সবুজ পাহাড়ের ভাঁজ দেখে চেলালা পাসকে বিদায় জানাই। দৃষ্টিনন্দন ভুটান।  ছবি: বাংলানিউজরাতে ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম পারো শহরে তাৎক্ষণিক হোটেল ঠিক করে খাওয়ার পালা। বৃষ্টির কারণে রাতের পারো শহর দেখা আর হলো না। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল সকাল বেরুনো পরদিন। একে একে দেখা হলো পারো জং (ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান), উডেন ব্রিজ। প্রত্যেকটা স্থাপনায় আছে দেশটির ঐতিহ্য ও নিজস্বতা। ঘর থেকে দোকান কিংবা সরকারি অফিস সবখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ড্রাগনের কারু কাজ করা।
 
এরপর পারো বিমানবন্দরে। ভুটানে মোট চারটি বিমানবন্দর থাকলেও একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে পারো বিমানবন্দর। ‘দ্য মোস্ট ডিফিকাল্ট কমার্শিয়াল এয়ারপোর্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড’।  
দৃষ্টিনন্দন ভুটান।  ছবি: বাংলানিউজজানা যায়, এই বিমানবন্দরটি পারোর ছু নদীর তীরে অবস্থিত। এটির আশপাশের পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মিটার। এটিকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর মনে করা হয়। ২০০৯ সালে অক্টোবর মাসের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র আটজন পাইলট এই বিমানবন্দরে বিমান পরিচালনার সনদ পান। সবুজ উপত্যকার মাঝখানে অবস্থিত পারো বিমানবন্দর সমুদ্রতল থেকে দুই হাজার ২শ ৩৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।  

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
এডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।