এর মাঝেই এবারের ভারত সফরে সুযোগ এলো চেন্নাইয়ের ‘মাহিন্দ্রা ওয়ার্ল্ড সিটি’ সরেজমিনে দেখার। ভারত সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলকে সোমবার (৮ মার্চ) নিয়ে যাওয়া হয় এই সিটিতে।
এখানে চোখে পড়লো ৬০/৭০ ফুট চওড়া রাস্তার একপাশে বিএমডব্লিউ গাড়ি তৈরির কারখানা, আর অন্য পাশে গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দারাও অবাধে যাতায়াত করছেন এই রাস্তায়। এখানে যেমন চোখে পড়েছে বিলাসবহুল ভিলা, তারই সঙ্গে লাগোয়া আবার আরেক গ্রাম। এখানে যেমন রয়েছে কারখানা তেমনই আছে গ্রাম ও শহরের অবস্থান!
আরও পড়ুন>>>শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলাক্ষেত্রে একদিন
এখানেই তৈরি হয় বিশ্বের নাম করা ব্র্যান্ডের নানা ধরনের গাড়ি। এর পাশেই বাস করে ছ’টি গ্রামের মানুষ। ছয়টি গ্রাম আর ৭টি লেককে অবিকল রেখে দিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে মাহিন্দ্র ওয়ার্ল্ড সিটি। যেখানে প্রতিদিন কাজ করেন এক লাখ শ্রমিক। এক হাজার ৫৫০ একর জমি নিয়ে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু এ সিটির। বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ইনফোসিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাসও এখানে। কয়েক হাজার কর্মী কাজ করেন ইনফোসিসের এই প্রতিষ্ঠানে। স্মার্টসিটি বা ইকোনমিক জোন করতে হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলে দিতে হবে এমন ধারণাকে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে চেন্নাইয়ের মাহিন্দ্রা ওয়ার্ল্ড সিটি। ছয়টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই সিটির বড় প্রাণ শক্তি।
শিল্প কারখানায় কাজ করতে জনবল দরকার। আর কারখানার পাশেই যদি হয় তাদের বাসস্থান তাহলে তো কথাই নেই। যাতায়াতের জন্য তাদের যে সময়টুকু ব্যয় হতো তা আর হবে না। এই সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
এসব বিষয় সব মাথায় রেখেই গড়ে তোলা হয়েছে এ সিটি। শহরের পাশেই গ্রাম। এসব গ্রামের উৎপাদন হয় শাকসবজিসহ নানা কৃষিপণ্য। আছে খামার। তাই স্থানীয়ভাবেই শাক-সবজিসহ নানা পণ্য পাওয়া যায়। এসবের ক্রেতাও এ সিটির বাসিন্দারাই।
এই সিটিতে নামি-দামি কোম্পানিতে কাজ করতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষ এসেছেন, তেমনি বিভিন্ন দেশের মানুষও রয়েছেন সেখানে। তাদের জন্য আছে চার কোটি রুপির ভিলা থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকার অ্যাপার্টমেন্ট। হাসপাতাল, স্কুল, ব্যাংক, খেলার মাঠ, শপিংমল কি নেই মাহিন্দ্রার এই সিটিতে।
বিনোদনের জন্য রয়েছে আধুনিক ক্লাব। নিরাপত্তায ব্যবস্থাও বেশ কঠোর। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ হয় মাহিন্দ্রা ওয়ার্ল্ড সিটির ব্যবস্থাপক মি. বিপিণ দানিয়েলের সঙ্গে।
তিনি জানালেন, এই সিটিতে ৩০টি দেশের ৬৮টি কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। বছরে প্রায় আট হাজার কোটি রুপির পণ্য রফতানি হয়। গুরুত্ব দেওয়া পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। তাই এখানে সবুজায়নের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বিপিণের ভাষ্য মতে, শুরু থেকেই প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি না করে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে চেয়েছি আমরা। এই শহর করতে গিয়ে কোনো গ্রামবাসীকে উচ্ছেদ করা হয়নি। তারা আছেন তাদের বাড়িতে তাদের জীবন ধারা বজায় রেখে, আর তাদের ঘিরেই গড়ে উঠেছে চকচকে সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে আবার কর্মসংস্থানও হয়েছে তাদের। এখান ঢুকতে বা বেরোতে কাউকে বাধাও দেওয়া হয় না। কিন্তু তাই বলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো কমতি আছে, তাও বলা যাবে না।
যোগাযোগর ব্যবস্থাও বেশ ভালো। এই সিটির বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে রেলস্টেশন। চেন্নাইয়ের সব লোকাল ট্রেনে এখানে যাত্রাবিরতি করে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে এই স্টেশন দিয়ে। যারা অধিকাংশই এই সিটির বিভিন্ন কারখানার কর্মী।
বিপিণ জানান, এই শিল্পনগরী বন্যা প্রতিরোধক, যদিও প্রাথমিক অবস্থায় তা ছিল না। নিজস্বতায় পরিপূর্ণ এই শহরে রাসায়নিক ছাড়া সব বর্জ্যই পরিশোধিত হয়। খাদ্য বর্জ্য পরিশোধিত হয়ে গ্যাস উৎপাদিত হয়। যা দিয়ে প্রায় সব গাড়ি চলাচল করে এবং এ জ্বালানি বিনামূল্যে শহরের ভেতরের বাসিন্দাদের দেওয়া হয়।
তিনি জানান, মাহিন্দ্রা চেন্নাইয়ে তিনহাজার একর আয়তনের আরও একটি সিটি গড়ে তুলছে। যেখানে তিনটি কারখানা এরই মধ্যে স্থাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০২
টিসি