ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

মিরপুর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ঢল

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
মিরপুর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ঢল চিড়িয়াখানার প্রাণীর খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: বাচ্চাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর এক প্রকার বিরক্ত হয়েই বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা লতিফুন নাহার। এরপর জানতে পারেন চিড়িয়াখানা খোলার খবরটি।

তাই সন্তানদের আবদার মেটানো আর একটু নির্মল পরিবেশের আশায় গন্তব্য সেখানেই।

শুধু লতিফুন নাহার নয় বরং করোনা ভাইরাস মহামারিতে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর খোলার দ্বিতীয় দিন মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ছিল মানুষের ঢল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারও চালাতে কমতি ছিল না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। সোমবার (০২ নভেম্বর) সকালে জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে দর্শনার্থীদের। বিভিন্ন পশু-পাখির খাঁচার সামনে জটলায় হারিয়েছিল সামাজিক দূরত্বও। অনেকে আবার ভেতরে ঢোকার পর খুলে ফেলছেন মাস্ক।

এ বিষয়ে ইব্রাহিম খান শিশির নামে এক দর্শনার্থী বলেন, চিড়িয়াখানার যা আয়তন সে তুলনায় মানুষ এখন কম। তাছাড়া সবাই দূরে দূরে। আর সবথেকে বড় কথা এমন নির্মল পরিবেশে একটু বুকভরে শ্বাস নেওয়ার জন্যই মাস্কটা কিছুক্ষণের জন্য খুলে রেখেছি। তবে প্রয়োজন অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলবো।

এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধের পর এখন বেশ ছিমছাম পরিবেশ পেয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আছেই, সাথে চিড়িয়াখানার ভেতর বিভিন্ন রেলিং, দেয়াল আর বসার জায়গাগুলোতে লেগেছে নতুন রঙ। করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় তৈরি করা হয়েছে হাত ধোঁয়ার স্থান। নতুন ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড থেকে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর দেওয়া হচ্ছে কোভিড সতর্কতা সংক্রান্ত নির্দেশনা। এছাড়া পায়ে হাঁটা রাস্তার দু’ধারের লাল-সাদা ইটের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই।

 এ বিষয়ে দর্শনার্থী সাইকা তাসনীম বলেন, ঘোরার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন পর বাসা থেকে বের হলাম। একটা অপেক্ষা ছিল যে কবে দর্শনীয় স্থানগুলো খুলে দেবে। এখন চিড়িয়াখানায় এসে সবকিছু একদম নতুন লাগছে। আগের তুলনায় অনেক ছিমছাম পরিবেশ, অনেক গোছানো। পশু-পাখিরাও বেশ একটু শান্ত আর সুন্দর। সব মিলিয়ে বলা যায় সতেজ একটা পরিবেশ। তবে অনেকেই মাস্ক ছাড়া বা স্বাস্থ্য নির্দেশনা না মেনে দলবেধে ঘোরাঘুরি করছে। এটা নিয়ে আমাদের নিজেদেরই আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

করোনা পরিস্থিতির কারণে মার্চের ২০ তারিখ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ এই বন্ধে নিজেদের বেশ সুন্দর করেই গুছিয়ে নিয়েছে চিড়িয়াখানার পশুপাখিরাও। এই সময়ে তাদের দৈহিক সৌন্দর্য যেমন বেড়েছে, তেমনি নতুন জন্ম নিয়েছে ১১৫টি প্রাণী। এর মধ্যে জিরাফ, জলহস্তী, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বিভিন্ন ধরনের পাখি অন্যতম। আর দীর্ঘদিন পর জনমানুষের আগমনে তাদের মনেও বেড়েছে চাঞ্চল্য। এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় জিরাফের তত্ত্বাবধায়ক আজগর আলী বলেন, দীর্ঘ এই বন্ধের সময়ে প্রাণীরা বেশ শান্তশিষ্ট ছিল। এখন তাদের আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। প্রাণীগুলো দর্শকের দিকে তাকিয়ে থাকছে, তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কখনো কখনো তো অনেকগুলো বাচ্চাকে একসঙ্গে দেখলে প্রাণীগুলো তাদের সঙ্গে মজা করে খেলার ছল করে আনন্দও দিচ্ছে।

এটিকে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবেই উল্লেখ করলেন জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মো. আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, দীর্ঘ একটা সময় পশুপাখিগুলো মানুষ দেখেনি। তাই এখন যেমন মানুষ ওদের দেখছে, তেমনি ওরাও মানুষ দেখছে। আর মানুষের সঙ্গে তো ওরা অভ্যস্ত। তবে দীর্ঘ বন্ধের সময়টা প্রাণীগুলো বেশ উপভোগ করেছে এবং এসময় তাদের প্রয়োজনীয় যত্নও নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে তিনি বলেন, মাস্ক ছাড়া আমরা কাউকে চিড়িয়াখানায় ঢুকতে দিচ্ছি না। নো মাস্ক, নো এন্ট্রি। তারপরও ভেতরে গিয়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আমরা চেষ্টা করছি, দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করতে হবে।

করোনা ভাইরাস মহামারিতে সাত মাস বন্ধ থাকার পর খোলার প্রথম দিন রোববার (১ নভেম্বর) মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮০২ জন। আর মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রতি মাসের প্রথম রোববার দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে চিড়িয়াখানায় ঢুকতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২০
এইচএমএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।