ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

যেখানে বিলীন হবে হতাশা, মিলবে প্রেমের সুবাতাস

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২০
যেখানে বিলীন হবে হতাশা, মিলবে প্রেমের সুবাতাস

রাঙামাটি: রাঙামাটি তিন পার্বত্য জেলার মধ্যমণি এবং দেশের বৃহত্তর অন্যতম জেলা। এ জেলার রূপ লাবণ্যের প্রেমে পড়েনি এমন লোক পাওয়া ভার।

রাঙামাটির নামকরণ কিভাবে হয়েছে তার সঠিক  কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও জনশ্রুতি আছে, এখানকার স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি এ অঞ্চলের মাটির রং লাল হওয়ায় ‘রাঙ্যামাইট্যা’ নামকরণ করে। যা পরবর্তীকালে শুদ্ধ নাম হিসেবে ‘রাঙামাটি’ রাখা হয়।

পুরো জেলার সবুজ প্রকৃতি, সুউচ্চ পাহাড় এবং এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর কৃত্রিম মিঠা পানির কাপ্তাই হ্রদ পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এ রূপ দেখার জন্য সারাবছর জেলায় পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে শীতকালে এ সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এ জেলা জুড়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ প্রকৃতি-হ্রদের মেলবন্ধন। যেখানে স্বর্গীয় রূপ অবলোকন করার মতো। পাহাড়ের ভাজে ভাজে মায়ার প্রেম খুঁজে বেড়ায় প্রকৃতি প্রেমী ট্যুরিস্টরা।

জেলা শহরের মধ্যে এমন মায়া প্রেমের ঠিকানার সন্ধান মিলে আসামবস্তী-কাপ্তাই সংযোগ সড়কে। আঁকাবাঁকা সড়কজুড়ে সবুজ পাহাড়, হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি দেখে আপনার মনকে মুহূর্তে পুলকিত করে তুলবে। ক্লান্তির সব বেদনা হারিয়ে যাবে। হতাশা বিলীন হয়ে ছড়াবে প্রেমের সুবাতাস। তাইতো গোধূলি বেলায় প্রেমিক যুগলসহ শত-শত ট্যুরিস্টদের ভিড় লেগেই থাকে পুরো সড়ক জুড়ে।

সড়কে গলিতে ট্যুরিস্টদের রসনাবিলাস করাতে প্রকৃতির সবুজ অরণ্যর ভিড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে ‘বড় গাঙ, বেড়াইন্যা, ভিভাইন লেক, রাইন্যাটুকুন অন্যতম। হোটেলগুলোর অধীন রাখা হয়েছে অসংখ্য কায়ার্ক। যদি সাঁতার জানা থাকে তবেই কায়ার্ক নিয়ে হ্রদের বুকে ভাসতে পারেন নিজ দায়িত্বে। এসব রেস্টুরেন্টে থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে পুরো রাত প্রকৃতির রূপ খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলে।

রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী কালাম মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, জীবনে প্রথম রাঙামাটিতে আসছি। পরিচিতি অনেক বন্ধু বলেছে রাঙামাটিতে ‘আসামবস্তী- কাপ্তাই’ নামের একটি সড়ক আছে। তাই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে চলে আসছি। খুব ভাল লাগছে এমন সুন্দর প্রকৃতি দেখে।

ঢাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী করিম বাংলানিউজকে বলেন, ভাললাগা বলেন আর ভালবাসা বলেন, সময় করে অবসর সময়ে প্রতি বছর রাঙামাটিতে বেড়াতে চলে আসি। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। সারাবছর ঝুলন্ত ব্রিজ, বনভান্তের  বৌদ্ধ মন্দির দেখেছি। এবার আসামবস্তী-কাপ্তাই সংযোগ সড়কে বেশি সময় কাটিয়েছি। যেখানে শান্তির দেখা মেলে।

তবে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছে, শুধু প্রকৃতি দেখার জন্য ট্যুরিস্টরা এখানে আসবে না। তাদের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দিতে হবে। খাবারে আনতে হবে ভিন্নতা। প্রকৃতির অপরূপ ভরা এলাকাগুলোকে বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। দখলবাজ এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট হয় এমন কর্ম কেউ এলাকাগুলোতে করতে না পারে এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

রাঙামাটির পর্যটন উদ্যোক্তা ও হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি প্রকৃতির জন্য অনন্য। এজন্য আমাদের উচিত হবে প্রকৃতির রূপ-লাবন্যকে আরো কিভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। সারাদেশে কিভাবে এ জেলার পরিচিতি বাড়ানো যায়। যদি সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি তাহলে এ এলাকায় ট্যুরিস্টদের আনাগোনা বাড়বে। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আয়ের পরিধি বাড়বে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে অসংখ্য।

কিভাবে যাবেন: রাজধানী ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি রাঙামাটি বাস সার্ভিস চালু আছে। রাতে বাসে উঠলে সকাল ৬টার মধ্যে রাঙামাটি পৌঁছে যাবেন। এরপর শহরের বনরূপা কিংবা রিজার্ভবাজার যেকোনো এলাকায় নেমে সকালের নাস্তা শেষ করে শহরের একমাত্র বাহন অটোরিকশায় চলে যেতে পারেন আপনার গন্তব্য আসামবস্তী-কাপ্তাই সংযোগ সড়কে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।