মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরে পদ্মা নদীতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চারটি ভ্রমণতরী (সাজানো গোছানো মাঝারি আকৃতির ট্রলার) নামানো হয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে উপজেলার বাংলাবাজার ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীরে রাখা হয়েছে এ ভ্রমণতরীগুলো।
পর্যটনশিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জেলেদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ ভ্রমণতরীগুলোর মালিক জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত স্থানীয় জেলেরাই। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে পদ্মাপাড়ের শতাধিক জেলে পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু ও নদী এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ ঘুরতে আসেন, নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুরে বেড়ান। পদ্মা সেতু দেখতে মাঝ নদীতেও যায় এসব ট্রলার। বিচ্ছিন্নভাবে ভ্রমণপ্রেমীরা এ এলাকায় ঘুরতে এসে নৌভ্রমণও করেন। তবে ভ্রমণপ্রেমীদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন পদ্মার এ এলাকায় পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ভ্রমণতরীর যাত্রা শুরু। একই সঙ্গে এ পর্যটনশিল্পকে কাজে লাগিয়ে পদ্মার পাড়ের জেলেদের জীবনমান যাতে উন্নত হয়, সেই লক্ষ্যে এ ভ্রমণতরীগুলো শুধুমাত্র জেলেরাই জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পদ্মায় নামাতে পারবে। গত ৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা এ ভ্রমণতরীতে ভ্রমণ করতে পর্যটকদের ঘণ্টা প্রতি এক হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। আয়ের সব টাকাই জেলেদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শিবচরের পদ্মাপাড়ে পর্যটনের অপার সম্ভবনা রয়েছে। এ সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে জেলেদের জীবনযাত্রার মানও বদলে দেওয়া সম্ভব। সে লক্ষ্যেই পর্যটনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে চারটি ভ্রমণতরী দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে পর্যটনের। ক্রমান্বয়ে নৌকার সংখ্যা আরও বাড়বে। একই সঙ্গে পদ্মার তীর এলাকাতেও পর্যটনের উপযোগী নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটনের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় জেলেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। মাছ ধরার পর অবসর সময়ে বাড়তি উপার্জনের একটা পথ তৈরি হচ্ছে এতে করে। এছাড়া এখানে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা থাকলে ইলিশ ধরা বন্ধের মৌসুমে জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে মাছ শিকার করতে যাবেন না। সেই সময়ে ভ্রমণতরীর মাধ্যমে বাড়তি উপার্জনের পথ তৈরি হবে। এতে করে সব মিলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন স্থানীয় জেলেরা।
চারটি ভ্রমণতরীর একটির মালিক স্থানীয় জেলে আজাহার মিয়া, তিনি বলেন, এতোদিন শুধু মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ব্যবস্থা হয়েছে। এতে করে বাড়তি টাকা আয় করা যাবে। তবে বর্তমানে ঘণ্টা প্রতি এক হাজার টাকা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এতে করে তেল খরচের শেষে দু’জন মাঝির তেমন কিছু থাকে না। ভাড়া আরও বাড়ানোর দাবি জানাই। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে সময় বাড়াবো আমরা।
অপর জেলে আবু কালাম মোল্লা বলেন, আসলে এক ঘণ্টায় তেমন কিছুই দেখানো সম্ভব হয় না। উঠতে-নামতেই পার হয়ে যায়। ’
ঘুরতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, নির্ধারিত নৌকা থাকায় ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের ভ্রমণ সহজ হয়ে গেলো। নৌকায় করে পদ্মা নদী ও পদ্মা সেতু দেখতে আসা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এ এলাকায় পর্যটনের আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, পদ্মা সেতুকে ঘিরে পদ্মা ও চরাঞ্চল পর্যটনের জন্য একটি সম্ভবনাময় স্থান। পর্যটন বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি ভ্রমণতরী নামানো হয়েছে পদ্মায়। জেলেদের আয়ের একটি বিকল্প পথ তৈরি করার প্রয়াস এটা। আগামীতে আরো বাড়বে নৌকার সংখ্যা। এতে করে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের মৌসুমে জেলেরা বিকল্প উপার্জনের মাধ্যমে সংসার চালাতে পারবেন। অবৈধ পন্থায় ইলিশ শিকারের প্রয়োজন হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
এসআই