ঢাকা: দেশে নতুন পর্যটন কেন্দ্র খুঁজে বের করা এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে একটি মাস্টার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
মাস্টার প্ল্যানে দেশের ঐতিহ্য, সংষ্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দেখে পর্যটনের উন্নয়ন এবং নতুন পর্যটন কেন্দ্র চিহ্নিত করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পর্যটকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তা হয়ে যাবে। আমরা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি। ভিসার ব্যাপারে আঞ্চলিক সহযোগিতা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, তিনটি ধাপে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবে।
পর্যটন উদ্যোক্তাদের ঋণ কার্যক্রম নিয়ে এক প্রশ্নে সচিব বলেন, এই শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেড় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। দ্রুত প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলগুলোতে কীভাবে আধুনিক সুবিধা দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বলেন, হোটেল-মোটেলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ সিট ফাঁকা রাখতে হয়। এছাড়াও কিছু আসন সংস্কারের জন্য ফাঁকা রাখতে হবে। আমরা ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। নিঝুম দ্বীপে ব্যবসার দরজা খুলে দেবো। ওখানে ব্যবসা ছিল না।
করোনার কারণে পর্যটনের ব্যাপক ক্ষতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পর্যটন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ না ছড়াতে পালন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
বিশ্ব পর্যটন দিবসে নানা কর্মসূচি
মহামারির মধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, পর্যটন দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্ববাসীকে পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান সম্পর্কে অবহিত করা। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন’।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বের পর্যটন শিল্প কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোর একটি পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশও এই পরিস্থিতির বাইরে নয়। এই মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আমাদের পর্যটন কেন্দ্র ও এই শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল।
বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটকরা আগ্রহের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করার কারণে আস্তে আস্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্যের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। ঘোড়ার গাড়ির একটি র্যালি পর্যটন ভবনের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র পরিভ্রমণ করার পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে। এছাড়া বাদ্যযন্ত্রসহ ২০টি সুসজ্জিত রিকশার একটি র্যালি গুলশান-বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রচারণা চালাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগসহ দেশের অন্যান্য পর্যটন অংশীজনগণ দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটা ছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আলোচনা সভা এবং শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
বিশ্ব পর্যটন দিবসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের প্রতিটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রচার করবে। বিমানের যাত্রীদের সচেতন করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড মাস্ক বিতরণ করবে। এছাড়াও তিনটি দেশীয় এয়ার লাইন্স তাদের যাত্রীদের শুভেচ্ছা উপহার দেবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১
এমআইএইচ/এনএসআর