জুম্মার নামাজ আদায় করে টং দোকানে বসি ৫-৬ জন বন্ধু, চা'য়ের সঙ্গে ভ্রমণ বিষয়ক আড্ডা চলছে। লকডাউনের প্রায় দেড় বছর চলছে! করোনার করুণায় এই দেড় বছরে খুব দূরের কোনো ভ্রমণে যাওয়া হয়নি, যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় কোনো উপায় ছিল না।
যেই ভাবা সেই কাজ, তবে কিছু জটিলতার কারণে পরদিন শনিবার (০৪ জুন) রাতে আমরা আটজন চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরি নৈসর্গিক খাগরাছড়ির উদ্দেশ্যে! ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে ২০০কি.মি. হাইওয়ে এবং ১০০কি.মি. এরও বেশি পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করাটা সহজ কথা নয়।
যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় চলার পথে আইনি কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। রোববার সকাল ৮টায় সকলে খাগড়াছড়ি পৌঁছাই।
ভোরের পাহাড়ি আবহাওয়া ছিল হৃদয় জুড়ানো, মনে হচ্ছিল মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়ছি, এ অনুভুতি লিখে প্রকাশ করার মতো নয়!
রেস্ট হাউসে খাবার খেয়ে এবং বিশ্রাম শেষে বেরিয়ে পড়লাম তেরাং (রিছাং ঝর্ণা) এবং আলুটিলার উদ্দেশ্যে। প্রথমে ঢুকতে বাধা দিলেও অনেক অনুরোধের পর কিছু শর্তসাপেক্ষে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পেলাম, কারণ পর্যটনকেন্দ্রগুলো তখনো খুলে দেয়নি এবং প্রায় তিন মাসে কোনো পর্যটক এখানে আসেনি। আহা! সেদিন আমরা ঝর্ণার সবচেয়ে সুন্দর রূপ দেখলাম, সারাবছর পর্যটকের আনাগোনায় এই সৌন্দর্য উপভোগ করার ভাগ্য সবার হয় না। ঝর্ণায় গোসল সেরে আলুটিলার দিকে রওনা হই আমরা।
আলুটিলায় দাঁড়িয়ে সমস্ত খাগড়াছড়িকে মনে হচ্ছিল কোনো চিত্রকারের আঁকা চিত্র ফ্রেমে বাঁধানো হয়েছে, হিমশীতল ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগছিল শরীরে, তখন মনে হচ্ছিল 'জীবন সুন্দর'!
পরদিন যাই সিন্দুকছড়ি, সিন্দুকছড়ির রাস্তাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল একটুকরো লাদাখ নেমে এসেছে আমার দেশের বুকে।
পাহাড়ি সরু পথ, রস্তার একপাশে বিশাল পাহাড় এবং অপর পাশে প্রায় আড়াইহাজার ফিট নিচু খাদ, আর আমাদের চারিদিকে মেঘ! মটরসাইকেল থামিয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম, প্রকৃতির এমন মায়াভরা দৃশ্য নির্বাক করে দেবে যে কাউকে।
এবং এরপর যাই মহামায়া লেক, সেখানে গিয়ে দেখলাম লেকটি তার নামের মতোই মহা মায়া নিয়েই বিস্তৃত।
শেষদিনে যাই মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে। কবি সাহিত্যিকরা তাদের সারাটা জীবন এই জায়গাটা নিয়ে লিখে কাটিয়ে দিতে পারবেন। সারাদিন শরীরে মেঘ মেখে বিকেলে রেস্ট হাউসে ফিরি এবং সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত খাগড়াছড়ি শহর ঘুরে বেড়াই এবং পাহাড়ি মানুষদের ভালবাসায় সিক্ত হই।
পরদিন সকালে খাগড়াছড়িকে জানালাম অস্রুশিক্ত বিদায়। এত সুন্দর মায়াময় জায়গা ছেড়ে আসতে মন চায় না, তবুও পিছুটানে ছেড়ে আসতে বাধ্য। ফেরার পথে হঠাৎ দূরের পাহাড়গুলো দেখে মনে হচ্ছিল প্রাকৃতিও আমাদের বিদায় জানাচ্ছে, হয়তোবা তাই-ই!
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২১
এসআইএস