কক্সবাজার: বিজয় দিবস এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে টানা তিন দিন লাখো পর্যটকের পদভারে মুখর থাকবে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত।
বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজারো পর্যটকের ভিড়। কেউ বালিয়াড়িতে দৌঁড়ঝাপ, কেউ সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। যে যার মত করে আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা।
চট্টগ্রামের চকবাজার থেকে সপরিবারে ভ্রমণে আসেন মনির আহম্মদ। কেমন কাটছে সমুদ্র সফর, প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, এক কথায় অসাধারণ! একটু শীতের প্রকোপ বেশি, পর্যটকের কোলাহলও বেশি তবুও সব মিলিয়ে খারাপ লাগছে না। আমাদের চেয়ে সন্তানরা মজা করছে বেশি। ঢাকার মগবাজার থেকে আসা পর্যটক দম্পতি খোরশেদ আলম ও খুরশিদা বেগম। খুরশিদা জানান, কক্সবাজার বিয়ের আগেও আমার আসা হয়েছে। তবে, এবার অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। টুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা দেখে নিরাপদ বোধ করছি। সব মিলে খুবই ভালো সময় কাটছে।
‘এই বিশাল সমুদ্র দেখলে কার না ভালো লাগবে। এই শীতের সকালেও এতগুলো মানুষ সমুদ্র স্নান করছেন, এই দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় কক্সবাজার মানুষের কাছে কতটা প্রিয়’- এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন, খাগড়াছড়ি থেকে আসা পর্যটক বিনিতা চাকমা। কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজারের প্রায় ৫শ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। বিজয় দিবসের ছুটি উপলক্ষে আগামী তিন দিনের জন্য শতকরা প্রায় নব্বই ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং রাখা হয়েছে, বাকি ১০ ভাগ কক্ষ ‘বিশেষ’ অতিথিদের জন্য খালি রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, বিজয় দিবসের টানা সরকারি ছুটি উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের হোটেলগুলোতে কোনো কক্ষ খালি নেই। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন, বর্তমানে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ৭টি এবং কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে একটি করে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে। টানা তিন দিনের ছুটিতে সেন্টমার্টিনের জাহাজ ও হোটেলগুলোতেও আগামী তিনদিন পর্যন্ত প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর দুই ঈদ, দুর্গাপুজা ও ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ পর্যটকের ঢল নামে। তবে, করোনার কারণে গতবছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস বন্ধ ছিল কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্র। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ার পর গত ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এসময় একদিনেই কক্সবাজারে ১০ লক্ষাধিক পর্যটক সমাগম ঘটে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা, করোনার টিকা চালু হওয়ায় এ বছর পর্যটকদের ঢল আরও তীব্র হতে পারে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য ভ্রমণ পিপাসু লাখো পর্যটক এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আর তাদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই টুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটন কেন্দ্র ও সড়ক মহাসড়কগুলোতে টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ছুটি পেলেই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। এবারও লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে এখানে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
এসবি/এএটি