এত ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে মেলায় যাওয়া মানুষগুলো যখন বাসায় ফিরে, তখন বেশিরভাগেরই দু’হাত থাকে খালি। যেভাবে আসেন, সেভাবেই ফেরেন তারা।
১ জানুয়ারি পর্দা ওঠার পর থেকে প্রথম সপ্তাহ ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতিতেই কেটেছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতিও ছিল কম। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মেলামুখী মানুষের ঢল অনেক বেড়েছে। তবে বেচা-বিক্রি অনেক কম হওয়ায় বিক্রেতাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
সোমবারও (১৬ জানুয়ারি) দিনভর মেলা প্রাঙ্গণে ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়।
বিক্রেতারা জানান, মানুষের এই ভিড় শুধুই মেলা দেখা বা পণ্য দেখার জন্য। আগতদের বেশিরভাগই আসছেন বিনোদনের জন্য ঘুরতে। অন্যদিকে দর্শনার্থীরা বলছেন, ঢাকার মার্কেটে পাওয়া যায় না, এমন পণ্য মেলায় নেই। ফলে স্টল কিংবা আকর্ষণীয় প্যাভিলিয়নে রাখা পণ্য তাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। তাছাড়া, মেলায় বিভিন্ন পণ্যের দাম ঢাকার মার্কেটগুলোর চেয়ে ঢের বেশি। এ কারণেই পণ্য কেনার বদলে মেলা ঘুরে উপভোগ করাই শ্রেয় মনে করছেন তারা।
মেলার টিকিট ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মীর শহিদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, রোববার ও সোমবার মিলিয়ে মেলায় প্রায় ৪০ হাজার হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। মেলা শুরুর পর প্রথম শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) ৮৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর দ্বিতীয় শুক্রবার মেলায় প্রবেশ করেছে লাখেরও বেশি মানুষ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এতো মানুষ মেলায় ঢুকলেও ১০ ভাগেরও কম কেনার উদ্দেশ্যে মেলায় আসছেন। ভিড়ের চিত্র যেমনই হোক বেচাবিক্রি একদমই বিবর্ণ।
মেলার বিভিন্ন স্টল আর প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেলো, মেলা ঘুরে বেশিরভাগ স্টল বা প্যাভিলিয়নেই দেখা গেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। সবাই নানা পণ্য নেড়েচেড়ে দেখছেন। তবে তাদের বেশিরভাগই ফিরছেন খালি হাতে। বেশিরভাগই বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিজনসহ শুধু ঘুরছেন আর দেখছেন।
মেলায় বেচা-বিক্রি কেমন? এ প্রশ্নে চেহারায় হতাশার ছাপ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে এম এস সিনথিয়া হ্যান্ডলুমের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম তারিকের। তিনি বলেন, এবারের মেলায় বেচা-বিক্রি একেবারেই কম। তাঁতের শাড়ি কেউ কিনতেই চায় না। গতবছরের তুলনায় এ বছর শাড়ি প্রতি দাম ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা কমিয়ে দিয়েছি। তারপরও ক্রেতা নেই বললেই চলে। এবার মেলায় স্টল নিয়ে মনে হয় বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে।
মেলায় অংশ নেওয়া কুমিল্লা স্টোরে শাল বিক্রি করছেন মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, মেলা জমে উঠলেও ব্যবসা জমেনি। দিনের বেশিরভাগ সময়ই ক্রেতার অভাবে বসে থাকতে হয়। সন্ধ্যার দিকে ভিড় থাকলেও বেচা-বিক্রি সুবিধার হয় না। তবে শুক্রবার-শনিবার মোটামুটি বিক্রি ভালো ছিল বলেও জানালেন তিনি।
অনন্যা থ্রি-পিসের বিক্রেতা শাহাদত হোসেন জানান, গত বছর এ সময় জমজমাট বিক্রি ছিল। এ বছর সবাই দেখে দেখে চলে যায়। কেউ আবার দরদাম করে। কিন্তু কিনতে আসাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
তবে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে, প্লাস্টিক পণ্য, অ্যালুমিনিয়ামের গৃহস্থালি (ক্রোকারিজ), ইমিটেশনের গয়না, কসমেটিকসের স্টলগুলোতে। এসব স্টলে ক্রেতাদের ভিড় যেমন বেশি, বিক্রিও সন্তোষজনক।
দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের ইনচার্জ ইয়াসিন গনি জানান, এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে। আসছে দিনগুলোতে ব্যবসা আরও ভালো হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোর প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহটা বরাবরই একটু বেশি থাকে। এবারও তাই। তবে ছোট আকারের থাইল্যান্ড-তুরস্ক কিংবা মালয়েশিয়ার প্যাভিলিয়নগুলোতে চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যায়নি।
মেলা থেকে বের হওয়ার পথে হাতে দুটো পটেটো চিপস নিয়ে যাচ্ছেন সস্ত্রীক মেরায় আসা সাব্বির। কিছু কিনলেন না কেন- এ প্রশ্নে সোজাসাপ্টা উত্তর সাব্বিরের, ‘মেলায় দাম বেশি। এর থেকে কম দামে নিউ মার্কেট কিংবা হকার্স মার্কেটেই পাওয়া যায়। মেলায় এসেছি শুধু দেখতে আর ঘুরতে। ’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, মেলায় ছোট-বড় স্টল আর প্যাভেলিয়ন রয়েছে ৫৮০টি। বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, হংকং, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানসহ এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের ১২টি দেশ এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেম সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
জেডএফ/এমজেএফ