ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মিশন গ্যান্টিং ।। সৌরভ বড়ুয়া

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৪
মিশন গ্যান্টিং ।। সৌরভ বড়ুয়া ছবি: লেখক

জুলাই মাসের ২৪ তারিখ। ওই দিন মালয়েশিয়া পৌঁছেই বন্ধুর বাসায় উঠি।

ব্যস্ত থাকায় প্রথম কয়েকদিন নানা কারণে ব্যস্ত বন্ধু সেভাবে সময় দিতে পারছিলো না, তাই আমার ঘোরাঘুরি করার জন্য বের হওয়া হলো না। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো ২ তারিখ আমরা বের হবো, আমরা মানে আমি আমার বন্ধু সাজ্জাদ এবং তার বন্ধুরা।

আগের রাতে আড্ডা দিতে দিতে ঘড়িতে রাত ৩টা, ভাবলাম এই ট্রিপটাও গেল। সকালের দেখা আর আমরা কেউ পেলাম না। সবাই যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন সময় সকাল গড়িয়ে দুপুর ১২টা।

তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে সবাই বেড়িয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য গ্যান্টিং হাইল্যান্ড। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ৭১০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি রিসোর্ট। দিনের শুরু যেখানে এতো দেরিতে হলো সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না বলেই মনে হলো আমাদের।  

এল আর টি চেপে সবাই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে জানলাম গ্যান্টিংয়ের কোনো বাস নেই। আবার এল আর টি অন্য এক জায়গায় গেলাম সেখানেও বাস নেই। একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবো। পরের যাবতীয় কথাবার্তা হলো মালয় ভাষায়। পরে জানতে পারলাম আমাদের হাতে একটাই অপশন আছে আর সেটা হলো এই ট্যাক্সি। ৫৫ রিংগিতে ট্যাক্সি ভাড়া করা হলো।

শহর ছেড়ে আমাদের ট্যাক্সি যখন পাহাড়ের দিকে ছুটছিলো সে এক অন্য মালয়েশিয়া, পাথুরে জঙ্গল ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য প্রাপ্তি।   

যাত্রা পথের পুরোটা জুড়েই ছিলো অসাধারণ দৃশ্যের সমাহার। গাদাগাদি করে বসার কারণে প্যান্টের পকেট পর্যন্ত হাত যেতে পারেনি। তাই যাত্রা পথে সব অসাধারণ সব ছবি মিস হয়ে গেল।

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তুমুল গতিতে গাড়ি চলার পর গতি কিছুটা ধীর হয়ে গেল। খাড়া পাহাড় বেয়ে কিছুক্ষণ চলার পরেই এক জায়গায় ট্যাক্সি আমাদের নামিয়ে দিলো, এবং পরামর্শ দিলো যেন আমরা ফিরতি বাসের টিকিট প্রথমেই কেটে ফেলি। টিকিট কাটতে গিয়ে জানতে পারলাম বাসের টিকিট মাত্র পাঁচ রিংগিত।

রাত ১১টার টিকিট কেটে আমরা এবার পরবর্তী করণীয় জানার চেষ্টা করলাম। সেটা হয়ে গেল আমাদের মূল ট্রিপের প্রধান আকর্ষণ!

ক্যাবল কার, গ্যান্টিং স্কাইওয়ে। ৩.৩৮ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ। উচ্চতা ভীতি থাকলেও এই রোমাঞ্চ উপেক্ষা করার দুঃসাহস দেখালাম না। তৃতীয় তলায় ওঠার পর সবাই ক্যাবলকারে উঠলাম, ভয়ের চোটে একজন দোয়াদরুদ পড়া শুরু করে দিলো। তবে দৃশ্যগুলো ছিলো ঠিকই অসাধারণ। ক্যাবল কার যতোই উপরে যেতে লাগলো চারপাশ এক অপরূপ নৈসঃর্গিক আবহ ধারণ করতে লাগলো। দশ থেকে পনেরো মিনিটের যাত্রাপথ ছিলো ক্যাবল কারে, টিকেট ছিলো ছয় রিংগিত করে। তবে উপভোগ্য ছিলো যাত্রার  প্রতিটা মুহূর্ত।

গ্যান্টিং রিসোর্ট পৌঁছানোর পর কুয়ালালামপুরের ভ্যাপসা গরমের পরিবর্তে  ঠাণ্ডা হাওয়া পেলাম। ঠাণ্ডা ক্রমেই কনকনে ঠাণ্ডায় রূপ নিলো। তাও আমরা ঘোরাঘুরি করে চারপাশ দেখতে লাগলাম।

রিসোর্টে ছিলো মেঘের আনাগোনা, কখনো আমরা মেঘের উপর কখনো কখনো নিচে।   দূর থেকে দেখা যাচ্ছিলো শহরের উপর তপ্ত রোদ। গোটা দৃশ্যটা ছিলো স্বর্গীয়, আফসোস শুধু একটাই নিজের চোখের দেখা দৃশ্যগুলো মুঠোফোনে ঠিকমতো ফ্রেমবন্দি করতে পারছিলো না। সব মিলিয়ে আমরা দুই তিন ঘণ্টা গ্যান্টিং হাইল্যান্ডে ছিলাম।

ফিরতি পথের কাহিনী ছিলো বিব্রতকর। কারোরই ধারণা ছিলো না গ্যান্টিং ঘুরতে কত সময় লাগে, তাই বাসের টিকেট কেটেছিলাম রাত এগারোটার,  যদিও ট্যাক্সি ড্রাইভার বলেছিলো রাতের গ্যান্টিং এর আলোকিত রূপ অনেক সুন্দর। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েকের মিনি ট্রাকিংয়ে আমরা সবাই হাপিয়ে উঠেছিলাম। তাই রণে ভঙ্গ  দিয়ে সবাই চলে এসেছিলাম নিচে। আমাদের বুকিং দেওয়া বাস ছাড়া আর কোনো বাস ছিলো না, সব বুকড। তাই আবার ট্যাক্সি ভাড়া করে কুয়ালালামপুর আসতে হলো।

ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  
আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

লেখক: সৌরভ বড়ুয়া তপু

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।