ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পিয়াইন নদীতে এক যুগে তিন ডজন মৃত্যু

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪
পিয়াইন নদীতে এক যুগে তিন ডজন মৃত্যু ছবি: ফাইল ফটো

সিলেট: অপরূপ সৌন্দর্যের অনন্য সৃষ্টি জাফলং। প্রকৃতিকন্যা নামে খ্যাত জাফলংয়ের রূপ দেখতে প্রতিবছরই আগমন ঘটে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

এখানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ স্বচ্ছ জলরাশির পিয়াইন নদী। যা পর্যটকদের কাছে ‘মৃত্যুপুরী’ নামে খ্যাত। কারণ প্রতি বছরই এ নদী কেড়ে নেয় পর্যটকের প্রাণ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক যুগে  পিয়াইন নদীতে সাঁতার কাটতে নেমে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৩৫ পর্যটকের। যার মধ্যে গত ঈদ‍ু ফিতরের সময় ঘুরতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৭ জন।

দুর্ঘটনা এড়াতে নদীতে সাঁতার কাটা ও ছোট নৌকায় ভ্রমণের ওপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পর্যটকেরা সেটা মানতে নারাজ।
 
সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় পিয়াইন নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন নারায়ণগঞ্জের জসিম উদ্দিন। আর আগের দিন এ নদীর শাখা বিছনাকান্দি নদীতে নৌকা ডুবে প্রাণ হারান সাজেদুল হক।

স্থানীয়দের দাবি, পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন শুধুমাত্র সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দিয়ে রাখলেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখেনি। ফলে পর্যটকরা নদীতে সাঁতার কাটতে নেমে প্রাণ হারাচ্ছেন।

এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তে বালু জমে চোরাবালির সৃষ্টি হওয়া ও নদীর স্বচ্ছ জলধারায় গভীরতা কম দেখা যাওয়ায় পর্যটকেরা নদীর পানিতে নেমেই তলিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পর্যটকদের সতর্কীকরণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। তাছাড়া পর্যটন মৌসুমে নিরাপত্তায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন থাকে। এরপরও অসাবধানতাবশত নদীতে নেমে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

তবে নদী থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ জুলাই পিয়াইন নদীতে নৌকাডুবে মারা যান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাকিল (১০), মামুন (২২), সাদেক হোসেন (২০)।

একই দিনে চোরাবালিতে হারিয়ে যান সিলেটের শাহী ঈদগাহ হোসনাবাদ এলাকার কামরুল (২০) এবং সাঁতার কাটতে গিয়ে মারা যান অজ্ঞাত এক যুবক।

২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার শনির আখড়া এলাকার শুভ আহমদ, ২৫ অক্টোবর ঢাকার যাত্রবাড়ীর কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেন এবং ৩০ মে মাদারীপুর সদর উপজেলার চলকিপুর গ্রামের মো. ইব্রাহীমসহ আরও ৪ জন মারা যান।

২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকা জেলার ফাহাদ উদ্দিন, ৩০ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এলাকার হিমেল রাজ সঞ্জয়সহ মোট দুইজন মারা যান।

২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার খিলগাঁও এলাকার তারেক আহমেদ, ২০ মে রফিকুল ইসলাম ও গৌরাঙ্গ কর্মকার, ২২ মে ঢাকার শাহরিয়ার আহমেদ রাব্বি, ২ জুলাই ঢাকার তেজগাঁও এলাকার শাহরিয়ার শফিক, ৩০ জুলাই জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ এলাকার মুস্তাকিন তালুকদার, ১২ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি জেলার রুহুল আমিন খান রুমিসহ মোট সাতজন মারা যান।

২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জ বানিপুর এলাকার ইউনুছ মিয়া, ৮ মে ঢাকার মিরপুরের ফারুক আহমদ, ২১ জুন নরসিংদী সদর এলাকার সজিব মিয়াসহ মোট তিনজন মারা যান।

২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকা পল্লবী এলাকার দিলশাদ আহমেদ। ২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গোয়াইনঘাট উপজেলার মুসা মিয়া, ১৬ আগস্ট একই উপজেলার ফখরুল ইসলামসহ দুইজন মারা যান।

২০০৪ সালে ২ জন, ২০০৫ সালে একজন এবং ২০০৭ সালে ২ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়।

এছাড়া ২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট জাফলংয়ে সলিল সমাধি ঘটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেজাউর রহমান ফয়সাল ও রাজন আহমদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।