কক্সবাজার থেকে: ‘ওরে বাপ, কতো বড় পতঙ্গ!’ গ্রাম-নদী পেরিয়ে মেঘেদের দেশ বেয়ে উড়োজাহাজের উড়োউড়ি দেখে শৈশবে চোখ কপালে তুলতে হতো। আনমনেই মুখ দিয়ে কখনো বেরিয়ে আসতো, এ পতঙ্গ সামনে থেকে দেখতে কেমন? এ পতঙ্গ জনপদে এলে কেউ কি রক্ষে পাবে? মহাপতঙ্গের পেটে একঘণ্টার উৎসব শেষে জনপদে ফিরে মনে হলো এ মহাপতঙ্গ মাটি থেকে দেখার চেয়েও বেশি বিস্ময়ের এর পেটের ভেতর ঢুকে।
মহাপতঙ্গ নিয়ে শৈশব থেকে যে কৌতূহল জমা হয়েছিল, সে কৌতূহল হাজারো গুণ বেড়েছিলো আকাশপথে কক্সবাজারে যাওয়ার আয়োজনের কথা শুনে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কয়েকদফা ভেলকি কাটিয়ে যখন কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ২৮ আগস্ট দিন নির্ধারিত হলো তখন ক্ষণ গণনা শুরু হতে লাগলো, মহাপতঙ্গ কাছ থেকে দেখার, মহাপতঙ্গের পেটে ঢোকার। তবে এ মহাপতঙ্গ কিন্তু পেট থেকে বোমা ফেলবে না, শুধুই আনন্দ দেবে।
নির্ধারিত দিন এলো। নির্ধারিত সময়ে ওড়ার জন্য আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন তিন কৌতূহলী। ঢাকার যানজটের ঝঞ্ঝা কাটিয়ে মহাপতঙ্গের ওড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত অপর তিন কৌতূহলী।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহাপতঙ্গের পেটে ঢোকার প্রস্তুতি। মিনিবাসে চড়িয়ে অপর যাত্রীদের সঙ্গে ছয় কৌতূহলীকেও নিয়ে যাওয়া হলো রানওয়েতে।
রানওয়েতে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ। এই তাহলে মহাপতঙ্গ! এতো বিশাল বিশাল যান্ত্রিক আকাশযানই তাহলে দাদী-নানীদের মুখে শোনা মেঘেদের দেশে ওড়া মহাপতঙ্গ, এই তাহলে আমাদের কক্সবাজারের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার নির্ধারিত যান রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মহাপতঙ্গ!
খানিক আবদার দেখিয়েই মহাপতঙ্গের সামনে কিছুক্ষণ ফটোশ্যুট হলো, সেলফি হলো। এরপর পেটে ঢোকার পালা। রিজেন্টের মহাপতঙ্গের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা দুই আন্তরিক কেভিন ক্রু আমাদের সাদরে গ্রহণ করে নিলেন।
যে যার মতো সিটে বসে ঘোর কাটাতে চাইছিলেন। আসলেই কি এখন মহাপতঙ্গের পেটে? চিমটি কেটে ‘ঘোর নয়’ নিশ্চিত হওয়া গেল। আকাশযানের উড্ডয়ন-অবতরণের সময়কার নির্দেশনা শেষে রানওয়েতে দৌঁড়োতে শুরু করলো মহাপতঙ্গ। কয়েক মিনিট পর ডানা মেলে মেঘেদের জাল ভেদ করে উঠে গেল আকাশের বুকে।
কিছুক্ষণ আগেই কেটে যাওয়া ঘোর আবার জমতে শুরু করলো! কেউ একজন বলেই দিলেন, ‘আহা, আমার রঙিন ঢাকাকে এমন বস্তির মতো দেখায় কেন?’ আরেকজনের আওয়াজ, ‘রাস্তাগুলো কেমন সাপ হয়ে গেলো?’ ‘ওটা কি ফ্লাইওভার, মোচড় দেওয়া সাপের মতো লাগছে কেন? গাড়িগুলোও তো দৌঁড়াচ্ছে পিঁপড়ার মতো’ যোগ করেন আরেকজন।
আস্তে আস্তে মহাপতঙ্গ উঠে যায় মেঘেদেরও ওপরে! কৌতূহলীদের কাছে এক একটি মেঘখণ্ডকে কখনো সাদা সোনা, কখনো পেঁজাতুলোর মতো মনে হয়। আবার যখন বিশাল মেঘরাশি উড়ে যায়, তখন মনে হয় আকাশের এ সাদাপাহাড় ধসলেই বুঝি জনপদ ভিজে যায়?
আসন নির্ধারিত হলেও মহাপতঙ্গের পেটে থাকা অন্য যাত্রীদের খানিকটা আবদারের চাপে ফেলে কৌতূহলীরা এ জানালা ও জানালা করে পেঁজাতুলোর সঙ্গে মনে মনে কথা বলতে থাকে। কেউ আবার জনপদকেই উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ‘হে মাটি, তুমি কি দেখছো, আমি এখন মেঘের দেশে উড়ছি!’
অবশ্য ক্রুরা প্রথমেই আন্তরিকভাবে বলেছিলেন, আসন কিছু খালি আছে। আপনারা জানালার পাশে গিয়েও বসতে পারেন। এ সুযোগ হাতছাড়া করলো না কেউই।
৫০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ১০ মিনিট বোনাস ভ্রমণের পর যখন নামলাম সাগরকন্যার দেশে তখন ঘোর কাটলো বিস্ময়ের।
আমাদের প্রিয় মহাপতঙ্গের পেট থেকে যাখন নামছি তখন অ্যাটেনডেন্টরা বললেন, রিজেন্টে ভ্রমণের জন্য ধান্যবাদ। আসলে এটা তাদের প্রাপ্যই ছিল। তাই আমরাও তুষ্টির হাসি দিয়ে বললাম, দেখা হবে আবার…
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৪
In Association With Regent Airways