ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

অটল পাহাড়ের বুকে উদ্দাম সাগর

বাংলানিউজ ট্রাভেল টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৪
অটল পাহাড়ের বুকে উদ্দাম সাগর ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হিমছড়ি, কক্সবাজার থেকে: খানিক আগে বিকেলের বারান্দায় হেলেছে সূর্য। শহর থেকে দক্ষিণে ছুটছে আমাদের অটোরিকশা।

দু’পাশে অসংখ্য রঙিন-সাদাকালো হোটেল-রেস্টুরেন্টে ঠাসা। সেসব পেরিয়ে তিন চাকার বাহনটি ঢুকলো অন্য এক সবুজ টানেলে। আবহাওয়াটা একটু গুমোট। চোখ রাঙাচ্ছে মেঘরাজা।

একটু পর আমরা ভুলে গেলাম সবই। পশ্চিম পাশজুড়ে সাগরজলের হুঙ্কার, উত্তরে সবুজ পাহাড়, আর আমরা চলেছি দক্ষিণাভিমুখী। পাহাড়, সাগর, বৃক্ষলতার মাঝের টানেলে আমরা। সে এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক মিলন। চোখ জুড়ানো, মনাবেশী।

গন্তব্য হিমছড়ি, ইনানী বিচ। শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে হিমছড়ি। তবে নামের সঙ্গে সুবিচার নেই। কারণ, পাহাড়ি ছড়া থেকে যে হিমবাহটি নেমে এসেছে সেটি দেখে একটু হতাশ হবেন। তবে যিনি প্রথমবার কোনো ঝরনা দেখছেন তার জন্য হতে পারে অন্যরকম।

হতাশা আর থাকবে না যখন শ’দেড়েক সিঁড়ি ভেঙে তিনশ’ ফিট উপরের পাহাড়চূড়ায় উঠবেন।

পড়ন্ত বিকেল, গোধূলি উপভোগ করার জন্য এর চেয়ে সুন্দর স্থান বাংলাদেশে খুব কমই মিলবে। পাহাড় থেকে পর্যটকদের সাগর দেখার এমন সুযোগও কম। প্রতি মুহূর্তে সাগর গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পাহাড়কোলে। আর পাহাড় বুক চেতিয়ে যেন বলছে, ‘‌আছি আমিও...!’

হিমছড়ির এই উঁচু চূড়ায় ওঠে পেছন দিকটায় দেখা মিলবে সুবজাভ প্রাকৃতিক শাড়ি পরে গা এলিয়ে দেওয়া পাহাড়মেয়েদের। এলিয়ে দেওয়া দেহের মাঝেই চোখে পড়বে সর্পিল বাঁক আর মোহনীয় ঢেউ।

আর সামনের দিকটায়! ক্ষণে ক্ষণে তুমুল গর্জনে সাগরকন্যা আছড়ে পড়তে চাইছে পাহাড়ের বুকে।

কিছুক্ষণ আগেও গল্পে মেতে থাকা আমরা এই অবর্ণনীয় প্রাকৃতিক মোহনায় পড়ে চুপসে গেলাম। সবাই যেন নিজের মতো করে পাহাড়মেয়ের সঙ্গে সাগরকন্যার আজন্মকালের লড়াইয়ের গল্প শুনছিল, বুঝতে চাইছিল জমিয়ে রাখা হাজারো গল্প।

এর মধ্যেই হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটা! প্লাস্টিকের ছাউনিতে আশ্রয় নিলেও সমুদ্রের বুক আর সবুজাভ শাড়ি পরা পাহাড়মেয়ের দিক থেকে চোখ ফিরছিল না কারোরই। এতো উঁচু চূড়ায় উঠতে যে হাপিত্যেশ দেখা দিয়েছিল, প্লাস্টিকের ছাউনিতে কচি ডাব দেখেই তা উবে গেল সবার।

অনেকক্ষণ ধরে পাহাড় আর সাগরকন্যার লড়াইয়ের মীমাংসায় থেকে বিদায় নিল বৃষ্টি। মেঘের যানে চড়ে বৃষ্টি অচিন দেশে হারালেও আমরা নামতে চাইছিলাম না। তবে সন্ধ্যার আগমনী বার্তায় ফের তিনশ’ ফিট নিচে মর্ত্যলোকে নেমে এলাম।

তবে, নেমেই হোটেলমুখী হওয়া গেল না। কেউ একজনের দৃষ্টি আকর্ষণে ছুটে গেলাম সাগরকন্যার একেবারেই বুকে। সূর্য তখন লালিমাটা রেখে রাতের ঘুমে হারিয়ে গেছে। সৈকতের বালিতে চললো খানিক দাপাদাপি, কেউ কেউ চুপিসারে সাগরকন্যা আর শেষ গোধূলীর সঙ্গে প্রেমের আলাপ সেরে নিচ্ছিলো। কয়েকজন এখানেই রাত পারের প্রস্তাব দিতে চললেও ক্ষুধার তাড়নায় এদিনের সাগরপ্রেমের ইতি টানতে হলো!

** শারদ মেঘের দেশে, পাখির ডানায় ভেসে
** গরম গরম ফিশ ফ্রাই
** মহাপতঙ্গের পেটে একঘণ্টা!
** রিজেন্টে ফ্রি কক্সবাজার দর্শন


বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।